মোল্লা মুয়াজ ইসলাম ও জে.এ সেখ, বর্ধমান, আপনজন: দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফর করছেন। সোমবার পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের কনফারেন্স হলে একপ্রশাসনিক সভায় প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। দুপুর নাগাদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে পৌঁছান। বৈঠকে বন্যার পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, পূর্ব বর্ধমানের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করা হয়। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ এবং পুলিশ প্রশাসন একত্রে কাজ করছে।
তিনি অভিযোগ করেন যে, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়া হচ্ছে, যা বাংলাকে সমস্যায় ফেলছে। ঝাড়খন্ডে বৃষ্টি হলেই জল ছেড়ে দেয় বাংলায়। গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান, ফ্লাড কন্ট্রোল বোর্ড, ডিভিসি - তিনটিই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা কোনো কাজ না করার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘর ডুবে যাচ্ছে, কৃষি ক্ষেত্র ডুবে যাচ্ছে।
ডিভিসি (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন)-এর কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গের দুই অফিসার ছিলেন, যাঁরা পদত্যাগ করেছেন, কারণ তাঁদের না জানিয়ে ডিভিসির জল ছাড়া হচ্ছিল।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চায়েত ডিপার্টমেন্টকে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর মাসে যে ১১ লক্ষ মাটির বাড়ির টাকা রাজ্য সরকার ছাড়বে পাকা বাড়ি করার জন্য, অর্ধেক টাকা প্রথম কিস্তিতে, আর অর্ধেক টাকা দ্বিতীয় কিস্তিতে দেওয়া হয়। অর্ধেক কিস্তির টাকা আমরা ডিসেম্বর মাসে ছাড়ব। জল কমে গেলেই পঞ্চায়েত ডিপার্টমেন্ট সার্ভে করে নেবে এই ১১ লক্ষ মানুষের বাড়ি। তা ছাড়াও, মাইনোরিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে ৬৫ হাজার বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে গৃহচ্যুতদের জন্য। সেই সংখ্যাটি যদি ওই লিস্টে থাকে তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই সংখ্যাটা এই লিস্টে যুক্ত হবে। অর্থাৎ যাদের মাটির বাড়ি ভেঙে গেছে ধসে গেছে, অথচ লিস্টে নেই, তাদেরও আমার মনে হয় যে বাড়িগুলো আছে সার্ভে করে দেখুক। কারণ তাদের আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা ৫০ লক্ষ বাড়ি বাংলায় পাকা করে দিয়েছি এই ১৩ বছরে। কিন্তু এখনও মাটির বাড়ি গ্রামাঞ্চলে আছে। এখনও ৫০ লক্ষর মতো বাড়ি বাকি আছে। সেক্ষেত্রে যেসব বাড়িগুলো একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অর্ধেক ধ্বংস হয়ে গেছে সেই বাড়িগুলোর একটা লিস্ট করতে বলা হয়েছে।
ইতিমধ্যে অনেক বাড়ি হয়তো ১১ লক্ষের লিস্টে নেই। যাদের নেই সেটা আমরা চেষ্টা করব আরও কিছু বাড়িয়ে তাদের লিস্টে যতটা সম্ভব দেখে দেওয়ার। যতক্ষণ না হচ্ছে যাদের বাড়ি ভেঙে গেছে তাদের এক একটা বাড়িতে তিনটে করে ত্রিপল দিতে বলা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে তিনি আরো বলেন, বড় বড় বিল্ডিং বানিয়ে, নিজেদের মূর্তি বানিয়ে যে টাকাটা আপনারা খরচ করেন, তার এক চতুর্থাংশ যদি আমরা পাই, তাহলে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান ফ্লাড কন্ট্রোল আমরা ভালো করে করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, বিধায়ক ও সাংসদদের গ্রামীণ রাস্তাগুলো মেরামত করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁদের এলাকা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ অর্থ থেকে রাস্তাগুলো মেরামত সম্ভব। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শস্যের ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাজ্য সরকার বিনামূল্যে শস্য বীমা চালু করেছে । সরকার চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনে নেবে এবং ধানকল মালিকদের এই নির্দেশ মেনে চলতে বলা হয়েছে।
বাংলায় সরকারি প্রচেষ্টায় চাষের ব্যাপারে বিভিন্ন নতুন দিশার কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ড্রাগন ফল, ইলিশ মাছ, স্ট্রবেরি চাষ প্রভৃতির কথা বলেন। তিনি বলেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা শস্য বিমার টাকা পাবেন। বন্যা পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন তার দল সাধারণ মানুষের জন্য ১০ গাড়ি খাবার এবং শুকনো খাদ্য সামগ্রী পাঠিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে প্রতিটি পরিবারকে ৫ কেজি চাল, চিনি, ডাল, আলু দেওয়া হচ্ছে।মুখ্যমন্ত্রী আবারো বলেন বন্যার পরিস্থিতি যাই হোক না কেন রাজ্য সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকবে। বন্যা যাদের ঘর বাড়ি নষ্ট হয়েছে তাদেরকেও বাড়ি তৈরি করে দেয়া হবে। বন্যার পর অনেক ক্ষেত্রে ডায়রিয়া হয় ও বিভিন্ন হসপিটালে অন্যান্য চিকিৎসার দরকার হয় সে বিষয়ে প্রশাসনকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন হসপিটালে সাপে কামড়ালে তার ওষুধ জ্বর সর্দি ডায়রিয়া সহ অতিরিক্ত ওষুধ রাখার জন্য হসপিটাল কে নির্দেশ দিয়েছেন। এই প্রশাসনিক বৈঠকে পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে প্রশাসনের তৎপরতা ছিল তুঙ্গে । তিনি বাংলার প্রতি বঞ্চনাকে না মানার জন্য সকলের কাছে আবেদন জানান। উৎসবের প্রাক্কালে তিনি কামনা করেন, দুর্যোগ কেটে যাক, দুর্ভোগ কেটে যাক, আসুক শান্তির আলো। প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিক, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, প্রদীপ মজুমদার, মলয় ঘটক, সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, স্বপন দেবনাথ, বর্ধমান দুর্গাপুরের সাংসদ কীর্তি আজাদ, বর্ধমান পূর্বের সাংসদ শর্মিলা সরকার, বর্ধমানের জেলাশাসক রাধিকা আইয়ার, জেলা পুলিশ সুপার আমন্দীপ সিংহ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার ছাড়াও পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের বিধায়ক, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct