আপনজন ডেস্ক: রবিবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে নৃশংসভাবে ধর্ষণের পর খুনের শিকার হওয়া কলকাতার শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের বাবা-মা কলকাতা পুলিশ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা রাজ্য প্রশাসনের খারাপ প্রচারের মুখে মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার আপাত প্রচেষ্টা এবং পরবর্তী বিক্ষোভের নিন্দা করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্যাতিতার বাবা ও মা দু’জনেই সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ে সঙ্গে কথা বলার সময় অভিযোগ করেছেন, ‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন দমন করছেন।’মৃত মেডিক-ইন-ট্রেনিংয়ের মা বলেন, ‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ফোন করে বলেছিলেন যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হবে, কিন্তু ‘এখনও পর্যন্ত কিছুই হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত এই ঘটনার সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত। আমি মনে করি পুরো বিভাগ এই ঘটনার জন্য দায়ী...। পুলিশ মোটেও ভালো কাজ করেনি। আমার মনে হয় মুখ্যমন্ত্রী বিক্ষোভ থামানোর চেষ্টা করছেন, আজ তিনি এখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন যাতে মানুষ প্রতিবাদ করতে না পারে।’ কলকাতা পুলিশের উদ্দেশে আরও কড়া ভাষায় তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের সঙ্গে একেবারেই সহযোগিতা করেনি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মামলা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ময়নাতদন্ত করে দেহ বের করার চেষ্টা ছিল তাদের।’ নির্যাতিতার মায়ের কথার প্রতিধ্বনি করে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী ন্যায়বিচার দেওয়ার কথা বলছেন, কিন্তু তারপর ন্যায়বিচারের দাবিতে সাধারণ মানুষকে জেলে ঢোকানোর চেষ্টা চলছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাজে সন্তুষ্ট নই। আমরা কোনও ক্ষতিপূরণ নিতে অস্বীকার করেছি।’
তদন্তে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘যে তদন্ত চলছে তার কোনো ফল আসেনি। আমরা আশা করছি ফলাফল পাব...। বিভাগ বা কলেজের কেউ আমাদের সহযোগিতা করেনি। এর সঙ্গে পুরো বিভাগ জড়িত। শ্মশানে তিনটি দেহ ছিল, কিন্তু আমাদের মেয়ের দেহ প্রথমে দাহ করা হয়...।’
একটি হৃদয় বিদারক বিবরণে, ভুক্তভোগীর মা সংক্ষেপে বর্ণনা করেছিলেন যে কীভাবে তাদের মেয়ের মৃত্যু সম্পর্কে জানানো হয়েছিল এবং তারপরে কী ঘটেছিল। তিনি এএনআইকে বলেন, ‘প্রথমে হাসপাতাল থেকে ফোন আসে যে আপনার মেয়ে অসুস্থ, তারপর কলটি কেটে দেওয়া হয়েছে। এরপর আমি ফোন করে কী হয়েছে জানতে চাইলে তারা আমাকে হাসপাতালে আসতে বলে। আমরা আবার ফোন করলে তিনি নিজেকে সহকারী সুপার পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তিনি বৃহস্পতিবার ডিউটিতে গিয়েছিলেন, শুক্রবার সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে আমরা এই কল পাই। আমরা যখন সেখানে পৌঁছাই, তখন আমাদের তার সাথে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি, আমাদের ৩টায় তাকে দেখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তার প্যান্ট খোলা, শরীরে শুধু এক টুকরো কাপড় ছিল। তার হাত ভেঙে গেছে, চোখ, মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তাকে দেখলেই মনে হবে কেউ তাকে খুন করেছে। আমি তাদের বলেছি, এটি আত্মহত্যা নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। আমরা আমাদের মেয়েকে ডাক্তার বানানোর জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি, কিন্তু তাকে খুন করা হয়েছে।’ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতজুড়ে প্রতিবাদকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন নির্যাতিতার বাবা ও মা। তিনি বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে আমরা সারা দেশের মানুষকে একটি বার্তা দিতে চাই। আমরা সকল দেশবাসী, বিশ্বের মানুষ ও রাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞ, আমাদের অনুরোধ, আসামি ধরা না পড়া পর্যন্ত আপনারা আমাদের পাশে থাকুন। আমরা শুধু চাই, কোনো মায়ের যেন এমনটা না হয়, আমাদের মতো আর কেউ যেন তাদের সন্তানকে না হারায়...।’ নির্যাতিতার মা বলেন, ‘অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে যেন এমনটা না হয়...।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct