সঞ্জীব মল্লিক , বাঁকুড়া আপনজন: গৃহবধূ হত্যার দায়ে ৫ বছর কারাদন্ডের পর শনিবার বাঁকুড়া সেশন জজ মনোজ্যোতি ভট্টাচার্য মূল অভিযুক্ত ওই গৃহবধূর স্বামী ধনঞ্জয় দাসকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন। সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা জরিমানা। তা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডর নির্দেশ দিলেন। একই ঘটনায় অভিযুক্ত ধনঞ্জয়ের বাবা, মা, দাদা এবং তার স্ত্রীকে খুনে মদত দেওয়ার অভিযোগে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডর নির্দেশ দিলেন। ঘটনার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার আব্দুস সামাদ আনসারি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মামলার সাক্ষীসাবুদ আদালতে পেশ করেন। সেই সাক্ষীসাবুদ খতিয়ে দেখার পর বিচারক এদিন ওই সাজা ঘোষণা করেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের মে মাসে অনেক সাধ করে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা ভালো ঘর এবং সুপাত্র দেখে বিয়ে দিয়েছিলেন মেয়ের। কিন্তু তখনো কি তিনি জানতেন মেয়ের সাংসারিক জীবনের মেয়াদ মাত্র ৫ মাস! ছোট থেকে আদর যত্ন দিয়ে বড় করে তোলা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার মাত্র ৫ মাসের মাথাতেই তাকে হারাতে হবে চিরতরে! বাঁকুড়ার ওন্দা থানা নিকুঞ্জপুরের বাসিন্দা ধনঞ্জয় দাসের সঙ্গে বিয়ে দেন মেয়ের। ছেলের বাড়ির চাহিদা অনুযায়ী দানসামগ্রীও দেওয়া হয়েছিল। বাবা ভেবেছিলেন মেয়ে একটা সুখী গৃহকোণ পাবে। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর অদৃষ্ট লেখে আরএক। ২০১৮ সালের মে মাসে ধনঞ্জয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় ওই মেয়ের। আর মাত্র ৫ মাস পরেই অক্টোবরে আগুনে পুড়ে মারা যান সেই নববধূ। অভিযোগ, বাপের বাড়ি থেকে আরো অতিরিক্ত টাকা এবং অন্যান্য সামগ্রী আনার জন্য নববধূকে স্বামী ধনঞ্জয় সহ তার বাবা মদন দাস, মা আঙুরবালা, দাদা সঞ্জয় দাস এবং জা শ্রাবন্তী অমানুষিক অত্যাচার চালাতো। ওই গৃহবধূ তার বাপেরবড়িতে সে কথা জানিয়েওছিল। কিন্তু অসহায় বাবা মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে গেছিলেন। তাই মেয়েকেই একটু মানিয়ে চলার পরামর্শ দেন। মেয়ে মানিয়ে চলার চেষ্টা করলেও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা গৃহবধূকে মানিয়ে চলতে পারেনি। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের একদিন ওই গৃহবধূর উপর অত্যাচারের মাত্রা ছাড়ায়। মেয়ের দাদার অভিযোগ, বোনকে তার শ্বশুরবাড়িতে পরিকল্পিতভাবে গায়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার পর তাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেছে স্বামী ধনঞ্জয় সহ বাড়ির অন্য সদস্যরা। সেই মর্মে তিনি বোনের শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেকের নামে বোনকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ দায়ের করেন। তারই ভিত্তিতে পুলিশ খুনের মামলা রজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করে। শনিবার সেই মামলার রায় ঘোষণা হলো। ওই খুনের ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত করেন ওন্দা থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার আব্দুস সামাদ আনসারি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct