দীপক কুমার, হরিয়ানা ও চন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাসন্তী, আপনজন: উত্তরপ্রদেশের দাদরির কাছে বিসাহদা গ্রামে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে ৫২ বছর বয়সি মোহাম্মদ আখলাকের বাড়িতে গোমাংস রাখার কথিত অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এবার গোমাংস রান্নার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটল হরিয়ানার চরখি দাদরি থানার এলাকার বাধরায়। এবার গোরক্ষকদের হাতে প্রাণ গেল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বাসন্তী থানা এলাকার বাসিন্দা সাবির মল্লিক। শুক্রবার সাবিরের কফিনবন্দি দেহ বাসন্তিতে তার বাড়িতে পৌঁছায়। এদিন বিকেলে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। তার মৃত্যুতে গোটা পরিবার সহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ মৃত সাগিরের ভাই বাবুর আলি মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। বাসন্তী পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রীদাম মণ্ডল এদিন জানান, পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে অনেকেই বিভিন্ন রাজ্যে যান। কিন্তু এই ধরনের ঘটনায় তিনি স্তম্ভিত ও মর্মাহত। বিষয়টি তিনি স্থানীয় সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলকে জানিয়েছেন যাতে এই ঘটনা সংসদে তুলতে পারেন জয়নগরের সাংসদ।
গোরক্ষকদের হাতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সাবির মল্লিকের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে হরিয়ানা চরখি দাদরি থানার পুলিশ পাঁচজন গোরক্ষককে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার ডিএসএপি ভারত ভূষণ। গোমাংস খাওয়ার সন্দেহে সাবির মালিককে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। ধৃতদের নাম অভিষেক ওরফে শকা, রবিন্দর ওরফে কালিয়া, মোহিত, কমলজিৎ ও সাহিল ওরফে পাপ্পি। পুলিশ লাশটি হেফাজতে নিয়ে চরখি দাদরি সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে বুধবার পোস্টমর্টেম করা হয়।
হরিয়ানার হিন্দি দৈনিক ‘হরিভূমি’-তে এ সম্পর্কে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দাদরির এই বস্তিতে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় পাঁচ ডজন পরিবার বাস করে। এর মধ্যে বেশিরভাগ লোক আবর্জনা সংগ্রহকারী এবং স্ক্র্যাপ সংগ্রহকারী হিসাবে কাজ করে। সময়ে সময়ে, গোয়েন্দা বিভাগ এই বস্তিতে বসবাসকারী লোকদের আধার কার্ড এবং অন্যান্য নথি পরীক্ষা করে। এর মধ্যে আসামের বেশি পরিবার এবং পশ্চিমবঙ্গের কম পরিবার রয়েছে।
বাসন্তী গ্রামের বাসিন্দা গোরক্ষকদের হাতে নিহত সাবির মল্লিক মাত্র ১৫ বছর বয়সে পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছিলেন চরখি দাদরির বস্তিতে এসেছিলেন স্ক্র্যাপ সংগহের কাজ করতে । দীর্ঘদিন থাকার পর তিনি নিজ গ্রামে ফিরে যান। ২০২১ সালে তিনি আবার বাধরায় আসেন এবং আবর্জনা সংগ্রহকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন।
বর্তমানে সাবির, তার স্ত্রী, মেয়ে, শ্বশুর, শ্যালক প্রমুখ এখানে থাকতেন। বুধবার ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনরা সাবিরের মরদেহ নিয়ে নিজ গ্রামে চলে যান।
একই সময়ে, তার পরিবার থেকে একজন মহিলা এবং তিনজন রয়ে গেছে যারা কুঁড়েঘরের কাছে সংগ্রহ করা আবর্জনা বিক্রি করে এখান থেকে চলে যাওয়ার কথা ভাবছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সেনা মোতায়েন করেছে।
এ ব্যাপারে সাবিরের সাথে থাকা তার ভগ্নিপতি সুজাউদ্দিন সরদার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি এবং তার আত্মীয় বাধরার জুই রোডের একটি বস্তিতে থাকেন এবং আবর্জনা সংগ্রহকারী হিসাবে কাজ করেন। তার বোন শাকিনা সরদারও স্বামী সাবির মালিকের সাথে তার সন্তানদের নিয়ে বাধরায় থাকেন। তিনি জানান, কিছু লোক গত মঙ্গলবার এসে বলে, আপনারা মাংস খান এবং এটি গরুর মাংস হতে পারে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাধরা থানায় নিয়ে আসে। এরপর কিছু যুবক তার শ্যালক সাবির মালিককে স্ক্র্যাপ দেওয়ার অজুহাতে বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যায়। ওই যুবকরাও তাদের পরিচিত আসামের বাসিন্দা আছির উদ্দিনকে ডেকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বাইকে তুলে নিয়ে যায়। এ ছাড়া তারা তাকে মারধর করে। এরপর বুধবার সকালে ভান্ডওয়া গ্রামের কাছে তার শ্যালকের লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি হেফাজতে নিয়ে চরখি দাদরি সিভিল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করে।
বিষয়টি নিয়ে চরখি দাদরার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভাধরা গ্রামের বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি ঝুপড়িতে বসবাসকারী পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে যায় একদল দুষ্কৃতী যারা গোরক্ষক বলে দাবি করে। বাড়িতে গোমাংস রান্না করা হয়েছে সন্দেহে তারা তাকে ডেকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার ওই পরিবার যে খাবার খেয়েছিল তার নমুনাও সংগ্রহ করে ফরিদাবাদের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে।
ডিএসপি ও থানার ইনচার্জের নেতৃত্বে পুলিশ ও সিআইএ টিম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। যারা নিজেদেরকে গোরক্ষক বলে দাবি করে, তাদের বেশিরভাগই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে এবং পুলিশ তাদের খোঁজে ব্যস্ত। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভাধরা গ্রামের বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি ঝুপড়িতে বসবাসকারী পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে যায় একদল দুষ্কৃতী। যারা নিজেদেরকে গোরক্ষক বলে দাবি করে, তাদের বেশিরভাগই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে এবং পুলিশ তাদের খোঁজে ব্যস্ত। এ বিষয়ে বাধরার ডিএসপি ভারত ভূষণ বলেন, ৫ জনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। দল গঠন করে অভিযুক্তদের খোঁজ করা হচ্ছে। শিগগিরই আসামিদের গ্রেফতার করে মামলার সত্যতা উদঘাটন করা হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct