সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: নাটকীয় ঘটনার দিন হলেও শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সঙ্গে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের অচলাবস্থা অব্যাহত ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাসভবনে যাওয়া চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দলকে শেষ পর্যন্ত বৈঠক না করেই ফিরে যেতে হয়েছে। উভয় পক্ষই দাবি ও পাল্টা দাবি করেছিল এবং একে অপরের কাছে অনুরোধ করেছিল।
কালীঘাটে দীর্ঘ টানাপোড়েন চলার পর জুনিয়র চিকিৎসকদের জেরে শনিবার সন্ধ্যার বৈঠক ভেস্তে গেল। শনিবার সন্ধ্যে সাড়ে ছটা নাগাদ কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে আন্দোলনরত পড়ুয়া চিকিৎসকদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক শুরু করা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। বৈঠকে যোগ দিতে উপস্থিত হন রাজ্যের মুখ্য সচিব, সরাষ্ট্র সচিব, ডিজি এবং রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কালীঘাটে বৈঠক শুরু হওয়ার সময় আন্দোলনকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বৈঠকের লাইভ সম্প্রচার করতে হবে বলে নতুন করে দাবি করতে শুরু করেন। ফলে বৈঠক শুরু হতে কিছুটা বাধা প্রাপ্ত হয়।। জুনিয়র চিকিৎসকরা সকলে বৈঠকে যোগ দেননি। কারণ তারা সঙ্গে করে দুজন ভিডিওগ্রাফারকে নিয়ে এসেছিলেন। যদি লাইভ সম্প্রচার না হয় তাহলে ভিডিওগ্রেফিকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিতে হবে। এই নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয় নতুন করে। বৈঠক শুরুর আগে থমকে যায়। শনিবার দুপুরে আরজি কর কাণ্ডে আন্দোলনরত পড়ুয়া চিকিৎসকরা ই - মেল করে যেকোনো সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যে কোন স্থানে বৈঠকে বসার ইচ্ছে প্রকাশ করে। এই মেল পাঠানোর ৫২ মিনিটের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য স্থান ও সময় নির্ধারণ করে রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ পাল্টা ই- মেইল করেন পড়ুয়া চিকিৎসকদের। এদিকে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা মোট ৩০ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে বৈঠক করতে চান বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তারা সেই মতো কালীঘাটে হাজিরও হন।
কালীঘাটে হাজির হওয়া জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের সকলকে ভিতরে এসে বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করব। যেহেতু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তাই আমরা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের অনুমতি দিতে পারি না। আমি বৈঠকের ভিডিও রেকর্ড করব এবং সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি সাপেক্ষেই আপনাকে একটি অনুলিপি সরবরাহ করব। মমতা তাঁর দরজায় দাঁড়িয়ে পড়ুয়াদের ভিতরে আসার এবং বৃষ্টিতে ভিজতে না নেওয়ার আবেদন জানান।
মমতা আরও বলেন. আজকে তোমরা বলেছিলে যে তোমরা মিটিং চাও, তাই আমি অপেক্ষা করছি। তোমরা আমাকে এভাবে অপমান করছো কেন? দয়া করে আমাকে এভাবে অপমান করবে না। এর আগে তিনবার আমি অপেক্ষা করেছি কিন্তু তোমরা আসোনি। আমরা সভার কার্যবিবরণী রাখব, আমি স্বাক্ষর করব। স্বচ্ছতা থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রীর হাত জোড় করে অনুরোধ রাখলেন না আন্দোলনরত পড়ুয়া চিকিৎসকরা। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক না করলেও জুনিয়র চিকিৎসকদের তার বাড়িতে এসে চা পান করার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু সেই আমন্ত্রণেও শেষ অব্দি সাড়া দেননি আন্দোলনরত পড়ুয়া চিকিৎসকরা। তবে মিটিংয়ের সরাসারি সম্প্রচার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি বলেন, তোমাদের ভিডিওগ্রাফি এখনই আমি দিতে পারছি না। মিটিং এর সব মিনিট নোট হবে এবং তা দেওয়া হবে। যদি বৈঠকে আসতে না চাও অন্তত বৃষ্টিতে ভিজো না বাড়ির দরজায় এসেছ এক কাপ চা খেয়ে যাও। যারা ভিজে গেছ তাদের জামাকাপড় দিচ্ছি তারা বদলে নাও। কেউ বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়েও না বারবার এই অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। অচলাবস্থা চলার পর রাত ৯টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বেরিয়ে যান মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী এবং রাজ্যের জুনিয়র স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার পর বিক্ষোভরত চিকিৎসকরা জানান, তারা লাইভ রেকর্ডিং এবং ভিডিও রেকর্ডিং এড়িয়ে চলাসহ সরকারের সব দাবি মেনে নিয়েছিলেন। তাদের দাবি তারা যখন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে এই বিষয়টি জানান তখন তিনি তাদেরকে বলেন, তিন ঘন্টা ধরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আর বৈঠক হওয়া সম্ভব নয়।
তারপর আন্দোলনরত চিকিৎসকরা জানানা, তারা অবশেষে রাজি হলেও, তাদের আবেদন রাখা হয়নি। তাই তারা ফের অবস্থান ধর্মঘটে ফিরে যাচ্ছেন এবং আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।
উল্লেখ্য, শনিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে হাজির হয়েছিলেন সল্টলেকে জুনিয়ার চিকিৎসকদের অবস্থান বিক্ষোভ স্থলে। সেখানে গিয়ে তিনি নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী নয় একজন দিদি হিসেবে সম্বোধন করে বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা করে সমাধান সূত্র বের করে এই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়ে চলে যান। এর কিছু পরেই জুনিয়র চিকিৎসকরা বৈঠকে বসেন এবং তারা জানান তারা মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে বৈঠকে বসার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct