আপনজন ডেস্ক: ‘নিট কাউন্সেলিংয়ে নিয়ম ভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ উঠল স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে ‘আপনজন’ পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয় গত রবিবার। সেই খবরের সূত্র ধরে সমাজবিদ জিম নওয়াজ-এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বুধবার উপস্থিত হয় ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টের সল্টলেকের অফিসে। প্রতিনিধি দলটিতে ছিলেন ডা. ফারুল সরকার, ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আওয়াল উর রহমান, আইনজীবী পারভেজ আলম, অধ্যাপক মানাজাত আলী বিশ্বাস, জাহিদ হাসান, মেডিক্যাল কাউন্সেলিংয়ে বঞ্চিত প্রার্থী সাহিনুর সেখ সহ অন্যরা।
অফিসে সেসময় উপস্থিত ছিলেন না ডিপার্টমেন্টের সচিব। ডিপার্টমেন্টের জয়েন্ট কমিশনার ফর রিজার্ভেশন অ্যান্ড অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি অভিজিৎ মুখার্জি-র সাথে এবিষয়ে প্রতিনিধি দলটির দীর্ঘ আলোচনা হয়। তারা অভিজিৎ মুখার্জিকে তথ্যপ্রমাণ দেখান এবং এক পর্যায়ে অভিজিৎবাবু মেনে নিতে বাধ্য হন যে, এবছরের কাউন্সেলিংয়ের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের তৈরি গাইডলাইন ত্রুটিপূর্ণ বলে প্রতিনিধি দলটির দাবি যুক্তিযুক্ত। সমস্যা সমাধানে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেন। এবারের নিট পরীক্ষায় ৬৬০ স্কোর করেও বঞ্চিত সাহিনুর সেখ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের পরপরেই ডিপার্টমেন্টের তরফ থেকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরের ডিএমই-কে ইমেইল মারফত চিঠি পাঠানো হয়।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হল, ২০২৩ সালে নিট-এর কাউন্সেলিং-এ যে নিয়ম নীতি ছিল ২০২৪ সালে তারা তার পরিবর্তন এনেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন মেডিক্যালের কাউন্সেলিং-এর সময় সংরক্ষণ ক্যাটেগরি পরিবর্তন না করার ও জমা না নেওয়ার নিয়ম জারি করেছে। যদিও ২০২৩ সালে এই নিয়ম ছিল না। ২০২৩ সালে কাউন্সেলিংয়ের সময় সংরক্ষণ ক্যাটেগরি পরিবর্তন করে আবেদন জমা করার অপশন ছিল এবং তার ভিত্তিতেই মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। এই নিয়ম পরিবর্তন করে স্বাস্থ্য দফতর একদিকে যেমন ২০২৩ সালের ২৬শে জুলাই বিসিডব্লিউ-এর প্রকাশিত নির্দেশ অমান্য করেছে অন্যদিকে তেমনি এবছরে প্রকাশিত এনটিএ অর্থাৎ ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির নির্দেশও অমান্য করেছে বলে অভিযোগ। উল্লেখ্য, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে, যারা রাজ্য সরকারের মান্যতাপ্রাপ্ত ওবিসি কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের মান্যতাপ্রাপ্ত নয় তাদের ২০২৩ সালের ২৬শে জুলাই রাজ্যের ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টের এর পক্ষ থেকে ইডব্লিউএস-এর সার্টিফিকেট দেওয়ার নোটিশ প্রকাশিত হয়। ওই নোটিফিকেশনে (1352-BCW/ MR-52/2019 Date: 26.07.2023) বলা হয়, যেসমস্ত রাজ্যের ওবিসি তালিকাভুক্তরা কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয় তাদের ইডব্লিউএস সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে। আর আবেদনকারীরা চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ইডব্লিউএস সংরক্ষণের সুবিধা পাবে। কিন্তু রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বর্তমান গাইডলাইনের পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রকাশিত ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টের এই নোটিফিকেশন গুরুত্বহীন হয়ে গেল।
এবিষয়ে প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সমাজবিদ জিম নওয়াজ বলেন, এবারের কাউন্সেলিং-এ স্বাস্থ্য দফতর যেভাবে গাইডলাইন পরিবর্তন করেছে তা আইনের ভাষায় ব্যাড ইন ল। আমরা চাই, স্বাস্থ্য দফতর তাদের ভুল শুধরে নিয়ে আবার নতুন করে কাউন্সেলিং শুরু করুক। তা নাহলে আমাদের সামনে রাস্তার আন্দোলন এবং আইনের পথ দুটোই খোলা আছে।
প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ডা. ফারুল সরকার বলেন, স্বাস্থ্য দফত যার করেছে তা পরিষ্কার অন্যায়। এই অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টে এসে আমরা কিছুটা আশ্বস্ত হলেও পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারিনি, আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct