গত দু’দশক ধরে ভারতের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টে প্রাকটিস করছেন ফারাক্কার ভূমিপুত্র মোতাহার হোসেন। বর্তমানে সস্ত্রীক আইনজীবী পেশাতেই দেওয়ানি এবং ফৌজদারি আইন সহ সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিতদের ইনসাফ পাইয়ে দিতে লড়াই করে চলেছেন। ব্যক্তিগত জীবনের হার না মানার গল্প থেকে কর্মজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ওয়াকফ সংশোধনী আইন, মুসলিম পার্সোনাল ল, এনআরসি, সিএএ, ইউসিসি নিয়ে অকপট মন্তব্য করেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ‘আপনজন’ সাংবাদিক এম মেহেদী সানি।
আপনার হার না মানা জীবনের সাফল্যে কাহিনীটা কেমন ছিল ?
মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কায় আমার জন্ম, পিতার পেশা ছিল শিক্ষকতা। ছোট থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল নিজেকে মেলে ধরবার। সেই স্বপ্ন আমাকে বারাণসীর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যায়, যেখান থেকে আমি আমার এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করি এবং দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টে আইনী অনুশীলন শুরু করি। উল্লেখ্য ২০০৮ সালে আইনজীবী শরিফা চৌধুরীর সাথে আমার বিয়ে হয়। এরপর আমরা আইনী অনুশীলনের ক্ষেত্রে একসঙ্গে সংগ্রাম শুরু করি। শরিফা দিল্লির স্বনামধন্য আইন সংস্থাগুলিতে সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট হিসাবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে।
বর্তমানে আইনী অনুশীলনের ক্ষেত্রে আপনার সাফল্য নিয়ে যদি বলেন?
আমি দু’দশক আগে সুপ্রিম কোর্টে আমার আইনি অনুশীলন শুরু করেছি। যেখানে আমার অনুশীলনের মূল ক্ষেত্রগুলি হল দেওয়ানি এবং ফৌজদারি আইন সহ সাংবিধানিক আইন। আমি নিট, এসএসসি মামলায়ও লড়েছি। আমার হয়ে এওআর ফাইল করেন তেজস্বী কুমার প্রধান। আমি ‘আরগুয়িং কাউন্সেল।’
ওয়াকফ সংশোধনী বিল-২০২৪ সমর্থন করছেন না সংখ্যালঘুরা। আপনার মতামত কি?
ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪-এ ৪৪টি সংশোধনী রয়েছে, যেগুলি ওয়াকফ বোর্ডগুলির কর্তৃত্ব রোধ করার প্রস্তাব, বিল অনুযায়ী বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার। যেখানে অমুসলিমদেরও বোর্ডের সদস্য হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ওয়াকফ সংশোধনী বিল ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘন করবে বলে আমার মনে হয়। এই আইন অনুযায়ী ধারা ৩-এ একটি সংশোধনী যোগ করার প্রস্তাব আনা হয়েছে যেখানে “এই আইন শুরু হওয়ার আগে বা পরে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে চিহ্নিত বা ঘোষিত কোনো সরকারি সম্পত্তি ওয়াকফ সম্পত্তি বলে গণ্য হবে না।”
এনআরসি, সিএএ, ইউসিসি আইন গুলি সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে কতটা সমস্যার ?
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউ. সি. সি.) মুসলিম পার্সোনাল ল-এর জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয় কারণ, এটি ধর্মীয় আইনের অধিকারকে প্রভাবিত করবে। ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ মুসলিমদের সাংস্কৃতিক পরিচয় বলে মনে করা হত। কিন্তু অভিন্ন দেওয়ানি বিধির (ইউ. সি. সি.) মাধ্যমে প্রত্যেক ভারতীয়ের উপর হিন্দু মূল্যবোধ আরোপ করা হবে বলে আমার মনে হয়। পাশাপাশি এনআরসি, সিএএ দেশের কোটি কোটি মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের কারণ হতে পারে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার অভিযোগ এনে কোটি কোটি মানুষকে অ-নাগরিক হিসাবে ঘোষণা করা সমস্ত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং ভোটের অধিকার ছাড়াই তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হতে পারে।
দেওয়ানি এবং ফৌজদারি আইন সহ সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত সংখ্যালঘুরা কিভাবে দ্রুত বিচার পাবে ?
আমার মনে হয় এসসি/এসটি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইন, ১৯৮৯-এর আদলে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তির জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ইনসাফ পাওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ এবং রাজনীতিবিদদের জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা স্থাপন করা দরকার। তাহলেই দ্রুত বিচার পাওয়া সম্ভব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct