নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর, আপনজন: সরকারি প্রকল্পের কাজ না করে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠল বাম কংগ্রেস পরিচালিত সিপিএম এর প্রধান ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। এনিয়ে বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পঞ্চায়েতের উত্তর রামপুর গ্রামের একাংশরা। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান সামিমা পারভিন ও তাঁর স্বামী মহম্মদ আজহারউদ্দিন। তদন্তের দাবি তুলে বুধবার বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর রামপুর গ্রামে হরিজন পাড়ায় রাঁধা গোবিন্দ মন্দির চত্বরে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের তহবিল থেকে ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মার্ক টু টিউবওয়েল বসানোর কথা। অভিযোগ,পঞ্চায়েত প্রধান টিউবওয়েল না বসিয়ে প্রকল্পের ৫০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে। এই কথা জানতে পেরে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের বিডিও সৌমেন মন্ডলের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয়রা। বিডিও সৌমেন মন্ডল বলেন,অভিযোগ পেয়েছি। অতিসত্বর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় বাসিন্দা পূর্ণ চন্দ্র দাস বলেন, আমরা হরিজন পাড়ায় ৪০ টি পরিবার বসবাস করি। পাড়ায় কোনো সাব মার্সিবল পাম্প নেই। মন্দির চত্বরে একটি মার্ক টু টিউবওয়েল বসানোর দাবি করেছিলাম প্রধানের কাছে। প্রধান এসে পরিদর্শন করে যান। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের তহবিল থেকে টিউবওয়েল শিঘ্রই বসানো হবে বলে আশ্বাস দেন। পরে আমরা জানতে পারি প্রকল্পের কাজ না করে গত ৪ সেপ্টেম্বর ৫০,১২৪ টাকা তুলে নিয়েছে। প্রধানকে বললে কোনো কর্ণপাত করছে না। তাই আমরা বিডিওর কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি। তবে প্রধান সামিমা পারভিন বলেন,মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। প্রকল্পের কাজ হয়েছে। তবে মন্দির থেকে তিনশো মিটার দূরে মুচি পাড়ায় বসানো হয়েছে সেই টিউবওয়েলটি। প্রধানের স্বামী মহম্মদ আজহারউদ্দিন বলেন,পাড়ার লোকেরা মন্দিরের পাশে রাস্তা করতে দেইনি। মন্দির চত্বরে একটি নলকূপ রয়েছে। তবে সেটি অকেজো হয়ে আছে। মন্দির চত্বরে টিউবওয়েল বসানো নিয়ে তাদের মধ্যে আপত্তি ছিল। তাই প্রকল্পটি দূরে সরিয়ে বসানো হয়েছে। রিতিমত জিও ট্যাগিং করে তবে বিল পাস হয়েছে। এখানে বিরোধীরা রাজনৈতিক চক্রান্ত করে আমার বদনাম করার চেষ্টা করছে। আমিব্লক প্রশাসন কে সব বিষয়টি জানিয়েছি।
মানিকচক ব্লকের এনায়েতপুরে রাস্তা-নর্দমা সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়। তাতে দেখা যায়, সেই কাজ না করেই ভুয়ো বিল তৈরি করে টাকা তুলে নিয়েছেন প্রাক্তন প্রধান। এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেত্রী আনজুম সাগিরা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের লিখিত অভিযোগ করেছেন মানিকচকের বিডিওর কাছে। অভিযোগ, নর্দমা সংস্কারের কাজ না করেই প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ভুয়া বিল তুলেছেন প্রাক্তন প্রধান। এনায়েতপুরের মীরাগ্রাম, মোমিনপাড়া, এনায়েতপুর, নোয়াদা, মোহনা এই পাঁচটি সংসদে নর্দমা সংস্কারের কোনও কাজই হয়নি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গত ১৪ অগাস্ট প্রাক্তন প্রধান তাঁর মেয়াদের একেবারে শেষ সময়ে পাঁচ লক্ষ টাকা বিল তুলে নিয়েছেন। সরকারি খাতা অনুযায়ী, গত ২০২১ সালে নর্দমা সংস্কারের কাজ দেখানো হলেও, বিল প্রদান করা হয়েছে চলতি বছরের অগাস্ট মাসে। এমনকী বিল প্রদানের দিন ১৪ অগাস্ট, সেই দিনের ছবি দিয়ে জিও ট্যাগ করা হয়েছে বলে দাবি বিরোধী দলনেত্রীর। আরও জানা গেছে, দু’টি ঢালাই রাস্তা নির্মাণ না করেই আনুমানিক দুই লক্ষ টাকার বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ জমা হওয়ার পর তড়িঘড়ি গত ২০ অক্টোবর নতুন করে ঢালাই রাস্তা নির্মাণ করে অভিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থা। যদিও এই রাস্তা নির্মাণের টাকা গত ১৪ অগাস্ট তুলে নেওয়া হয়েছে।
আনজুম সাগিরা বলেন, ‘কোন কাজ না করেই টাকা তুলেছেন উনি। তাই আমি বিডিওর কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। ’
এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান তপতী মজুমদার বলেন, ‘আমার সময়কালে এই ধরনের কোনও কাজ হয়নি। আমার হাতে এই ধরনের কোনও ভুয়ো বিল পাস হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগকারী অবাইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজখবর নিয়ে দেখি ওই স্কিমের পুরো টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ এখনও শেষ হয়নি। বিডিওকে বিষয়টি জানিয়েছি। ’’
প্রাক্তন প্রধান মনিরা খাতুন বলেন, ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। কাজ হয়েছে, তবে বিল হয়েছে। নিয়ম মেনে কাজ করা হয়েছে। ’
এনিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছেন দক্ষিণ মালদার জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক গৌরচন্দ্র মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘গোটা রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের দুর্নীতি চলছে। মানিকচক ব্লকে দুর্নীতি যখন সামনে এসেছে তখন একটু একটু করে কাজ করছে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। আমরা তদন্ত চাই। ’ জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, ‘কংগ্রেসের কিছু নেই। ভোটে বিজেপি আর সিপিএমের দালালি করে তৃণমূলকে হারানোর চেষ্টা করেছে। যদি কোনও অভিযোগ থাকে, বিডিও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। ’
জেলাশাসক নীতিন সিঙ্গানিয়া জানান, ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct