আপনজন ডেস্ক: ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খাটো ফুটবলারদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইনকে এ তথ্য জানিয়েছেন লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জন উইলিয়ামস। ফুটবলবিষয়ক বই ‘ফুটবল নেশন: সিক্সটি ইয়ার্স অব দ্য বিউটিফুল গেম’ লিখে জনপ্রিয়তা পাওয়া উইলিয়ামস বলেছেন, ‘ইংলিশদের খেলায় ইংলিশদের প্রভাব কমে যাচ্ছে। প্রিমিয়ার লিগ আসার আগে ব্রিটেনে স্বকীয় ফুটবলশৈলী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা এখনো খেলোয়াড়দের বুদ্ধিমত্তা, গতি ও চতুরতার চেয়ে স্পষ্টতা ও শারীরিকতাকে সমর্থন করে।’ উইলিয়ামস প্রিমিয়ার লিগের যে তথ্য–উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন, সেখানে দেখা গেছে, ফুটবলারদের উচ্চতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংকুচিত হয়েছে। তাঁর ধারণা, ক্লাবগুলো ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ফুটবলশৈলী থেকে সরে আসাতেই এমনটা হয়েছে।
ইংল্যান্ডের শীর্ষ স্তরের লিগকে ঢেলে সাজানোর পর ১৯৯২ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ নামকরণ করা হয়। প্রথম মৌসুমে খেলোয়াড়দের গড় উচ্চতা ছিল ১৮০.৬ সেন্টিমিটার (৫ ফুট ১১.১ ইঞ্চি)। ২০১১ সাল এটি বেড়েছিল। সে বছর খেলোয়াড়দের গড় উচ্চতা ছিল সর্বোচ্চ ১৮৩.১ সেন্টিমিটার (৬ ফুট ০.০৯ ইঞ্চি)। কিন্তু এর পর থেকে খাটো খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত মৌসুমে ২০ ক্লাবের স্কোয়াডের গড় উচ্চতা ছিল ১৮২.৫ সেন্টিমিটার (৫ ফুট ১১.৮ ইঞ্চি)। উইলিয়ামস আরও জানিয়েছেন, প্রিমিয়ার লিগে বিদেশি খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, রেফারিং পদ্ধতিতে পরিবর্তন ও খেলার ধরনেরও (প্রভাব বিস্তার করে খেলা) দৃশ্যত পরিবর্তন এসেছে। এ ক্ষেত্রে পেপ গার্দিওলার প্রভাব দেখছেন সমাজবিজ্ঞানের এই শিক্ষক।
গার্দিওলার অধীন সর্বশেষ সাত মৌসুমের ছয়বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। তাঁর সূক্ষ্ম ব্র্যান্ডের ফুটবল ও বলের দখলভিত্তিক কৌশলকে কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন উইলিয়ামস, ‘পেপ (গার্দিওলা) ও অন্যদের প্রভাবে খেলার স্বাভাবিক গতি কমে গেছে। খেলাটা এখন অনেকাংশেই বলের দখলভিত্তিক হয়ে উঠেছে। বিদেশি খেলোয়াড়েরা আরও ফিট ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ফলে পুরোনো ব্রিটিশ কৌশলগুলো এতটা স্বতন্ত্র বা কার্যকর মনে হয় না।’ ১৯৯২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে ৫১টি ক্লাব খেলেছে। এর মধ্যে ম্যানচেস্টার সিটি খেলোয়াড়েরা গড় উচ্চতায় তলানির দিক থেকে ১৩ নম্বরে আছেন। দলটির খেলোয়াড়দের গড় উচ্চতা ১৮১.৪ সেন্টিমিটার (৫ ফুট ১১.৪ ইঞ্চি)। বর্তমানে সিটির সবচেয়ে লম্বা খেলোয়াড় আর্লিং হলান্ড। নরওয়েজীয় এই স্ট্রাইকারের উচ্চতা ১৯৫ সেন্টিমিটার (৬ ফুট ৪ ইঞ্চি)। গত মৌসুমে তিনিই ছিলেন লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। পুরুষদের উচ্চতা কমে যাওয়ার ঘটনা শুধু প্রিমিয়ার লিগ খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেই নয়; বৈশ্বিক জনসংখ্যায় ‘ট্রেন্ড’ হয়ে উঠেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়–সমর্থিত তথ্য–উপাত্তের ওয়েবসাইট ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা’ বলছে, যেসব পুরুষ ১৯৮০ সালে জন্মেছেন, তাঁদের গড় উচ্চতা ১৮ বছর বয়সে সর্বোচ্চ ১৭১.৮ সেন্টিমিটার (৫ ফুট ৬.৩ ইঞ্চি) ছিল। তবে ১৯৮০ সালের পর যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের গড় উচ্চতা ১৮ বছর বয়সে গিয়ে কমতে কমতে ১৭১.২৮ সেন্টিমিটারে (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) ঠেকেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct