আপনজন ডেস্ক: আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যার বিষয় নিয়ে এখন রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ। সেই লগ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দ্বিতীয় দফার আলোচনার আমন্ত্রণ জুনিয়র ডাক্তারা প্রত্যাখ্যান করায় বুধবার স্বাস্থ্য ভবনে উত্তেজনা চরমে ওঠে। একদিকে জুনিয়র ডাক্তদারদের চার দফা শর্ত ও অন্যদিকে শর্ত ব্যতিরেকে বৈঠকের আয়োজন নিয়ে সরগরম সরকার ও জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ।
বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এ বিষয়ে বলেন, ‘শর্ত দিয়ে আলোচনা হতে পারে না। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি, তাই কোনও আলোচনাও হতে পারেনি। আমরা আশা করেছিলাম তারা আসবেন। আমি আশা করি তারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা এবং আমাদের আবেদন মেনে চলবেন ও তাদের কাজে পুনরায় যোগ দেবেন। কিন্তু তাদের জবাবে আমরা মর্মাহত।’
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব কুমার বলেন, আমরা আমাদের জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপদ এবং সুরক্ষিত পরিবেশ সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চাই তারা কাজে ফিরে আসুক। তারা একটা পরিবর্তন দেখতে পাবে। তাদের ভুল পথে যাওয়া উচিত নয়। আমাদের উদ্দেশ্য একই। তৃণমূলের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জুনিয়র ডাক্তারদের মনে করিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলা উচিত। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে আমরা ই-মেইল করি। কিন্তু তারা কথা বলতে চাননি। উত্তর দেন ভোর পৌনে তিনটেয়। এটা কি ঠিক? এগুলো কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?’
এ বিষয়ে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের প্রতিবাদী এক চিকিৎসক বলেন, আমরা মুখ্যসচিবের নির্দেশ পেয়েছি। আমরা আমাদের মূল দাবির প্রতি সত্য থাকি এবং আলোচনাটি আমাদের শর্তাবলি অনুসারে হওয়া উচিত। জুনিয়র চিকিৎসকদের ইমেল নিয়ে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী অপেক্ষা করেছেন। কেউ আসলেন না। তিনি খোলা মনে আলোচনার জন্য বসেছিলেন। পরের দিন ভোর তিনটে ৪৫মিনিটে সিএমও-তে ইমেল আসে। এটা কি স্বাভাবিক ? এর পিছনে রাজনীতি লুকিয়ে রয়েছে এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট। পরে ফের আমরা ইমেলে জানিয়েছিলাম আলোচনার জন্য। পরে ফের একাধিক শর্ত দিয়ে ইমেল এল। তিনি আরও বলেন, জুনিয়র ডাক্তারদের বলব, রাজনীতির প্ররোচনায় কোনও পা দেবেন না। আমরা স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, শর্ত দিয়ে কোনও কিছু হবে না। শর্ত থেকে সরে এসে আপনাদের কাজে ফিরে যান।
উল্লেখ্য, বুধবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সন্ধ্যা ৬টায় চলমান অচলাবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের আমন্ত্রণ জানায়। চিকিৎসকদের পাঠানো ই-মেলে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানান, আশা করা যায় যে শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আপনি মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মেনে অবিলম্বে কাজ শুরু করবেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আপনার কাছে আবেদন করছি যে আপনি কাজে যোগ দিন এবং সাধারণ মানুষের যথাযথ চিকিৎসা ও যত্ন নিন।
জুনিয়র ডাক্তারদের বিতর্কের প্রধান বিষয় ছিল প্রধান স্বাস্থ্য সচিব এন এস নিগমের কাছ থেকে আলোচনার জন্য ইমেলের আমন্ত্রণ, যার পদত্যাগ জুনিয়র ডাক্তাররা দাবি করেছেন। তাদেরকে ইমেইলে বলা হয়েছে, ‘আবারও, আরেকটি সুযোগ হিসাবে, আমরা আপনার প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি - বিশেষত ১২-১৫জন সহকর্মী - আজ সন্ধ্যা ৬টায় নবান্নে আমাদের সাথে আলোচনার জন্য যোগ দেওয়ার জন্য।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে এই বৈঠক হবে কি না, তা চিঠিতে স্পষ্ট করা হয়নি বলে অভিযোগ জুনিয়র ডাক্তারদের। সেই সঙ্গে জুনিয়ার ডাক্তাররা নবান্নে বৈঠকে বসার ব্যাপারে বেশ কয়েকটা শর্ত আরোপ করেন। সেগুলি হল: নবান্নের বৈঠকে থাকবে ৩০ জন প্রতিনিধি, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বৈঠকে লাইভ টেলিকাস্ট করতে হবে, আলোচনা হবে তিন স্বাস্থ্যকর্তার পদত্যাগ-সহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে, বৈঠকে থাকতে হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রভৃতি।এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই বিক্ষোভ মঙ্গলবার তীব্র আকার ধারণ করে যখন চিকিৎসকরা রাজ্য সরকারের কাছে তাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরে স্বাস্থ্য ভবন অভিমুখে পদযাত্রা করেন। সুপ্রিম কোর্টের বিকেল ৫টার সময়সীমা পেরিয়ে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত রাখেন। কারণ তারা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পিছু হটতে অস্বীকার করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct