সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া, আপনজন: চাকরির জন্য দলেরই প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষকে দেওয়া ২০ লক্ষ টাকা ফেরত না পেয়ে আত্মহত্যা প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীর, লিখিত অভিযোগ দায়ের হতেই বেপাত্তা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ। হাতে তিন চারটে চাকরি আছে। কিন্তু তার জন্য দিতে হবে মোটা অঙ্কের টাকা। ২০১৭ সালে দলেরই পঞ্চায়েত প্রধানকে এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন তৎকালীন পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ। প্রস্তাব শুনে নিজের ছেলে ও দুই আত্মীয়ের চাকরির জন্য ২০ লক্ষ টাকা তুলেও দিয়েছিলেন তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধান। কিন্তু চাকরি মেলেনি, মেলেনি দেওয়া টাকাও। উল্টে টাকা চাওয়ায় নিয়মিত মিলত হুমকি। সেই মানসিক অবসাদে এবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন বর্তমানে প্রাক্তন ওই পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী। বাঁকুড়ার কোতুলপুরের এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হতেই বেপাত্তা অভিযুক্ত প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে স্থানীয় ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা নেতৃত্বের দাবী দল কোনোরকম দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। বিজেপির কটাক্ষ তৃণমূলের অন্দরে এমন একটা নয় অসংখ্য সন্দীপ ব্যানার্জী রয়েছেন।
জানা গেছে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের দখলে থাকা বাঁকুড়ার কোতুলপুর ব্লকের দেশড়া কোয়ালপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন রূপা মন্ডল। রাজনৈতিক সূত্রেই আলাপ ছিল তৎকালীন তৃণমূল পরিচালিত কোতুলপুর পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সন্দীপ ব্যানার্জীর সঙ্গে। অভিযোগ ২০১৭ সালে সন্দীপ ব্যানার্জী তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধানকে জানান দলের প্রভাবশালীদের সঙ্গে তাঁর বিশেষ দহরম মহরম থাকায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ সি ও ডি পদে তিন থেকে চার জনের চাকরি তিনি করে দিতে পারবেন। তবে তার জন্য লাগবে মোটা অঙ্কের টাকা। সন্দীপের দেওয়া টোপ গিলে নিজের ছেলে ও দুই আত্মীয়ের চাকরির জন্য তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধান রূপা মন্ডল ও তাঁর স্বামী ধর্মদাস মন্ডল মোট ২০ লক্ষ টাকা সন্দীপের হাতে তুলে দেন বলে অভিযোগ। ২০১৯ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্দীপ ব্যানার্জীর পাশাপাশি জনপ্রতিনিধির পদ হারান রূপা মন্ডলও। তখন থেকেই চাকরি পাওয়ার আশা হারাতে থাকেন রূপা মন্ডলের পরিবার। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতার হলে চাকরি পাওয়ার আশা পুরোপুরি হারান রূপা মন্ডলের পরিবার। এরপর থেকেই দেওয়া ২০ লক্ষ টাকা সন্দীপের কাছে ফেরত চান রূপা মন্ডল ও তাঁর স্বামী ধর্মদাস মন্ডল। সন্দীপ প্রথমে ওই টাকা দিচ্ছি দেবো করলেও পরবর্তীতে পাল্টা ধর্মদাস মন্ডলকে হুমকি দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ। এতেই মানসিক অবসাদে ভূগতে শুরু করেন ধর্মদাস মন্ডল। গতকাল দুপুরে আচমকাই তিনি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। স্ত্রী রূপা মন্ডল তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের দাবী বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের কাছে ধার করে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সন্দীপ ব্যানার্জীকে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা তাঁরা দিয়েছিলেন। সন্দীপ সেই টাকা ফেরত না দেওয়ায় নিজের জমি বিক্রি করতে হয়েছে। আর তাতেই স্বামী ধর্মদাস মন্ডলের মানসিক অবসাদ আরো বৃদ্ধি পায়। সেই মানসিক অবসাদেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবী স্ত্রীর। ঘটনার পর পরই গোটা বিষয়টি জানিয়ে কোতুলপুর থানায় সন্দীপ ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান মৃত ধর্মদাস মন্ডলের ছেলে। আর তারপর থেকেই বেপাত্তা হয়ে যায় অভিযুক্ত সন্দীপ ব্যানার্জী। বিজেপির কটাক্ষ তৃণমূলের পদাধিকারীদের হাতে দলেরই অন্য পদাধিকারী এমন প্রতারনার শিকার হলে সাধারণ মানুষের সুরক্ষা কোথায়?
পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষের এমন কীর্তিতে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পড়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে কোতুলপুর ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের সাফাই বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। অভিযোগ সত্য হলে প্রশাসনের পাশাপাশি দলও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct