ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সুবিধা অসুবিধা তুলে ধরা, অধিকার আদায় এবং পারস্পারিক ঐক্য রক্ষার্থে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে ‘অল-বেঙ্গল ইমাম-মুয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড চ্যারিটেবল ট্রাস্ট।’ দেশের শান্তি-সম্প্রীতি-সংহতি-ঐক্য রক্ষার্থে সর্বধর্ম সমন্বয়ে সম্প্রীতি সভা, রক্তদান শিবির, বৃক্ষরোপণ, শিক্ষা অর্জনে উৎসাহিত করার পাশাপাশি মাদকবিরোধী পরিবেশ গড়ে তোলা, বাল্যবিবাহ রোধ, সামাজিক ব্যাধি রোধে সচেতনতা শিবির ইত্যাদি সামাজিক কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে ‘অল-বেঙ্গল ইমাম-মুয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে। সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে অকপট মন্তব্য করেছেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক বিশিষ্ট শিক্ষক ও লেখক মাওলানা নিজামুদ্দিন বিশ্বাস। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ‘আপনজন’ সাংবাদিক এম মেহেদী সানি।
‘অল-বেঙ্গল ইমাম-মুয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড চ্যারিটেবল ট্রাস্টে’র লক্ষ এবং উদ্দেশ্য কি?
ইমাম-মুয়াজ্জিনরা সমাজের সবচেয়ে ভালো এবং সম্মানজনক কাজের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু পারিশ্রমিক নাম মাত্র, সেই ইমাম-মুয়াজ্জিন-আলেমদের জীবনটা সুন্দর করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য, তাঁদের হালাল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা, ভাতা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা, তাঁদের পরিবার ও ছেলেমেয়ের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের পরিষেবা দেওয়া, বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়াই আমাদের প্রধান কাজ। পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সাধনের উদ্দেশ্যে আমরা সর্বদা কাজ করে চলেছি।
ইমাম মুয়াজ্জিন ভাতা বৃদ্ধির দাবি কতটা সঙ্গত? ইমাম মুয়াজ্জিনদের সুবিধা নিয়ে সরকারের কাছে আরোও কি কি দাবি রয়েছে..?
সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভাতা বৃদ্ধির আবেদন যথেষ্ট সঙ্গত, আমরা চাই রাজ্য সরকার যত দ্রুত সম্ভব অন্যান্য রাজ্যের মত ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সম্মানজনক ভাতা প্রদান করুন। রাজ্য সরকার তথা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবী, পাঁকা বাড়ি হয়নি এমন ইমাম মুয়াজ্জিনদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা, ওয়াকফ বোর্ড থেকে পরিচয়পত্র দেওয়া, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বৃত্ত নিগমের পক্ষ থেকে থেকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি।
ইমামতির ক্ষেত্রে ইমামদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
আগামীতে ইমাম মুয়াজ্জিনদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা করা হবে ব্লক ভিত্তিক।
নতুন ভাতা এবং রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন পেন্ডিং থাকা সহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। আপনার সংগঠনের পদক্ষেপ কি?
ভাতা নতুন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত অনেক সমস্যা আসে আমাদের কাছে। কোনো কারণে ভাতা বন্ধ হয়ে গেলে সমাধানের জন্য জেলা থেকে কলকাতায় ওয়াকফ বোর্ডে যেতে হয়,যা বয়স্ক ও প্রবীণদের জন্য অসম্ভব। তাছাড়া অনেক বিডিও, পৌরসভা অফিসে বহুদিন ধরে আবেদন পত্র জমা পড়ে থাকার ফলে কাজ না হওয়ার অভিযোগ আসে। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি প্রদান করব। আমাদের দাবি যথাযথ কর্মী নিয়োগ করে সমস্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে, তাহলে ইমামদের হয়রানি কমবে। পাশাপাশি পুরোনো নিয়ম পরিবর্তন করে ২০১২ সালের পরে তৈরি হওয়া মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদেরও ভাতা দেওয়া হোক।
রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঈদের ছুটি বৃদ্ধির দাবি উঠছে, আপনাদের বক্তব্য কি?
ঈদের ছুটি বাড়ানো উচিত এবং ঈদের আগের বা পরের দিন কোনো পরীক্ষা রাখা উচিত নয়।
তৃণমূল আমলে সংখ্যালঘু উন্নয়নের গতি প্রকৃতি নিয়ে আপনারা কতটা সন্তুষ্ট?
সংখ্যালঘু উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমলাদের একাংশের নিষ্ক্রিয়তা ও অনিচ্ছার জন্য যতোটা উন্নয়ন হওয়া উচিত ছিল ততোটা হচ্ছে না। বিশেষভাবে সরকারি চাকরির সংখ্যানুপাতিক হার সেভাবে বাড়েনি। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর থেকে প্রত্যেক ব্লকে আবাসিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হওয়া দরকার।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েদের উন্নয়ন এবং উত্তরণের পথ দেখাতে কি বার্তা দেবেন?
শিক্ষা অর্জন করতে হবে। আদর্শের সাথে জাগতিক শিক্ষা অর্জন করতে হবে। না খেয়েও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে হবে। তবেই সমাজ সংস্কার হবে এবং জাতির উন্নয়ন সাধন সম্ভব।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য স্থাপন এবং অন্যান্য ধর্মের সঙ্গে সমন্বয় রেখে শান্তি সম্প্রীতি সমৃদ্ধির জন্য কি বার্তা দেবেন?
মুসলিম সমাজের ঐক্য,সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। বাঁচতে গেলে এক হতে হবে, মিল্লি ঐক্য খুবই প্রয়োজন। অন্যদিকে দেশের সব হিন্দু সাম্প্রদায়িক নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ধর্মনিরপেক্ষ ও শান্তি প্রিয়। দাঙ্গা, অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণা রোধ করতে গেলে শান্তিপ্রিয় মানুষদের নিয়ে সম্প্রীতির প্রচার একান্ত প্রয়োজন। শান্তি-সম্প্রীতি-সংহতি-ঐক্য রক্ষার লক্ষ্যে আমরা পুরোহিত সংগঠনের সঙ্গে একযোগে কাজ করে থাকি।
ওয়াকফ সংশোধনী আইন এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কতটা চিন্তিত?
ওয়াকফ সংশোধনী আইন বাতিল করতে হবে। এটা সরাসরি ধর্মের উপর আঘাত। অভিন্ন দেওয়ানি বিধিও মুসলিম পার্সোনাল ল’কে শেষ করে দেওয়ার একটি চক্রান্ত। যা মুসলমানদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
দেশজুড়ে মব লিঞ্চিং, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে কি বলবেন?
ক্রমবর্ধমান মবলিঞ্চিং ও সাম্প্রদায়িক হিংসা চূড়ান্ত অন্যায় ও অমানবিক, যা দেশের ঐতিহ্য নষ্ট করছে, আক্রান্ত হচ্ছেন মুসলিমরা। সরকারকে আইন এনে অপরাধ রোধ করতে হবে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।