আপনজন ডেস্ক: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ৯ আগস্ট সকালে ধর্ষিতার বাবা-মাকে ফোন করে হাসপাতালে রিপোর্ট করার অনুরোধ জানিয়ে তিনটি কথিত অডিও রেকর্ডিং করেছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে এসেছে । এই ‘অসমর্থিত’ অডিও রেকর্ডিং ঘিরে নতুন বিতর্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। ওই ফোনালাপে নির্যাতিতার অবস্থা নিয়ে এক আধিকারিকের বক্তব্যকে ঘিরে যত বিতর্কের সৃষ্টি। যদিও অডিও রেকর্ডিংয়ের সত্যতা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করেনি ‘আপনজন।’ তবে, শোরগোল ফেলে দেওয়া এই অডিও রেকর্ডিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতাল প্রাথমিকভাবে এই ভয়াবহ অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিল কিনা।
হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট পরিচয় দেওয়া এক মহিলা প্রায় ৩০ মিনিটের ব্যবধানে একই নম্বর থেকে তিনবার নির্যাতিতার বাবা-মাকে ফোন করে তাদের জরুরি উপস্থিতি জানতে চান। ওই দিন সকাল ১০টা ৫৩ মিনিট নাগাদ নির্যাতিতার বাবাকে করাপ্রথম ফোনটিতে বলা হয়, ‘আমি আরজি কর হাসপাতাল থেকে ফোন করছি। আপনি কি এক্ষুনি আসতে পারবেন?’
বাবা জিজ্ঞেস করেন, ‘কেন? কী হয়েছে?’ এর উত্তরে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আপনার মেয়ে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করছি। আপনি কি তাড়াতাড়ি নেমে আসতে পারবেন?’ অভিভাবক আরও বিশদে জানতে চাইলে ফোনকারীকে বলতে শোনা যায়, ‘এই বিবরণগুলি কেবল ডাক্তাররাই সরবরাহ করতে পারেন। আমরা কেবল আপনার নম্বরটি খুঁজে পেতে এবং আপনাকে কল করতে পেরেছি। দয়া করে তাড়াতাড়ি নেমে আসুন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিটা আপনি আসার পর চিকিৎসকরা আপনাকে জানাবেন।
নির্যাতিতার উদ্বিগ্ন মাকে পিছন থেকে জিজ্ঞাসা করতে শোনা যায়, ‘তার কি জ্বর হচ্ছে?’ তখন উত্তরে বলা হয়, ‘তাড়াতাড়ি আসুন।’
নির্যাতিতার বাবা জিজ্ঞেস করেন, ‘তার অবস্থা কি খুব গুরুতর?’ উত্তর দেওয়া হয়, ‘হ্যাঁ, মেয়ের খুব সিরিয়াস অবস্থা। তাড়াতাড়ি আসুন।’ কলটি এক মিনিট ১১ সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল।
প্রায় ৪৬ সেকেন্ড স্থায়ী দ্বিতীয় ফোন কলটি আসে প্রায় পাঁচ মিনিট পর। একই কলার থেকে তাকে বাাব-মায়ের প্রতি বলতে শোনা যায়, ‘তার অবস্থা সঙ্কটজনক, খুবই সঙ্কটজনক। দয়া করে যত তাড়াতাড়ি পারেন আসুন।’
মেয়ের কী হয়েছে জানতে বাবার মরিয়া আবেদনের উত্তরে অপর প্রান্তের কণ্ঠস্বরটি পুনরাবৃত্তি করেন, ‘কেবল ডাক্তাররাই এটি বলতে পারেন। আপনি প্লিজ চলে আসুন।’
নিহতের বাবা পরিচয় জানতে চাইলে ফোনকারী বলেন, ‘আমি সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট। আমি ডাক্তার নই। আমরা আপনার মেয়েকে জরুরি বিভাগে নিয়ে এসেছি। আপনি দয়া করে আসুন এবং আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।’
তৃতীয় এবং শেষ কলটিতে মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রথম দুটি কলের একই কণ্ঠস্বরে বলতে মোনা যায়, ‘হ্যাঁ, প্লিজ শুনুন... আমরা আগেও বারবার বলেছি... আপনার মেয়ে...আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন... অথবা, তিনি হয়তো মারা গেছেন। পুলিশ এসেছে। হাসপাতাল থেকে আমরা সবাই এখানে আছি। আমরা আপনাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলছি।’ চূড়ান্ত কলটি ২৮ সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল।
এখন নির্যাতিতার মৃত্যু নিয়ে তদন্ত চলছে। তারই প্রকৃত রহস্য উদ্ভাবন হয়তো করতে পারবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct