তানজিমা পারভিন, হরিশ্চন্দ্রপুর, আপনজন: দীর্ঘ ২০ বছর ধরে শিকল বন্দি হয়ে জীবন কাটাচ্ছে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের মালিওর তিওরপাড়া এলাকার মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক সফিকুল আলম (৪০)। পরিবারে চরম আর্থিক অনটন। অর্থাভাবে যুবকের চিকিৎসা করাতে পারছেন না বৃদ্ধ বাবা। কার্যত বাধ্য হয়েই শিকল দিয়ে বাঁধতে হয়েছে যুবক কে। এই কথা জানতে পেরে বুধবার যুবকের বাড়িতে ছুটে যায় রাজ্যের যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান চৌধুরী। চিকিৎসার জন্য পরিবারের হাতে কিছু আর্থিক সাহায্য তুলে দেন। সরকারিভাবে যাতে তার চিকিৎসা হয় তার জন্য ফোনে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। চাঁচল মহকুমা শাসক সৌভিক মুখোপাধ্যায় সরকারিভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
একটি ছোট টিনের ঘরের মধ্যে শিকল বাঁধা অবস্থায় রয়েছে সফিকুল। ঘরের দরজায় বসে অপলক নয়নে তাকিয়ে থাকে পথ চলতি মানুষের দিকে। বন্দি দশা আর কতদিন?আরো কত বছর তাকে এইভাবে থাকতে হবে কোন উত্তর নেই পরিবারের লোকের কাছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,বাবা বুলমাজন বাড়িতে একটা ছোট পানের দোকান চালায়। সেখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনরকমে চলে সংসার। ছেলের চিকিৎসা করার মতো তার সামর্থ্য নেই। তাই বাড়িতে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে ছেলেকে। ২০ বছর ধরে এই ভাবে রয়েছে সে। বাবা বুলমাজন বলেন,আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে মারা গিয়েছে। ছোট ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। আমি বাড়িতে ছোটখাটো একটি পানের দোকান চালায়। এক ছটাক জমি নেই। রাস্তার ধারে খাস জমিতে বসবাস করি। ছেলে জন্মের পর ভালো ছিল। ১৭ বছর বয়সে একদিন মাঠে গোরু চড়াতে গিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। এর পরে চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বহরমপুরে মানসিক হাসপাতালে। ছ’মাসের মতো চিকিৎসাও চলে। কিন্তু টানাটানির সংসারে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে পারিনি। কয়েকবার বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে বিহার থেকে তাকে খুঁজে নিয়ে আসি। তার পর থেকেই শিকলে বেঁধে রেখেছি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct