পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রথমিক বিভাগের তরফে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নতুন অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও অ্যাডহক কমিটিতে কোনও সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব নেই। আরও অভিযোগ, স্কুল সার্ভিস কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, কলেজ সার্ভিস কমিশন সহ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদেও কোনও মুসলিম প্রতিনিধিত্ব নেই। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের সংখ্যালঘু মহলের বিদ্বজ্জনদের নানা মতামত তুলে ধরেছেন ‘আপনজন’ সাংবাদিক এম মেহেদী সানি।
‘এই কমিটি বাদ দিয়ে নতুন কমিটিতে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি রাখা হোক’
খুব দুর্ভাগ্যের বিষয় যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যখন সর্বদিক হতেই পর্যদুস্ত তখনও সংখ্যালঘু সমাজ রাজনীতির ক্ষেত্রে মমতাকে ভরসা করেই চলেছে । সেই সময়ে এই সরকার দ্বারা একটা সাম্প্রদায়িক কমিটি (প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অ্যাডহক কমিটি) গঠন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের একতৃতীয়াংশ জনসংখ্যা সংখ্যালঘুদের, চাই এই কমিটিকে বাদ দেওয়া হোক ও নতুন কমিটিতে একতৃতীয়াংশ সংখ্যালঘু প্রতিনিধি থাকুক।
মোতাহার হোসেন
আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
‘মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি না থাকাটা অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে’
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের যে অ্যাডহক কমিটি প্রকাশিত হয়েছে সেখানে মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি না থাকাটা অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে। আমরা চাই এই কমিটিতে একজন হলেও সংখ্যালঘু প্রতিনিধি থাকা উচিত। এটা ন্যায্য দাবি। সমাজের উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সমাজের প্রতিনিধি থাকা প্রয়োজন।
নিজামুদ্দিন বিশ্বাস
রাজ্য সম্পাদক, অল বেঙ্গল ইমাম-মুয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশন
‘প্রাইমারি বোর্ডের অ্যাডহক কমিটিতে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি রাখাটা উচিত ছিল
প্রাইমারি বোর্ডের অ্যাডহক কমিটিতে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি রাখাটা উচিত ছিল ৷ বর্তমানে উপযুক্ত ব্যক্তি মুসলিমদের মধ্যে প্রচুর রয়েছে, তাহলে থাকবে না কেন ? তবে যারা এটা করছেন তাঁরই এটা ভালো বলতে পারবেন ৷
ড. হুমায়ুন কবির
বিধায়ক ও প্রাক্তন আইপিএস
‘একজন মুসলিম ও একজন আদিবাসী প্রতিনিধি রেখে দেওয়া হোক’
রাজ্যের পশ্চাৎপদ সমস্ত জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। নব গঠিত প্রাইমারি বোর্ডের অ্যাডহক কমিটিতে যেমন সংখ্যালঘু কোন প্রতিনিধি নেই তেমনি দলিত আদিবাসী সমাজের কোন প্রতিনিধি নেই । নবগঠিত ওই কমিটির নিরিখে বলা যায় পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা বোর্ডের সভাপতি এবং অন্ততপক্ষে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রতিনিধি ও ঝাড়গ্রাম এর আদিবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রতিনিধির স্থান পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হলো, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের । সংখ্যালঘু দলিত আদিবাসী প্রীতি তৃণমূল সরকারের শুধু মুখে, কাজে নয়। আমি মনে করি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পুনরায় এই কমিটি গঠন করা উচিত। যেখানে বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে যিনি ক্ষমতার মসনদে আছেন, তাকে কেন সব সময় সব বিষয়ে আমাদের মনে করিয়ে দিতে হবে? কেন মুসলিম দলিত আদিবাসীরা সমস্ত ক্ষেত্রে বঞ্চিত হবে? রাজ্যের মুসলিম ও আদিবাসীরা শুধু ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে থাকতে চায় না। তারা তাদের অধিকার চায়। সেই অধিকার, সেই সম্মান তাদেরকে দেওয়া উচিত। আমি বিধানসভা অধিবেশনে সুযোগ হলে এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলব ৷
নওশাদ সিদ্দিকী
বিধায়ক ও চেয়ারম্যান, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফন্ট
‘কমিটিতে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে “বর্জন” করা হয়েছে যা চরম উদ্বেগের’
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নবগঠিত কমিটি দেখে বোঝাই যাচ্ছে না এটা কোন সরকারের দ্বারা গঠিত কমিটি। বিজেপি সরকার না তৃণমূল সরকারের? কমিটিতে রাজ্যের মূল স্রোতের শিক্ষা পর্ষদ গুলির মাননীয় সভাপতিরা থাকলেও এক্ষেত্রে বর্জন করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে। এখন প্রশ্ন হল, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর মন্ত্রিত্বে চলা এই দফতরের অধীনস্থ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদকে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর অন্যান্য শিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে সমতুল বলে মনে করে কী -না ? যা পূর্ববর্তী সরকারের আমলে কোনোকালে হয়নি । এই কমিটি গঠনে রাজ্যের বৃহত্তর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে “বর্জন” করা হয়েছে। কমিটিতে তাদের কোনো স্থান হয়নি। খুবই উদ্বেগজনক বিষয়, একপেশে, একদেশদর্শী।
ড. আবদুস সাত্তার
রাজ্যের প্রাক্তন সংখ্যালঘু মন্ত্রী
‘আশা করব রাজ্য সরকার সংশোধিত কমিটিতে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি রাখবে’
এটা অপ্রত্যাশিত ও দুর্ভাগ্যজনক। বর্তমান রাজ্য সরকারকে মুসলমানরা তাদের সমর্থনকে উজাড় করে দেওয়ার পরেও এই অবহেলা মূলক সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না।আমি আশা করব এই কমিটির পুন:সংশোধন করে অবশ্যই সংখ্যালঘূ প্রতিনিধিদের রাজ্য সরকার স্থান দেবে।
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান
সাধারণ সম্পাদক, সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন
‘রাজ্যের শিক্ষা দফতরের নানা স্থানে কোনও মুসলিম প্রতিনিধিত্ব নেই’
এটি কোনো নতুন কথা নয় এই সরকারের আমলে। শিক্ষা দফতরের নানা জায়গায় কোনও মুসলিম প্রতিনিধি নেই। আর যদিও বা থাকে তারা সরকারের দলদাস। বলায় বাহুল্য যে আমি একমাত্র বাঙালি মুসলিম তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ছিলাম। মাদ্রাসা ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে বারবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই সংখ্যালঘু হিসেবে সম্মান না পেয়ে ওখান থেকে আমি পদত্যাগ করি।
কামাল হোসেন
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ
‘এভাবেই যদি চলতে থাকে আগামী দিনে এর প্রতিফলন ভোট বাক্সে পড়বে’
প্রাইমারি বোর্ডের অ্যাড হক কমিটিতে মুসলমান সদস্যের উপস্থিতি শূন্যতা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাকে আরোও সমুন্নত করতে হলে সমস্ত শ্রেণীর আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব থাকা খুবই দরকার। তবে এই সরকারি কমিটিতে মুসলিম সমাজ থেকে যথাযথ সদস্যের অনুপস্থিতি মুসলিম সমাজের প্রতি সরকারের অবহেলাকেই প্রকট করবে । এভাবেই যদি চলতে থাকে আগামী দিনে এর প্রতিফলন ভোট বাক্সে পড়বে । সরকারের কাছে বিষয়টি পুনঃ বিবেচনার আর্জি জানাচ্ছি ৷
মোনাজাত আলী বিশ্বাস
সভাপতি, প্রোগ্রেসিভ ইন্টেলেকচুয়ালস অফ বেঙ্গল
‘সংখ্যালঘু প্রতিনিধি রাখা আবশ্যিক হোক’
রাজ্য সরকার প্রকৃতপক্ষে সংখ্যালঘুদের যোগ্যতার মূল্য দিচ্ছে না। শিক্ষা পর্ষদে অবশ্যই যোগ্য সংখ্যালঘু প্রতিনিধি রাখা প্রয়োজন। এমন দ্বিচারিতা অবিলম্বে বন্ধ হোক।
সাইদ মামুন
রাজ্য সভাপতি, এসআইও
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct