আপনজন ডেস্ক: ২০২৪-এ সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-এর রেজাল্ট অনুসারে ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সেলিং কমিটি ইতিমধ্যে প্রথম রাউন্ড কাউন্সেলিং-এ আবেদনকারীদের পছন্দমতো মেডিক্যাল কলেজ বাছাইয়ের কাজ শেষ করেছে। কিন্তু এবারের কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া নিয়ে ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সেলিং কমিটির নিয়ন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে সরকারি নিয়ম ভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আর তার ফলে ওবিসি তালিকাভুক্ত ছাত্রছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হল, ২০২৩ সালে নিট-এর কাউন্সেলিং-এ যে নিয়ম নীতি ছিল ২০২৪ সালে তারা তার পরিবর্তন এনেছে। অজ্ঞাত কারণে এই পরিবর্তন সেই সময় এনেছে যখন কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে ২০১১ সাল ও পরবর্তী সময়ের ওবিসি শংসাপত্র বাতিল ঘোষণা করেছে। সেই সঙ্কটঘন সময়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন মেডিক্যালের কাউন্সেলিং-এর সময় সংরক্ষণ ক্যাটাগরি পরিবর্তন না করার ও জমা না নেওয়ার নিয়ম জারি করেছে। যদিও ২০২৩ সালে এই নিয়ম ছিল না। ২০২৩ সালে কাউন্সেলিং এর সময় সংরক্ষণ ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে আবেদন জমা করার অপশন ছিল এবং তার ভিত্তিতেই মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল।
এই নিয়ম পরিবর্তন করে স্বাস্থ্য দফতর একদিকে যেমন ২০২৩ সালের ২৬শে জুলাই বিসিডব্লিউ এর প্রকাশিত নির্দেশ অমান্য করেছে, অন্যদিকে তেমনি এবছরে প্রকাশিত এনটিএ অর্থাৎ ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির নির্দেশও অমান্য করেছে বলে অভিযোগ। উল্লেখ্য, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে, যারা রাজ্য সরকারের মান্যতাপ্রাপ্ত ওবিসি কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের মান্যতাপ্রাপ্ত নয় তাদের ২০২৩ সালের ২৬শে জুলাই রাজ্যের ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টের এর পক্ষ থেকে ইডব্লিউএস-এর সার্টিফিকেট দেওয়ার নোটিশ প্রকাশিত হয়। ওই নোটিফিকেশনে (1352-BCW/ MR-52/2019 Date: 26.07.2023) বলা হয়, যেসমস্ত রাজ্যের ওবিসি তালিকাভুক্তরা কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয় তাদের ইডব্লিউএস সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে। আর আবেদনকারীরা চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ইডব্লিউএস সংরক্ষণের সুবিধা পাবে। কিন্তু রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বর্তমান গাইডলাইনের পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রকাশিত ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টের এই নোটিফিকেশন গুরুত্বহীন হয়ে গেল।
প্রশ্ন উঠছে, ঠিক কোন উদ্দেশ্যে হঠাৎ করে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর কাউন্সিলিং এর নিয়ম পাল্টে ফেললো? অথচ হাইকোর্টের রায়ের পরে রাজ্যে ওবিসি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে সেই জটিলতার কিছুটা সুরাহা করতে এবছরই বরং কাউন্সিলিং-এর সময় সংরক্ষণ ক্যাটাগরি জমা বা পরিবর্তন করার প্রয়োজন বেশি ছিল। কারণ হাইকোর্টের নির্দেশে অনেকেই ওবিসি ক্যাটাগরি থেকে বাদ পড়েছেন। সেক্ষেত্রে এই পরিবর্তিত নিয়মে বঞ্চিতদের জন্য সুবিধা না করে তাদের চরম অসুবিধায় ফেলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট সমাজবিদ জিম নওয়াজ অভিযোগ করেন, নিট-এ কেন্দ্রীয় সরকারের কোটায় ডাক্তারিতে ভর্তি হতে রাজ্যের যে সমস্ত ওবিসি কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত নয় তাদের অনেকেই ইডব্লিউএস সংরক্ষণের আওতায় আবেদন করেছিলেন। কেন্দ্রীয় কোটায় সুযোগ না পেয়ে তারা রাজ্যের কাউন্সেলিং-এ অংশ নিলে খুব সমস্যায় পড়ছেন। কেন্দ্রের কোটায় কাউন্সেলিং-এ তারা নিয়ম মেনে ইডব্লিউএস সংরক্ষিত আসনের জন্য অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু রাজ্যের কোটায় কাউন্সেলিং-এ অংশগ্রহণের সময় তাদের ইডব্লিউএস এর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ওবিসি সার্টিফিকেট থাকাতেও তাদের ওবিসি হিসেবে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তাদের জবরদস্তি অসংরক্ষিত আসনের জন্য আবেদন করতে বলা হচ্ছে এবং এই মর্মে তাদের থেকে জোরপূর্বক লিখিত নেওয়া হচ্ছে। এর মূলে আছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের নতুন রীতি যেখানে কাউন্সেলিং-এ ক্যাটেগরি পরিবর্তন করার অপশনই তুলে দিয়েছে। এর ফলে রাজ্যের বড় অংশের ওবিসি পড়ুয়া বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ জিম নওয়াজের। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ২০২৪ এর ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির গাইডলাইন 15.4(C) অনুযায়ী রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর কাউন্সিলিং এর সময় প্রাপ্ত ক্যাটাগরি অনুযায়ী মেরিট লিস্ট প্রকাশ করবে। সেদিক থেকেও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সেন্ট্রাল এর এই নিয়ম রীতি ভঙ্গ করেছে। এ ধরনের কাজ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কিভাবে করতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জিম নওয়াজ। তিনি আরও বলেন, গতবছর কাউন্সিলিং এর সময় ক্যাটাগরি পরিবর্তন ও জমা করার সুযোগ থাকায় প্রায় চার শতাংশ অতিরিক্ত সংখ্যালঘু পড়ুয়া ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রকাশিত বিসিডব্লিউ-র নির্দেশ এবং এনটিএ এর নির্দেশ কেন অমান্য করা হচ্ছে? আমার ধারণা, সংখ্যালঘু বিদ্বেষ ও বঞ্চনার জন্য এমনটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জিম নওয়াজ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct