এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: কলকাতার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ১৫ জন শিক্ষার্থীকে হোস্টেল এবং কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ‘সাসপেন্ড’ করার অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। আরজি কর কাণ্ডের আবহে আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদকে ঢাল করে সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজের জুনিয়র এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবস্থার নেওয়ার অভিযোগ সামনে আসছে। জানা গিয়েছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিন সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজের দুর্নীতি, থ্রেট কালচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে তিনজন অধ্যাপক চিকিৎসকের পদত্যাগের দাবিতে মেডিকেল কাউন্সিলের বৈঠক চলছিল অধ্যক্ষের ঘরে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রেসিডেন্সিয়াল ডাক্তার এবং পিজিটি’রা। জুনিয়র এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ওই বৈঠকে কিছু বহিরাগতরাও ছিল। শিক্ষক দিবস পালনের জন্য সেই সময় কলেজরই কিছু ইন্টার্ন সিনিয়রদের কথামতো অন্যান্য জুনিয়র ব্যাচের ছাত্ররা ফুল, মিষ্টি, গিফট নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন। যদিও অধ্যক্ষের ঘরে থাকা রেসিডেন্সিয়াল ডাক্তার এবং পিজিটি’রা জুনিয়ার শিক্ষার্থীদের ঢুকতে বাধা দেন। অভিযোগ ওঠে জুনিয়ররা তাদেরকে মারার জন্য জড়ো হয়েছে। জুনিয়র এমবিবিএস শিক্ষার্থীরা এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে জানান, তারা শিক্ষক দিবস পালন করতে এসেছেন। পরিস্থিতি জটিল হলে এই ঘটনায় দুপক্ষের মধ্যে স্লোগানিং শুরু হয়। এ সময় হই হট্টগোলের মাঝে এক জুনিয়র এমবিবিএস ছাত্রের হাত লেগে অধ্যক্ষের ঘরের দরজার একটি কাচ ভেঙে যায়। জুনিয়র এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই কাচ ভাঙাকে ব্যবহার করে চেস্ট মেডিসিনের পিজিটি মনোজিৎ মুখার্জী স্থানীয় কামারহাটি থানায় ১৫ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন, যেখানে ভাঙচুর এবং খুনের চেষ্টার মতো অভিযোগও আনা হয়েছে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ১৫ জনের মধ্যে বেশিরভাগই ‘সংখ্যালঘু, দলিত এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা অভিযোগ জানান, ওই ঘটনা নিয়ে কোনও তদন্ত ছাড়াই ঘটনার পর দিন অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর কলেজ অধ্যক্ষের তরফে নির্দেশিকা জারি করে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে হোস্টেল থেকে ‘সাসপেন্ড’ করা হয়। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর পুনরায় অধ্যক্ষের তরফে নির্দেশিকা জারি করে কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. পার্থ প্রতিম প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘আপনজন’কে বলেন, “সাসপেন্ড নয় ‘লিভ দি হোস্টেল’, ‘লিভ দি ক্যাম্পাস’-এর কথা বলা হয়েছে। কারণ, কয়েকজনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ইনকোয়ারি কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। অভিযোগ মিথ্যা হলে ছাত্ররা ফিরে আসবে। আমরা ছাত্রদের বিরুদ্ধে নয়। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাই এই পদক্ষেপ। আর আমরা কোনও রকম সংখ্যালঘু, দলিত, আদিবাসী দেখি না, আমাদের চোখে সকলেই ডাক্তারি পড়ুয়া।’
‘সাসপেন্ড’ হওয়া শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ‘শিক্ষক দিবসের দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না সৌমিত্র প্রামানিক, সৌরভ দোলাই এবং আদিল নওয়াজরা। এছাড়াও ওইদিন হই হট্টগোলের মধ্যে একেবারে পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা আনসারুল হক , কাশিফ কাইজার, মোস্তাফিজুর রহমান সায়ন্তন মণ্ডল, প্রীতম বৈরাগী, সৌরভ চৌধুরী, মরিসন মান্ডিদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’ তালিকায় আছেন সৌরভ ঘোষ, অনিকেত দাস, সুদীপ সামন্ত, নিলিমেশ মজুমদার, শুভ্র পালরা। এই ঘটনায় সংখ্যালঘু দলিত আদিবাসী ছাত্ররা এসসি, এসটি কমিশন ও সংখ্যালঘু কমিশনে ইমেল মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও এখনও কোনও উত্তর পাননি তারা, বরং ‘সাসপেন্ড’ অব্যাহত অাছে। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ‘সাসপেন্ড’ হওয়া ১৫ জন শিক্ষার্থীকে কলেজ ইনকোয়ারি কমিটি ডেকেছে বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। যদিও কোনও রকম তদন্ত ছাড়াই কেন সাসপেন্ড তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আরজি কর কাণ্ডকে ঢাল করে প্রতিবাদী মুখগুলোকে বেছে বেছে কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে কিনা তা নিয়েও জুনিয়র শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন। পড়াশোনা, ক্লাস নিয়েও চিন্তিত অভিযুক্ত পড়ুয়ারা। অন্যদিকে সম্প্রতি কলেজের জুনিয়র এমবিবিএস ছাত্র আনসারুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান, মরিসন মান্ডিদের নাম এবং ছবি ব্যবহার করে নর্থ বেঙ্গল লবির বীরুপাক্ষের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। যদিও এটি ফেক বলে দাবি করে, এর মধ্যে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আনসারুল হকরা। তারা জানান, এক সময় তারাই জোট বেঁধে হোস্টেল সমস্যা, ইফতার মজলিশ সহ সমস্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য শেষমেশ সাগর দত্ত মেডিকেলে নর্থ বেঙ্গল লবির ক্ষমতাশালী কলেজ সিন্ডিকেটের মূল পাণ্ডা বীরুপাক্ষ বিশ্বাসকে পুলিশ ডেকে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। যারা বীরুপাক্ষকে হোস্টেল থেকে বের করে দিয়েছেন তারাই কি করে বীরুপাক্ষের সঙ্গী হয়, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ‘সাসপেন্ড’ হওয়া ডাক্তারি পড়ুয়ারা। এই অপচেষ্টা ও ফেক নিউজের বিরুদ্ধে লালবাজার এবং ব্যারাকপুর সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন দলিত, আদিবাসী এবং মুসলিম ছাত্ররা। এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান ‘আপনজন’কে জানান, ‘সোশ্যাল মিডিয়াতে কি হচ্ছে সেটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct