আপনজন ডেস্ক: মায়ানমার সেনাবাহিনী একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নানা সংকটের মুখে পড়েছে দেশটি। মায়ানমারের ৫৪ মিলিয়ন মানুষের প্রায় অর্ধেকই এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন দরিদ্র মানুষেরা। অর্থের অভাব মোচন করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধনী ব্যক্তিদের কাছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে কিডনি বিক্রি করছেন দরিদ্ররা। সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক বছরব্যাপী তদন্তে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
২০২২ সালে ডেলিভারি ভ্যান চালক মং মংকে সামরিক জান্তা কয়েক সপ্তাহ ধরে আটকে রেখে নির্যাতন করেছিল। বিরোধী বাহিনীর জন্য পণ্য পরিবহনের সন্দেহে তাকে আটক করা হয়েছিল। ওই সময়ে সংসার চালানোর জন্য তার স্ত্রী ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
অবশেষে যখন মং মং মুক্তি পান, তখন তিনি তার চাকরি হারিয়েছিলেন। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিন দিন অনাহারে ছিলেন মং মং। এরইমধ্যে তার পরিবার ঋণের সাগরে ডুবে গেছে। মরিয়া হয়ে মং মং ফেসবুকে একটি পোস্টে তার কিডনি বিক্রির প্রস্তাব দেন।
ওই সময়ের কথা স্মরণ করতে গিয়ে মং মং বলেন, ‘সেই মুহুর্তে, আমি অনুভব করেছি, জীবন খুব কঠিন। টাকার জন্য ডাকাতি করা বা খুন করা ছাড়া আমার বাঁচার আর কোনো উপায় নেই। আমার স্ত্রীর মানসিকতাও একই রকম ছিল, সে আর এই পৃথিবীতে থাকতে চায় না। কিন্তু শুধুমাত্র আমাদের মেয়ের জন্যই আমরা বেঁচে থাকতে হয়।’
কয়েক মাস পরে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারির জন্য ভারতে যান। একজন ধনী চীনা-বর্মী ব্যবসায়ী ১০ লাখ বার্মিজ কিয়াট (তিন হাজার ৭৯ মার্কিন ডলার) দিয়ে তার কিডনি কিনেছিলেন। অভাবের তাড়নায় কিডনি বিক্রি করা ব্যক্তিদের মধ্যে মং মং একমাত্র নন।
সিএনএন অন্তত তিনটি বার্মিজ ফেসবুক গ্রুপে অঙ্গ বিক্রির প্রস্তাবের পোস্ট খুঁজে পেয়েছে এবং বিক্রেতা, ক্রেতা এবং এজেন্টসহ অঙ্গ ব্যবসার সাথে জড়িত বেশ কয়েকজন লোকের সাথে কথা বলেছে। গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটির অভাবী মানুষেরা হতাশ হয়ে এই পথ বেছে নিয়েছেন।
মায়ানমারের সেনাবাহিনী একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের তিন বছর পর দেশটির পাঁচ কোটি ৪০ লাখ মানুষের প্রায় অর্ধেকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ২০১৭ সালের তুলনায় এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তা নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে লড়াই করায় সহিংসতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিদেশী বিনিয়োগ কমে গেছে, বেকারত্ব আকাশচুম্বী হয়েছে এবং মৌলিক জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে, বেশিরভাগ মানুষের তা নাগালের বাইরে চলে গেছে।
অভাবের তাড়নায় কিডনি বিক্রি করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৬ বছর বয়সী এক তরুণ বলেন, ‘নিজের শরীরের অঙ্গ বিক্রি করা প্রত্যেকের জন্য একটি কঠিন সিদ্ধান্ত। কেউ এটা করতে চায় না। আমি এটি করছি একমাত্র কারণ হল আমার কোনো বিকল্প নেই।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct