নায়ীমুল হক, কলকাতা, আপনজন: "স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন সেটাই যেটা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।"
বিজ্ঞানী ড. এপিজে আবদুল কালাম নয়া প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই স্বপ্ন দেখার কথা বলেছেন। আসলেই স্বপ্নের ডানায় ভর করেই ছোট ছোট কিশোরমতি ছেলে মেয়েরা জীবনে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে শেখে। স্বপ্ন থাকলে তবেই তো সে চ্যালেঞ্জ নেওয়া শেখে। স্বপ্ন দেখা বা জীবনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা প্রকৃতই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমনও হতে পারে যে তার এই লক্ষ্য নির্ধারণ পরে ভুল প্রমাণিত হবে। তবু এটা প্রয়োজন। আমরা শিক্ষক মশাইরা ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের যখন কাজ দিই, সব সময় যে তারা ঠিক পথে এগোয়, তেমনটা নাও হতে পারে। যেমন ধরাই যাক, একটা অংক দেয়া হল। বেশ দেখতে পাচ্ছি একটি ছেলে ভুল পথে এগোচ্ছে। আমরা দেখি কিন্তু অনেক সময় তাকে নিষেধ করি না। কারণ বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর সে যখন তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেনা, তখন সে নিজে থেকেই বুঝবে এই পথ চয়ন তার জন্য সুখকর হয়নি। সে তখন আপনা থেকেই অন্য একটা পথ পছন্দ করে এবং সমাধানের পথ পায়। এর ফলে সে কিন্তু একসঙ্গে অনেকগুলো জ্ঞান অর্জন করতে শেখে, যা তাকে হয়তো অনেকগুলো সঠিক অংক নাও শেখাতে সক্ষম হত।
এবার আসি পরিবারে অন্দরের কথায়, সেখানেও একই ভাবে বাবা-মাকে লক্ষ্য রাখতে হবে সন্তান-সন্ততির বেড়ে ওঠার দিকে, তাদের ভালো ও খারাপ লাগার দিকে, গতের পড়াশোনার বাইরে অন্য কোনো দিকে তার বিশেষ আকর্ষণ আছে কিনা সেদিকে। বড় হয়ে কী হব– এই ভাবনা, ভাই-বোনেরা এক সঙ্গে মিলে করছে কিনা, এ সব দিকে বাবা-মায়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকবে। যদিও তাদের স্বাধীনভাবে বড় হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কিছু চাপিয়ে দেবেন না তাঁরা। নিজস্ব ভাবনা গড়ে তুলতে তাদেরকে পাশে থেকে সাহায্য করা যেতে পারে। এমনকি সে ভাবনা যদি ভুল-ও হয় তাও ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা উচিত। ঠিক সময়ে সংশোধন করে দিলেই চলবে। আসলে জীবনের লক্ষ্য তাকে বিভিন্ন আঙ্গিকে ভাবতে শেখায়, বাস্তবতার হদিস দেয়, জীবনের পথ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা দেয়। এতে আরো সে বুঝতে শেখে বড়রা কত কষ্ট করে 'আমাদের' জন্য বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালন করেন। তখন আর তাকে বলে শেখাতে হয় না। স্বাভাবিকভাবেই বড়দের দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়ে, তাদেরকে সম্মান করতে শেখে।
তাই আর্লি গোল সেটিং বা জীবনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ছোট থেকে ভাবতে শেখানো অভিভাবকদের জন্য সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
এবার আসা যাক, স্কুলে পাঠদানের মাঝেই একজন শিক্ষক-শিক্ষিকা কী করে ছাত্র-ছাত্রীর দক্ষতা নির্ণয় করবেন, যা তার আর্লি গোল সেটিং-এ সাহায্য করবে।
প্রথমত জানতে হবে শিক্ষার্থীর পরিবার কেমন, বুঝতে হবে তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামো। তারপর বুঝতে হবে শিক্ষার্থীর নিজের বুদ্ধিমত্তার বৈচিত্র্য, উৎসাহ, আগ্রহ, তার মনোভাব, প্যাশন কিংবা বিশেষ দিকে দক্ষতা। এছাড়াও আরো কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক দেখতে হবে। তাহল দলগতভাবে কাজ করার ইচ্ছা, নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা, বন্ধুত্ব স্থাপন কতখানি করতে চায়, সহযোগিতার ইচ্ছা, কমিউনিকেশন স্কিল, সমস্যা হলে তা সমাধান করার দক্ষতা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কতখানি, বড়দেরকে শ্রদ্ধা ও ছোটদের স্নেহ করার প্রবণতা। পাঠদানের মাঝে এমনিতেই একজন শিক্ষক-শিক্ষিকা এ সমস্ত গুলি মাথায় রাখেন। শিক্ষার্থীর দক্ষতা নির্ণয়ে এগুলি আরো বেশি কাজে লাগে।
কবিগুরুর কথা দিয়েই শেষ করা যাক এই প্রতিবেদন, 'ছেলে যদি মানুষ করিতে চাই, তবে ছেলেবেলা হইতেই তাহাকে মানুষ করিতে আরম্ভ করিতে হইবে, নতুবা সে ছেলেই থাকিবে, মানুষ হইবে না। শিশুকাল হইতেই, কেবল স্মরণশক্তির উপর সমস্ত ভর না দিয়া, সঙ্গে সঙ্গে যথাপরিমাণে চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির স্বাধীন পরিচালনায় অবসর দিতে হইবে।'
লেখক শিক্ষক, হরিনাভি ডিভিএএস হাই স্কুল
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct