নিজস্ব প্রতিবেদক, হুগলি, আপনজন: জামাআতে ইসলামী হিন্দের উদ্যোগে সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী দেশজুড়ে এক অভিনব ক্যাম্পেইন চালানো হবে। সংগঠনের মারকায দিল্লি থেকে এই সময়োপযোগী প্রচারাভিযান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর এই প্রস্তাবিত অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে সব রাজ্যের সব জেলায় এই ওয়ার্কশপ বা ওরিয়েন্টেশন ক্যাম্প চলছে। তারই অংশ হিসেবে সোমবার ২৬ আগষ্ট হুগলি জেলার হরিণখোলা আয়েশা মসজিদে অনুষ্ঠিত হল এই প্রোগ্রাম। জেলার বিভিন্ন ইউনিট থেকে বাছাই করা কর্মী হিসেবে নারী পুরুষ মিলিয়ে এতে প্রায় ৫০ জন অংশগ্রহণ করেন। সম্মানীয় অতিথি বা প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামাআতের দাওয়াহ্ বিভাগের রাজ্য সেক্রেটারি নাসিম আলি সাহেব, সহকারী সেক্রেটারি শেখ আলিমুদ্দিন সাহেব, রাজ্য মজলিসে শুরার সদস্য ও পূর্ব বর্ধমান জেলার নাজিম মোহাম্মদ তাহের উদ্দিন সাহেব, হুগলির জেলা নাজিম সৈয়দ সাইফুল্লাহ সাহেব প্রমুখ।
সবার মূল বক্তব্য ছিল, মানুষের জন্য অবাধ স্বাধীনতা কাম্য নয়। অবাধ বা লাগামহীন স্বাধীনতা ডেকে আনে সামাজিক অবক্ষয়, সংকট ও বিপর্যয়। স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরাচারের মূল কারণ হল বল্গাহীন স্বাধীনতা। তাই নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা নয়। স্বচ্ছ ব্যক্তি, সুসংহত পরিবার, আদর্শ সমাজ তথা রাষ্ট্র গড়তে চাই সংযত ও নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা। আর সকল নাগরিকের জন্য প্রকৃত স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে হলে নৈতিকতাকে সম্পৃক্ত করতে হবে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে আবর্তিত স্বাধীনতাই দেশ ও দশের সার্বিক উন্নতি প্রগতিকে ত্বরান্বিত করে। অর্থাৎ নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিবর্জিত স্বাধীনতা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সমূহ সর্বনাশ ডেকে আনে। তাই ব্যক্তি স্বাধীনতা, নারী স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা -- সব ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রিত ও সংযত স্বাধীনতা সমাজ ও দেশকে অগ্রগতির কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছে দিতে অনুঘটকের কাজ করে। অন্যথায় সমাজিত ও নৈতিক সংকট এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
তারা এও বলেন, একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল যুগে কেন বাড়ছে যৌনপল্লী ও দেহ ব্যবসায়ীর সংখ্যা, কেন বাড়ছে বৃদ্ধাশ্রম এর সংখ্যা, বিবাহ বহির্ভূত অবাধ যৌনাচার এবং তার পরিণতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ, ধর্ষণ, ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন, মদ ও ড্রাগের রমরমা হু হু করে বাড়ছে, এছাড়াও যাবতীয় অনাচার, ব্যভিচার, কদাচার, পাপাচারে দেশ উজাড় হয়ে যাচ্ছে? কিন্তু কেন? স্বাধীনতার ৭৮ বছরেও কেন দেশের এমন বিভীষিকা, কেন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে? তাহলে এই স্বাধীনতা কেবল মানচিত্রে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। দেশবাসীর জীবনচিত্রে তার ইতিবাচক প্রতিফলন ঘটেনি! তাই নতুন করে ভাবতে হবে বৈকি।
নারী স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী পুরুষ সমানাধিকারের অজুহাতে মায়ের জাতিকে ভোগ্য পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। পরকীয়া, অবাধ যৌনাচার, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, সমকামিতা, বহুগামিতা, লেসবিয়ানিজম...সিঙ্গেল মাদার ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে মানুষ, পরিবার, সমাজ, সভ্যতার পরম্পরাকে রসাতলে পাঠিয়ে দেওয়ার সুনিপুণ ষড়যন্ত্র চলছে বহুকাল আগে থেকেই। স্বাধীনতা ও অধিকারের নামে মানুষের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। আর এভাবেই মানুষকে ক্রমেই আধুনিকতার নামে পশুত্বে পর্যবসিত করা হচ্ছে। ফলে পারিবারিক গঠন, কাঠামো ও বন্ধনকে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের মেধা, প্রতিভা, সৃজনশীলতাকে আর্থিক মানদণ্ডে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এসবই হল পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের অশুভ পরিণতি। ভালো মন্দ, ন্যায় অন্যায়, বৈধ অবৈধ ইত্যাদির ফারাক ঘুচিয়ে দিয়ে মানুষকে ভোগবাদের রঙিন চশমা পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে মানুষ নৈতিকতা, মানবিকতা ও মূল্যবোধকে পরিহার করে বিলাসবহুল লাইফস্টাইল মেন্টেন করে এবং চিরাচরিত পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে শিথিল করে মন চাহি জিন্দেগি যাপনে উৎসুক হয়ে ওঠে।
এসব পার্থিব সুখ, স্বচ্ছন্দ, আরাম, বিলাস ও ভোগবাদী চিন্তাভাবনা পরিহার করে মানুষকে মহান সৃষ্টিকর্তার শাশ্বত বিধান বা ঐশী গাইডলাইনের দিকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই জামাআতে ইসলামী হিন্দের এই অভিযান।
আজকের প্রোগ্রামে বিভিন্ন বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মুকাদ্দেরুল হক, মিনহাজ আফরোজ, আবুল লাইস শামীম, সাহিনা খাতুন, মুদাসসির নিয়াজ প্রমুখ। তাজকির বিল হাদীস পেশ করেন শাহ আলম, নজিমে ইজতেমা ছিলেন সাদিক আলি মল্লিক, কনভেনর এর দায়িত্ব পালন করেন জামালউদ্দিন খান ও মুদাসসির নিয়াজ। রাজ্য সম্পাদক নাসিম আলি সাহেবের হেদায়েত এর মাধ্যমে প্রোগ্রাম সমাপ্ত হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct