জিয়াউল হক, হুগলি, আপনজন: অবিরাম নিম্নচাপের বৃষ্টির মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে তাদের পাঞ্চেত ও মাইথন বাঁধ থেকে সাত ঘণ্টার মধ্যে ৩ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়ে দেওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি অঞ্চল ব্যাপক বন্যার ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে।
ডিভিসি থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হুগলির প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হুগলির আরামবাগ ও পুরশুড়া এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ডিভিসি থেকে প্রায় তিন লক্ষ কিউসেকের ওপরে জল ছাড়ার কারণে মুন্ডেশ্বরী নদীর বাঁধ ভেঙে বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে বহু মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বুধবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং পরে পুরশুড়ার প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরশুড়ার ব্রিজের ওপর থেকে নদীর জলস্তর দেখার সময় তিনি বলেন, এই বন্যা “ম্যানমেড”, অর্থাৎ মানুষের দ্বারা সৃষ্ট। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, ডিভিসি পরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত জল ছেড়ে দিয়েছে, যার ফলস্বরূপ এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী খুবই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্র ঝাড়খন্ডকে বাঁচাতে গিয়ে বাংলাকে ডুবিয়েছে। তিনি কেন্দ্রের এই বৈমাতৃসুলভ আচরণের নিন্দা করেন। সেখান থেকে তিনি সামন্ত রোড হয়ে আকরি শ্রীরামপুর গ্রামে যান এবং বন্যাদুর্গত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দুর্দশার কথা শুনে তিনি স্থানীয় জেলাশাসককে ডেকে পাঠান এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বিভিন্ন নির্দেশ দেন। বন্যার্তদের ত্রাণ সরবরাহ, উদ্ধার কাজ এবং ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণের জন্য তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এই বন্যার মতো পরিস্থিতির কারণে ইতিমধ্যেই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় বৃষ্টির জেরে দেওয়াল ধসে একজনের মৃত্যু হয়েছে, হুগলি জেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের। সোমবার মুর্শিদাবাদে বন্যার জলে ভেসে যায় সাত বছরের এক মেয়ে তার মায়ের সঙ্গে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করতে।
রাজ্যের অনেক নদীর জলস্তর বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বিপদসীমা স্পর্শ করেছে। ঘাটাল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো এলাকা ইতিমধ্যেই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। প্রবল বৃষ্টির জেরে বীরভূমের লাভপুরে কুরে নদীর উপর বাঁধ ভেঙে ১৫টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বারকেশ্বর নদীর জলে জেলাগুলিতে বন্যা দেখা দেওয়ায় হুগলির বহু বাসিন্দা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাড়ি ছেড়েছেন। বন্যায় বিস্তীর্ণ ফসল ভেসে গেছে।
দামোদর নদের তীরবর্তী বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি এবং হাওড়া এমন কিছু অঞ্চল বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরী নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে, ফলে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ও আমতায় বন্যা দেখা দিয়েছে। উদয়নারায়ণপুর এলাকায় নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণ শিবির ও উদ্ধার কাজ শুরু করেছে সরকার। প্রশাসন ‘ফ্লাড সেন্টার’ ক্যাম্প শুরু করেছে যেখানে শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য, পানীয় জল এবং ওষুধ সরবরাহ করা হয়। উদ্ধারকাজের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা জেলায় কড়া সতর্কাবস্থায় রয়েছেন। আরামবাগ, হুগলির গোঘাটের মতো এলাকার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। খানাকুলে রূপনারায়ণ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বুধবার সকালে পাঁশকুড়া পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় একটি নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানান, এনডিআরএফের দুটি দল ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারের জন্য রওনা হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct