সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: সোমবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আন্দোলনরত জুনিয়ার ডাক্তারদের বৈঠক প্রায় সদর্থক হয়েছে বলা যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারদের ৯৯ শতাংশ দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। সেগুলির ব্যাপারে মঙ্গলবার বিকালে নির্দেশ জারি করা হবে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক সন্ধ্যে ৬টা ৪৫ এ বৈঠক শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, পুলিম প্রধান রাজীব কুমার, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য প্রমুখ। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে ৪২জন হাজির ছিলেন। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী জুনিয়র ডাক্তারদের পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে সিংহভাগই মুখ্যমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। সেই সব সিদ্ধান্ত এবং মিটিংয়ে যাবতীয় আলোচনার বিষয়বস্তু সম্বলিত কাগজে রাজ্য সরকারের পক্ষে সই করেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ। আর অপরদিকে হাজির থাকা ৪২জন জুনিয়র ডাক্তাররা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয় প্রায় পৌনে বারোটা নাগাদ সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন,উভয় পক্ষই খুশি এতক্ষণ আলোচনা করতে পারলাম বলে। জুুনিয়র ডাক্তাররা অনেক ইস্যু তুলে ধরেছেন। তাদের দাবি মতো পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সরানো হবে মঙ্গলবার বিকালে। যদিও বিনীত গোয়েল আগেই পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। বিনীত নাকি বলেছেন তারও পরিবার পরিজন আছে। এটা মিটিংয়ে বলেছে আমায়। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিই আগামীকাল চারটের পর কলকাতা পুলিশে বদল আনব। নতুন সিপিকে দায়িত্বভার বিনীত দেবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত কোর্ট কেস শেষ না হচ্ছ.। আর কিছু পুলিশে রদবদল হবে। সেটা চিফ সেক্রেটারি জানাবেন। মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে আরও জানান, বিনীত যেখানে কাজ করতে চেয়েছেন সেখানেই দেওয়া হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন সিপি আসবেন ততক্ষণ তিনি দায়িত্ব সামলাবেন। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মতো কলকাতা নর্থের ডিসি কেও সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে সেটা মঙ্গরবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হাসপাতালের সেফ্টি সিকিওরিটি, পরিকাঠামো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। একটি কমিটি হয়েছে। মুখ্যসচিব, হোম সেক্রেটারি, ডিজি, সিপি থাকবেন তাতে। হাসপাতালের সুরক্ষার জন্য বিশেষ করে সিসিটিভি ইত্যাদির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোসণা দেওয়া হয় ওই মিটিংয়ে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, জুনিয়র ডাক্তাররা তিনজন অফিসারকে সরানোর দাবি করেছিলেন। আমরা দুটো মেনেছি। স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার বদল করা হবে। এর চেয়ে বেশি আর কী করতে পারি। ৯৯ শতাংশ দাবি মেনে নিয়েছি বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বলেন, যত ক্ষণ না আদালতে মামলার শুনানি হচ্ছে, তত ক্ষণ এই রদবদল হবে না। পুলিশে আরও কিছু রদবদল হবে। সেটা মুখ্যসচিব মঙ্গলবার বিকেলের পর ৪টের পর জানিয়ে দেবেন নোটিশ দিয়ে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, বৈঠকে পাঁচ দফার স্মারকলিপি দেন চিকিৎসকরা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন এবং আন্দোলনরত পড়ুয়া চিকিৎসকদের বক্তব্য মন্তব্য মন দিয়ে শোনেন। বৈঠক শেষে দীর্ঘক্ষণ ধরে বৈঠকে আলোচিত বিষয়ে কার্যবিবরণী লেখা হয়। সবাই সই রকার পর জুনিয়র ডাক্তাররা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্না মঞ্চের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেখানে গিয়ে তারা সাংবাদিকদের জানান, মুখ্যমন্ত্রী মৌখিক আম্বাস দিয়েছেন্ যতক্ষণ না লিখিত আকারে নির্দেশ দেওয়া হবে তার অাগে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়ে কিছু ভাবা হবে না।
কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার অবশ্য হুঁশিয়ারি দেন, তাদের দাবির মধ্যে ছিল স্বাস্থ্য সচিবের পদত্যাগ। তাই সেই দাবিও সরকারকে মেনে নিতে হবে। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার মুনানি। সেদিকেও তাদের নজর থাকবে বলে তারা জানান।
উল্লেখ্য, সোমবার পঞ্চম বার রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের চিঠি পাঠান। এরপর জুনিয়র চিকিৎসকরা নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসে লাইভ সম্প্রচারণ এবং ভিডিওগ্রাফি দাবি থেকে সরে এসে মিটিং এর মিনিট উভয় পক্ষের মধ্যে হস্তান্তর হবে এই শর্তের রাজি হয়ে তাদের পাঁচ দফা দাবি নিয়ে বিকেল পাঁচটার মধ্যে কালীঘাটে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসার ক্ষেত্রে সহমত পোষণ করেন। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলন স্থলে নীল সাদা রঙের বাস নিয়ে আসা হয়। ওই বাসে তাদেরকে কালীঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় বৈঠকে যোগ দিতে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct