দেশের প্রকৃত ইতিহাস দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বাধীনতা যুদ্ধে হিন্দু- মুসলিমের ঐক্যবদ্ধ আত্মত্যাগ ও বলিদান তথা অফুরন্ত তাজা রক্তের বিনিময়ে মুক্তির কথা বললেও বিকৃত ইতিহাসের কবলে তা আজ কলঙ্কিত। জেল খাটা অজস্র মুসলমানের আত্ম বলিদান ও ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলা অসংখ্য মুসলমানের প্রাণের বিনিময়ে আজ ভারত স্বাধীন। ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ এই একশো নব্বই বছরে হাজার হাজার মুসলমান স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রাণপণ লড়াই করেছেন,জীবন দিয়েছেন, জেল খেটেছেন। জেল খাটা ১ কোটি মুসলমানের আত্মত্যাগ ও ফাঁসি হওয়া ৫ লক্ষ মুসলমানের প্রানের বিনিময়ে আজ ভারত স্বাধীন। সেই চেপে যাওয়া ইতিহাসের মুছে যাওয়া অগুণন নাম থেকে যৎসামান্য কিছু নাম অতি সংক্ষেপে পাঠক সম্মুখে তুলে ধরেছেন মহবুবুর রহমান...
আজ (১৫ আগস্ট) মোদের মহান স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতা দিবসের এ পুণ্য লগ্নে কাঙ্ক্ষিত ভাবেই মোদের সবার স্মরণে মননে সেই মহারথীগন, যাঁরা দেশ স্বাধীনের তরে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ, করেছিলেন জীবন দান । যদিও আজ বিকৃত ইতিহাসের কবলে পড়ে বিস্মৃতপ্রায় অগণিত লড়াকু সৈনিক,বীর শহীদগণ। এ এক চরম লজ্জাজনক বাস্তবতা, যা মোদের অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবেই বিশ্ব সভ্যতায় নামাঙ্কিত করবে সুনিশ্চিত। এর তকমা নিরসনে সত্যান্বেষনে মোদের সদর্থক সাবলীল প্রয়াস সময়ের দাবি।
দেশের প্রকৃত ইতিহাস দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বাধীনতা যুদ্ধে হিন্দু- মুসলিমের ঐক্যবদ্ধ আত্মত্যাগ ও বলিদান তথা অফুরন্ত তাজা রক্তের বিনিময়ে মুক্তির কথা বললেও বিকৃত ইতিহাসের কবলে তা আজ কলঙ্কিত। জেল খাটা অজস্র মুসলমানের আত্ম বলিদান ও ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলা অসংখ্য মুসলমানের প্রাণের বিনিময়ে আজ ভারত স্বাধীন। ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ এই একশো নব্বই বছরে হাজার হাজার মুসলমান স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রাণপণ লড়াই করেছেন,জীবন দিয়েছেন, জেল খেটেছেন। জেল খাটা ১ কোটি মুসলমানের আত্মত্যাগ ও ফাঁসি হওয়া ৫ লক্ষ মুসলমানের প্রানের বিনিময়ে আজ ভারত স্বাধীন। সেই চেপে যাওয়া ইতিহাসের মুছে যাওয়া অগুণন নাম থেকে যৎসামান্য কিছু নাম অতি সংক্ষেপে পাঠক সম্মুখে তুলে ধরছি।
মাওলানা কাসেম নানুতবী সাহেব, উত্তর প্রদেশর দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসাকে ব্রিটিশ বিরোধী এক শক্তিশালী কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলেন। যে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় আজও কোরান হাদিসের তালিম ও দেশ প্রেমের মহৎ পাঠ দেওয়া হয়।
হাকিম আজমল খাঁ ছিলেন সর্ব ভারতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট। সেই সময়ের বিখ্যাত চিকিৎসক। দিল্লীর বাইরে গেলে ফি নিতেন সেইসময়ে এক হাজার টাকা। গরীবদের কাছে থেকে কোন পয়সা নিতেন না। কংগ্রেস নেতা হিসেবে জেল খেটেছেন বহু বছর, নেহেরুর চাইতে তো কম না। সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর নামটাও ভারতের ইতিহাসে নেই! এমনকি মওলানা আজাদ যে জেল খেটেছিলেন সেই ইতিহাস ও নেই।আজব তো!
ভারতের ইতিহাসের পাতা ওল্টালে যাদের নাম অবশ্যই পাওয়া যায় তারা হলেন গান্ধীজি, নেতাজী সুভাষ, অরবিন্দ, জহরলাল, মোতিলাল। এদের সমতুল্য নেতা আতাউল্লা বুখারি, মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি, মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি, মাওলানা গোলাম হোসেন প্রমুখ..( তাঁরা বহু বার দীর্ঘ মেয়াদি জেল খেটেছেন)
সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরেলভি-১৭৮৬ খৃষ্টাব্দে রায়বেরেলিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভীষন সাহসী, সুঠাম দেহি ও প্রবল মানসিক শক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি ইংরেজদের পক্ষ থেকে
আহ্বানকৃত সকল লোভ ও পদমর্যাদাকে উপেক্ষা করে আপাতত মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে বৃটিশ বিরোধী জনমত গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। একই সাথে তিনি সকল প্রকার ধর্মীয় কুসংস্কার ও বেদাত দূর করার লক্ষে স্পষ্ট বক্তব্য ও যুক্তি প্রদানের মাধ্যমে মানুষকে জাগিয়ে তুলে সমাজ সংস্কারের কাজও চালিয়ে যেতে থাকেন। এভাবে তৎকালীন ভারতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিপ্লবের ভিত নির্মাণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
হাজি শরীয়তুল্লাহ ও তাঁর পুত্র মহসীন উদ্দীন দুদু মিয়া। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব ছিল ইংরেজ দুঃশাসনের ভীত কাঁপিয়ে দেয়া সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ আন্দোলন। এই বিপ্লবে মুসলিমদের অংশগ্রহণছিল সবচেয়ে বেশি এবং তাঁরাই মুখ্য ভুমিকা পালন করেছিলেন।
ইংরেজ বিরোধী কর্যকলাপের জন্য যার নামে সর্বদা ওয়ারেন্ট থাকতো সেই তাবারক হোসেনের নামও ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না! যিনি তৎকালিন সময়ে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যার সংস্পর্শে আসলে হিন্দু মুসলিম নব প্রাণ পেতেন, সেই হাকিম আজমল খাঁকে লেখক বোধ হয় ভুলে গিয়েছেন।
মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল যার সাহায্য ছাড়া চলতেনই না। যিনি না থাকলে গান্ধী উপাধিটুকু পেতেন না। সেই মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ দেওয়া হল! এ তো ইতিহাসের চরম লজ্জাজনক সংকট।
মাওলানা মহম্মদ আলি ও শওকত আলি। যাঁরা ৫ বার দীর্ঘ মেয়াদী জেল খেটেছেন। ‘কম রেড’ ও ‘হামদর্দ’ নামক দুটি ইংরেজ বিরোধী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তাঁদের নাম ইতিহাসের ছেঁড়া পাতায় জায়গা পায় না! মওলানা মোহাম্মদ আলী ও মওলানা শওকত আলী ইংরেজদের বিরুদ্ধে জনগনকে জাগিয়ে তোলেন এবং আপন আবাসভূমিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলেন।
খাজা আব্দুল মজিদ ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টার হন। জওহরলালের সমসাময়িক কংগ্রেসের কর্মী ছিলেন। প্রচন্ড সংগ্রাম করে তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী উভয়ের জেল হয়। ১৯৬২ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। ইতিহাসের পাতায়ও তাঁদের নামের মৃত্যু ঘটেছে। আফসোস!!!
ডবল এমএ এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রভাবশালী জেল খাটা সংগ্রামী সাইফুদ্দিন কিচলু। অমৃতসরের জালিয়ানয়ালাবাগের যে ম্যাসাকারের কথা আমরা জানি, সেটা কার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে হয়েছিল? সেটা হয়েছিল কংগ্রেস নেতা সাইফুদ্দিন কিচলুর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে। তিনি ছিলেন অতি জনপ্রিয় নেতা। জনতা তাঁর গ্রেপ্তারের সংবাদে ফুঁসে উঠেছিল। জার্মানি থেকে ওকালতি পাশ করে আসা সাইফুদ্দিন কিচলুকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে পাঠানো হয়। জালিয়ানোয়ালাবাগের নাম জানি, সেখানে ম্যাসাকার হয়েছিল সেটা জানি, জেনারেল ডায়েরের কথা জানি যিনি গুলি চালানোর আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু যিনি এই প্রতিবাদের প্রাণপুরুষ ছিলেন সেই ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন কিচলু একদম হাওয়া। অদ্ভুত নয়?
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। বাংলাদেশের সিরাগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেয়া এই ক্ষণজন্মা মানুষটি বুঝতেপেরেছিলেন যে ভারতবর্ষকে ইংরেজদের হাত থেকে মুক্ত করতে হলে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বিকল্প নেই। তাই দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মতাদর্শকে তিনি সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি অসহযোগ আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন।
আব্দুল গাফফার খান। সুদূর উত্তর-পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চলে পশতুন নেতা। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত দল ‘খোদায়ি খিদমাতগার’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর দাস’ এর ছত্রছায়ায় এবং সমতল এলাকায় মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে কংগ্রেসের ছত্রছায়ায় শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন, যা ইংরেজদের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল।
বিপ্লবী মীর কাশেম, টিপু সুলতান, মজনু শা, ইউসুফ, এরা ব্রিটিশদের বুলেটের আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও ইতিহাসের পাতা থেকে নিশ্চিহ্ন হলেন কীভাবে..?আজব না?
সর্ব ভারতীয় নেতা আহমাদুল্লাহ। তৎকালীন সময়ে ৫০ হাজার রুপি যার মাথার দাম ধার্য করেছিল ব্রিটিশরা। জমিদার জগন্নাথবাবু প্রতারণা করে, বিষ মাখানো পান খাওয়ালেন নিজের ঘরে বসিয়ে। আর পূর্ব ঘোষিত ৫০ হাজার রুপি পুরষ্কার জিতে নিলেন! প্রতারক ঐ দেশবিরোধী জগন্নাথবাবু সহ সমূহ বিকৃত মস্তিষ্কের ঐতিহাসিকদের অগণিত ধিক্কার।
মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী। যাকে নির্মমভাবে ফাঁসি দিয়ে পৃথিবী থেকে মুছে দিলো ইংরেজরা। ইতিহাস লেখক কেন তাঁর নাম মুছে দিলেন ইতিহাস থেকে।এ নীচ কর্মে ঐতিহাসিকের হৃদয় কাঁপলো না?
জেল খাটা নেতা ইউসুফ, নাসিম খাঁন, গাজি বাবা ইয়াসিন ওমর খান তাদের নাম আজ ইতিহাসে নেই কেন?
ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পরে, কুদরাতুল্লা খানের মৃত্যু হল কারাগারে। ইতিহাসের পাতায় তার মৃত্যু ঘটল কীভাবে?
নেতাজী সুভাষ বসুর ডান হাত আর বাম হাত যারা ছিলেন ইতিহাসে তাদের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা হলেন আবিদ হাসান, শাহনাওয়াজ খান, আজিজ আহমাদ, ডি এম খান, আব্দুল করিম গনি, লেফট্যানেন্ট কর্নেল, জেট কিলানি, কর্নেল জ্বিলানী, কর্নেল নিজামুদ্দিন প্রমুখ। এদের অবদান লেখক কী করে ভুলে গেলেন?
বিদ্রোহী গোলাম রব্বানী, সর্দ্দার ও হায়দার, মাওলানা আক্রম খাঁ, সৈয়দ গিয়াসুদ্দিন আনসার। এদের রক্ত আর নির্মম মৃত্যু কি ভারতের স্বাধীনতায় কাজে লাগেনি?
বিখ্যাত নেতা জহুরুল হাসানকে হত্যা করলে মোটা অঙ্কের পুরষ্কার ঘোষণা করে ইংরেজ সরকার ।
মাওলানা হজরত মুহানী এমন এক নেতা, যিনি সর্বপ্রথম আওয়াজ তোলেন ব্রিটিশ বিহীন চাই স্বাধীনতা।
জেলে মরে পচে গেলেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী, যিনি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন তাঁর নাম কি ইতিহাসে ওঠার মতো নয়?
হাফেজ মীর নিসার আলি, যিঁনি তিতুমীর নামে খ্যাত, ব্রিটিশরা তার বাঁশের কেল্লা সহ তাকে ধ্বংস করে দেয়। তার সেনাপতি গোলাম মাসুমকে কেল্লার সামনে ফাঁসি দেওয়া হয়।
আমরা গোপন সন্ত্রাসবাদী দল অনুশীলন যুগান্তরের কথা জানি, যেখানে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু ইনকেলাবি পারটির কথা জানিনা। তাঁদের নেতা ছিলেন পালোয়ান শিশু খান। পালোয়ান শিশু খান ইংরেজ বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শাহাদাত বরন করেন। শিশু খান ইতিহাসে কোথাও নেই!
কিংসফোর্ড কে হত্যা করতে ব্যর্থ ক্ষুদিরামের নাম আমরা সবাই জানি, কিংসফোর্ড হত্যাকারী সফল শের আলী বিপ্লবীকে আমরা কেউ জানিনা!!! বীর
বিপ্লবী শের আলীর কথা না বললে আজকের লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের
জন্য তাঁর ১৪ বছর জেল হয়। শের আলী আন্দামানে জেল খাটছিলেন। এমন সময় কুখ্যাত লর্ড মেয়ো আন্দামান সেলুলার জেল পরিদর্শনে
আসে।শের আলী সুযোগ বুঝে বাঘের মতোই রক্ষীদের পরাস্ত করে তাঁর উপরে চাকু হাতে
ঝাঁপিয়ে পড়েন। লর্ড মেয়ো আন্দামান জেলেই শের
আলীর চাকুর আঘাতে মৃত্যু বরণ করে। শের আলীর দ্বিতীয়বার বিচার আরম্ভ হয়। বিচারে ফাসির রায় হয়। শের আলী বীরের শহীদি মৃত্যুবরণ করেনফাঁস্ত্রি কাষ্ঠে। অথচ কি আশ্চর্য, শের আলীর স্থান ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে হয়নি!!! আশ্চর্য!
মহম্মদ আব্দুল্লাহ। যিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নরম্যান কে একাই কোর্টের সিড়িতে অসমসাহসে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করেন ১৭৭১ সালের ২০ শে সেপ্টেম্বর। যে বিচারপতি অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে নিষ্ঠুরভাবে প্রহসনমূলক বিচারে ফাসির আদেশ দিয়েছিলেন । সেই লড়াকু বীর বিপ্লবী মহম্মদ আব্দুল্লাহ ইতিহাসে স্থান পান নাই!!!
বিখ্যাত নেতা আশফাক উল্লাহ। ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিপ্লব পরিচালনা এবং অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ যোগাড় করার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন দেখা দেয়। তাই ১৯২৫ সালের ৯ মার্চ স্টেশন মাষ্টার সাহজানপুর থেকে লখনৌ গার্ড ভ্যানে টাকার বস্তা নিয়ে যাচ্ছে এই খবর পেয়ে হাই কমান্ডের নির্দেশে তিনি ও তার সঙ্গিরা তা ছিনিয়ে নেয়। কাকরি গ্রামের নিকটে এই লুটের ঘটনাটি সংঘটিত হয় বলে ইংরেজ সরকার তাদের বিরুদ্ধে ‘কাকরি ডাকাতি’ নামে মামলা করে। ১৯২৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর তাঁর ফাঁসি হয়। ছয় ফুট লম্বা এই মানবসিংহ হাসতে হাসতে শহীদ হন। ফাঁসির মঞ্চে যাবার সময় তার কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল মুসলিমদের একত্ববাদের মূলমন্ত্র “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”।
বাই আম্মা (আবেদি বেগম): প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী ভ্রাতৃদ্বয় সওকাত আলি ও মহাম্মদ আলির জননী ছিলেন এই মহৎ মহীয়সী রমনী। ১৯২১-এর ডিসেম্বরে তার
সন্তানদের বন্দিত্বের সংবাদ তিনি খুশি মনে গ্রহণ করেন। গুজব ছড়িয়েছিল যে তার পুত্র মহাম্মদ আলি রাজভিক্ষায় জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, তখন তিনি বলেছিলেন- “মহাম্মদ আলি ইসলামের পুত্র, সে কখনোই ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে পারে না। যদি সে এটা করে থাকে, তাহলে আমার বুড়ো হাত
তাকে দমণ করার জন্য যথেষ্ট।’ তিনি নিজে চরকায় কাটা সুতার পোষাক পরতেন এবং অন্যদেরকেও খাদি পরতে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন এবং এটাকে তিনি ঈমাণের অঙ্গ বলে মনে করতেন।
মিসেস জুবাইদা দাউদি। মাওলানা সাফি দাউদির স্ত্রী ছিলেন। তিনি প্রাণপণে ব্রিটিশদের বিরোধীতা করেছিলেন এবং অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন। তিনি তার স্বামী, আত্মীয়-স্বজন এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে সমস্ত বিদেশি জামাকাপড় সংগ্রহ করে কংগ্রেস অফিসে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন জনসমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন এবং মহিলাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করতেন। যখন স্কুল-কলেজের ছাত্ররা সরকারী স্কুল ছেড়ে দিচ্ছিল, তখন মাওলানা সাফি দাউদি একটি স্কুল চালু করেন। জুবাইদা দাউদি সেখানে ছাত্রদের দেখাশোনা করতেন এবং তাদের উৎসাহ দিতেন স্বাধীনতা সংগ্রামে।
এছাড়াও আসগারি বেগম, মাজিরা খাতুন, রাজিয়া খাতুন, জামিরা, লেডি মহাম্মদ সফি, খাদিমা বেগম, বেগম হাবিবুল্লা প্রমুখ মুসলিম নারী স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। পুরুষতান্ত্রীক নীতিহীন সমাজ এইসব মহিয়সী নারীদের তাদের প্রাপ্য মর্যাদা না দিলেও, এদের কাহিনী চেপে রাখতে পারেনি আর সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না।
আল্লামা ফজলে হক খয়রাবাদী। জন্ম ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে। বাড়ী অযোধ্যার খায়রাবাদে, তাই তাকে খয়রাবাদী বলা হয়। তাঁর প্রথম পরিচয় তিনি ভারতের একজন শ্রেষ্ঠ আলেম, বিখ্যাত সাহিত্যিক, কবি ও ঐতিহাসিক। তাঁর গর্বময় দ্বিতীয় পরিচয় হলো, তিনি ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের একজন প্রত্যক্ষ সংগ্রামী। ভারতকে স্বাধীন করতে গিয়ে তিনি বন্দী হন। বিচারের নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তে তার সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয় আর তাকে নির্বাসন দেওয়া হয় কুখ্যাত আন্দামানে।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বীর আব্দুস সুকুর ও আব্দুল্লা মীর এদের অবদান কি ঐতিহাসিকরা ভুলে গেছেন? এই পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাই। দুঃখের বিষয়, স্বাধীন ভারতের সরকারি পাঠ্যবইগুলোতে স্বাধীনতা সংগ্রামী মুসলিম নেতৃত্বের নাম দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হয়! আফসোস!
আজকের এ কলমী সৃজনে তুলে ধরেছি আত্মবলিদান দেওয়া মুসলিম বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী লড়াকু সৈনিকদের সিন্ধু থেকে মাত্র কিছু জলবিন্দু। বাকি রয়ে গেছেন অনেক অগণিত মহান ব্যাক্তিবর্গ। এ কলমীসৃজন বলা যায় অনন্ত সাগর জলের সূচনা বা বৃহৎ নদীমালার মোহনা মাত্র। আশা করি এ ক্ষুদ্র প্রয়াস নব প্রজন্মের সঠিক ও সত্য ঐতিহাসিক জ্ঞান সমৃদ্ধ করণে কিঞ্চিত হলেও সদর্থক সৃষ্টিশীল প্রভাব ফেলবে এবং সত্যান্বেষনে স্পৃহা জাগাবে।সবাইকে শুভ স্বাধীনতা দিবসের অফুরান শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে বহু জাতির মিলনমেলা ভারত হয়ে ওঠুক শান্তি,সুখ, সমৃদ্ধির এক অনন্য কানন। জয় হিন্দ।।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct