এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুল শিক্ষা দফতরের মাধ্যমিক শাখার তরফে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) আঞ্চলিক চেয়ারম্যানদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ২৮ শে আগস্ট প্রকাশিত ওই তালিকায় কোনো সংখ্যালঘু মুখ না থাকায় ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গত ২২ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রাথমিক বিভাগের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নতুন অ্যাডহক কমিটিতে কোনো সংখ্যালঘু প্রতিনিধি না রাখার কারণে সামাজিক গণমাধ্যম সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু মহলে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল। এই আবহেই আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে ক্ষুব্ধ সংখ্যালঘু মহল। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আঞ্চলিক চেয়ারম্যানদের নামের নতুন তালিকা অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলের দায়িত্ব পেয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মনিকান্ত পারিয়া, পূর্বাঞ্চলের দায়িত্ব পেয়েছেন রামপুরহাট কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের দায়িত্ব পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. সৌমি দাস, পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্ব পেয়েছেন সিধু-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাধনা খাওয়াস, উত্তরাঞ্চলের দায়িত্ব পেয়েছেন পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াল বসু রায়। জানা গিয়েছে, সংখ্যালঘু মুখ হিসাবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের আঞ্চলিক চেয়ারম্যান পদে ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক আব্দুল ওহাব ও ২০১৫ সাল নাগাদ পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক শেখ সিরাজউদ্দিন। এরপর থেকে সম্ভবত আর কোনো সংখ্যালঘুকে স্থান দেওয়া হয়নি।
চার বছরের জন্য মনোনীত স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) আঞ্চলিক চেয়ারম্যানদের নয়া এই তালিকায় কমপক্ষে একজন সংখ্যালঘু মুখ না থাকায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সংখ্যালঘু মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বর্তমানে মুসলিম সহকারি অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপকদের সংখ্যা যথেষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তারপরও তারা ব্রাত্য কেন। অন্যদিকে সমগ্র রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ মুসলিম অথচ সরকারি কমিটিতে কোনো সংখ্যালঘু মুখ নেই কেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সংখ্যালঘু তোষণের তকমা মুছতে গিয়ে যদি বাম জামানার মতোই পক্ষপাত শুরু হয় তাহলে আগামী দিনে সংখ্যালঘুরা মমতা সরকারের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে অনেকে মত প্রকাশ করছেন । এসএসসি’র আঞ্চলিক চেয়ারম্যানদের নতুন তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই ‘প্রোগ্রেসিভ ইন্টেলেকচুয়ালস অফ বেঙ্গল’-এর পক্ষ থেকে সামাজিক গণমাধ্যমে প্রতিবাদে সরব হচ্ছেন সংগঠনের কর্মকর্তারা। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে একই ঘটনার প্রেক্ষিতে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোনাজাত আলী বিশ্বাস সহ সংগঠনের অন্যান্য কর্মকর্তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনে নামারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি ‘আপনজন’ প্রতিনিধিকে টেলিফোনে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু বলবার নেই, শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলতে হবে, কারণ আঞ্চলিক চেয়ারম্যানরা সরকার কর্তৃক নিয়োগ পেয়েছেন।’ সামাজিক গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে যে জোর চর্চা শুরু হয়েছে তাতে অবশ্য আমল দিতে চাননি সিদ্ধার্থ বাবু। সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct