এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: অবশেষে প্রাইমারি বোর্ডের সংশোধিত অ্যাডহক কমিটিতে স্থান পেলেন তিন সংখ্যালঘু ৷ ২২ শে আগস্ট স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে প্রাইমারি বোর্ডের যে ১২ জনের অ্যাডহক কমিটির তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল সেখানে কোনো সংখ্যালঘু প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি ৷ এমনকি মধ্য শিক্ষা পর্ষদ, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রেসিডেন্টরা ওই কমিটিতে থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের প্রেসিডেন্ট স্থান পাননি ৷ ওই কমিটিতে কোনো সংখ্যালঘু মুখ না থাকায় সামাজিক গণমাধ্যম সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু মহলে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল। শাসক থেকে বিরোধী রাজ্যের সংখ্যালঘু মহলের বিদ্বজ্জনরা রাজ্য সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন ৷ সংখ্যালঘু সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ইন্টেলেকচুয়াল অফ বেঙ্গলে’র পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষা দফতরকে চিঠি করে পুনরায় কমিটি সংশোধনের অনুরোধ জানানো হয়। ফলাও করে খবর প্রকাশিত হয়েছিল ‘আপনজন’ পত্রিকায় ৷ অবশেষে বৃহস্পতিবার স্কুল শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে পূর্ব ঘোষিত অ্যাডহক কমিটিতে পাঁচজনকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি জানানো হয়েছে ৷ ওই কমিটিতে যে পাঁচজন জায়গা পেয়েছেন তাঁরা হলেন পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক তথা বিশিষ্ট সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্যর স্ত্রী ড. সৈয়দ তানভির নাসরিন, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সিদ্দিক আলম বেগ, কলকাতা জানবাজার আদর্শ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অলোক কুমার শুক্লা, হুগলি কুঠিরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবর্ণ কুমার মন্ডল ৷
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অ্যাডহক কমিটিতে নতুন করে পাঁচ জনকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে পর্ষদ সভাপতি ড. গৌতম পাল ‘আপনজন’ প্রতিনিধিকে বলেন, প্রাথমিক বোর্ডের নতুন অ্যাডহক কমিটিতে কোনো সংখ্যালঘু প্রতিনিধি না থাকায় একটা দাবি উঠেছিল। আমি বিষয়টি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম। সেক্ষেত্রে শিক্ষা বিভাগ ও মাননীয় মন্ত্রী অত্যন্ত যত্নশীল ভাবে আমাদের দাবি শুনেছেন এবং অ্যাডহক কমিটিতে পুনরায় পাঁচজনকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যেখানে তিনজন সংখ্যালঘু প্রতিনিধি স্থান পেয়েছেন। এখন সার্বিকভাবে যে অ্যাডহক কমিটি তৈরি হয়েছে সেখানে আমাদের পর্ষদের কাজ করার ক্ষেত্রে আরও ভালো হবে ৷ পূর্ণাঙ্গ অ্যাডহক কমিটিতে সামাজিক প্রতিনিধিত্বমূলক ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন গৌতম বাবু ৷
মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন অ্যাডহক কমিটিতে তাকে অন্তর্ভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ৷
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের ১০২টি সিনিয়র মাদ্রাসাতে প্রাথমিক ক্লাস সংযুক্ত রয়েছে, তাদের সার্বিক উন্নতির জন্য আমাদের অভিজ্ঞতা অ্যাডহক কমিটিতে জানাতে পারব।’
ড. সিদ্দিক আলম বেগ বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের উন্নয়ন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাদ দিয়ে সম্ভব নয় । শিক্ষা দফতর তথা রাজ্য সরকার এই বিষয়ে নজর দিয়েছেন । তাই শিক্ষা দফতর ও মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’ প্রাইমারি বোর্ডের অ্যাডহক কমিটির নয়া সদস্য ড. সৈয়দ তানভির নাসরিন জানান, ‘যে কাজের জন্য আমাকে মনোনীত করা হয়েছে আমি দায়িত্ব এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করতে পারব বলে আশা করছি ৷’
নয়া কমিটি ঘোষণা হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ৷
অ্যাডহক কমিটির সংশোধনের দাবি তুলে প্রথম প্রতিবাদে সরব হওয়া সংখ্যালঘু সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ ইন্টেলেকচুয়ালস অফ বেঙ্গল’-এর পক্ষ থেকেও শিক্ষা দফতরকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোনাজাত আলি বিশ্বাস বলেন, ‘দাবি মেনে প্রাথমিক বোর্ডের অ্যাডহক কমিটিতে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের স্থান দেওয়ায় আমরা আনন্দিত। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমাদের অনুরোধ, সামগ্রিক বিষয়টি তিনি যেন নজরে রাখেন ৷’
অন্যদিকে, সৈয়দ তানভির নাসরিনকে অ্যাডহক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করায় তার বিজেপি ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমাজবিদ জিম নওয়াজ। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, ‘ইসলামফোবিয়া ছড়িয়ে বিজেপি-আরএসএসকে খুশি করে আপনি এতদিন বিজেপির পে রোলে মালদ্বীপে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে কালচারাল সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। কবে মালদ্বীপ থেকে ফিরেছেন জানি না। নিশ্চয় ভারতের সাথে মালদ্বীপের বৈদেশিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পরেই ফিরেছেন। ফিরে ফিরেই তৃণমূল সরকার পরিচালিত প্রাইমারি বোর্ডের সংশোধিত অ্যাডহক কমিটিতে জায়গা পেয়ে গেলেন। আপনি প্রমাণ করে দিলেন, যোগ্যতা থাকলে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। এতদিন বিজেপির পে রোলে ছিলেন, এবার মুসলমান কোটায় তৃণমূলের পে রোলে ঢুকে পড়লেন।’
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct