নুরুল ইসলাম খান, কলকাতা, আপনজন: গত ২৭ আগষ্ট হরিয়ানার চরখি দাদরিতে গরুর মাংস খেয়েছে অভিযোগ তুলে ২৩ বছরের যুবক সাবির মালিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে ‘গো-রক্ষক’ বাহিনী। তার প্রতিবাদে রাজ্যের বেশ কয়েকটি সংগঠন কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাাদিক সম্মেলন করে। এই প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন বন্দী মুক্তি কমিটির ছোটন দাস, কবি প্রসূন ভৌমিক, সংবিধান বাঁচাও মঞ্চের ভানু সরকার, আদিবাসী রক্ষা মঞ্চের সুবল সরকার ও জাময়াতে ইসলামি হিন্দের সাদাব মাসুম প্রমুখ।
তাার হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার সমালোচনা করেন। দোষীদের গ্রেফতার করা হলেও তাদের যে বেশিদিন জেলে থাকতে হবে না বা ফুলমালা দিয়ে বরণ করা হবে, সেটা হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই প্রমাণ বলে অভিযোগ তোলা হয়। সাবির মালিকের বাড়িতে থাকা মাংস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। মহঃ আখলাকের ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলেন, সাবির মালিক দক্ষিণ ২৪পরগণার বাসন্তীর বাসিন্দা। তার স্ত্রী ও ২বছরের শিশু সন্তান আছে। একই সাথে মহারাষ্ট্রে ট্রেনে একজন বৃদ্ধ মুসলিম নাগরিককে গরুর মাংস নিয়ে যাচ্ছে— এই গুজব ছড়িয়ে তাঁকে চলন্ত ট্রেনে হেনস্থা, অপমান ও নির্যাতন করছে। তিনি বারবার বলছেন যে এটা গরু নয়, খাসীর মাংস। ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা এই সকল ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। আমাদের আশঙ্কা হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এরকম ঘটনা আরও ঘটবে।
তারা বলেন, আপনাদের স্মরণে আছে যে লোকসভা নির্বাচনের আগে ইলেক্টোরাল বন্ডের যে তালিকা প্রকাশ হয়েছিল, তাতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি গো-মাংস রপ্তানিকারক কোম্পানির কাছ থেকে মোটা টাকা চাঁদা নিয়েছে।
সংগঠনগুলির আরও অভিযোগ,
দ্বিচারিতায় বিজেপি-আরএসএস একমেবঅদ্বিতীয়ম। যার কোনও বিকল্প নেই। নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ ও ধর্ষণের তালিকায় শীর্ষে থাকা (১৩৫জন বিধায়কের মধ্যে ৫৪ জন বিজেপির ও ১৭ জন বিজেপির জোটসঙ্গী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টির) বিজেপির নেতা-কমীরা গোমাংস খাওয়াকে রাজ্যে রাজ্যে নিষিদ্ধ করছে, আর গোমাংস রপ্তানিকারক কোম্পানির থেকে মোটা টাকা নিচ্ছে। আর এইসমস্ত ঘটনায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। সাংবাদিক সম্মেলনে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, মালদার শ্রমিক আফরাজুলের খুনি শম্ভু রেগারকে বিজেপি নির্বাচনে প্রার্থী করেছিল। এদিনে সাংবাদিক সম্মেলনে যেসব দাবিগুলি তুলে ধরা হয় সেগুলি হল:
১) দোষীদের আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২) গোদি মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে ইসলাম বিদ্বেষ প্রচার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৩) হরিয়ানা সরকারকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪) কে কি খাবে আর কে কি খাবে না— সেটা মানুষ ঠিক করবে। এই সংক্রান্ত সমস্ত আইন ২০১৪ ও নিষেধাজ্ঞা বাতিল করতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct