সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ টেস্টের অনুমতি দিল কলকাতার বিশেষ আদালত।
দিল্লির সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (সিএফএসএল) বিশেষজ্ঞদের একটি দল এই পরীক্ষা চালাবে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। সিবিআই সঞ্জয় রায়ের ডিএনএ ও সাইকোঅ্যানালিসিস রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে।বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের তরফে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়, স্থানীয় পুলিশ ওই স্নাতকোত্তর চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং আরও চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ৮-৯ অগাস্টের মধ্যবর্তী রাতে কর্তব্যরত আরও চার চিকিৎসকের মিথ্যা শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ইতিমধ্যেই সম্মতি দিয়েছে আদালত। সিসিটিভি ফুটেজ এবং চিকিৎসকের মৃতদেহের পাশে পাওয়া একটি ব্লুটুথ ডিভাইসের ফলে রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছিল, যাকে কলেজের সেমিনার হলে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল যেখানে মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল।
সিবিআই হেফাজতের শেষে শুক্রবার ধৃত সঞ্জয় রায়কে শিয়ালদা আদালতে অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে পেশ করা হয়। একইসঙ্গে আদালতে সিবিআই ধৃত সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করানোর আবেদন জানিয়েছিল। আদালত সেই পরীক্ষার আবেদন অনুমোদন করেছে। শুক্রবার দুপুর ১১ টা নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্স থেকে করা নিরাপত্তা বলয় গড়ে ধৃত সঞ্জয় রায়কে নিয়ে যাওয়া হয় শিয়ালদহ আদালতে।
সঞ্জয়ের রায়ের পরনে ছিল একটি লাল গেঞ্জি মাথা এবং মুখ নীল রঙের কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। সঞ্জয় রায় যখন সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বের হচ্ছিল তখন তাকে সাংবাদিকরা একাধিক প্রশ্ন করে। কিন্তু সে কোন উত্তর দেয়নি। এরপর কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের ঘেরাটোপে সঞ্জয় রায়কে নিয়ে যাওয়া হয় শিয়ালদহ আদালতে মোট আটটি গাড়ির কনভয় করে। আদালত ধৃত সঞ্জয় রায়কে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে আরজি কর হাসপাতালে নিহত পড়ুয়ার তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে কলকাতা পুলিশ সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করেছিল। ধৃত সঞ্জয় রায় কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলেন্টিয়ার।
২০১৯ সালে কলকাতা পুলিশে সিভিক ভলান্টিয়ারে যোগ দেন সঞ্জয় রায় (৩৩)। পুলিশের দাবি, অন্তত চারবার বিয়ে করেছেন তিনি। প্রশিক্ষিত বক্সার অভিযুক্ত কয়েক বছর ধরে কয়েকজন সিনিয়র পুলিশ অফিসারের ঘনিষ্ঠ হন, যার পরে তাকে কলকাতা পুলিশ ওয়েলফেয়ার বোর্ডে স্থানান্তরিত করা হয় এবং আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে পোস্টিং দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, হাসপাতালের সেমিনার হলে জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।৯ আগস্ট সকালে হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিভাগের সেমিনার কক্ষ থেকে ওই চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করা হয়। গত ১৩ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্ট কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিল ডাক্তার খুনের মামলায় কতটা অগ্রগতি হয়েছে।
সিবিআই এই মামলায় কতদূর এগিয়েছে তা নিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct