নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর, আপনজন: হঠাৎ করে মাখনার দাম কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন হাজার হাজার মাখনা চাষি ও ফড়ে। মাখনার ন্যায্য দাম না পেলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কৃষক ও ফড়েরা। মাখনা ব্যবসায়ীরা নিজেদের মুনাফার স্বার্থে দাম কমিয়ে চাষিদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ। মাখনার ন্যায্য দাম পাওয়ার দাবিতে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার মাখনা চাষি ও ফড়েরা সোমবার বিকেলে হরিশ্চন্দ্রপুরের মহেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে,হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ও ২ ব্লক এলাকায় প্রায় ছয় হাজার একরের বেশি জমিতে এবার মাখনা চাষ হয়েছে। কেউ লিজে জমি নিয়ে ৫০,কেউ ১০০,কেউ আবার ১৫০ বিঘা মাখনা চাষ করেছে। মাখনা তোলার শুরুর দিকে কুইন্টাল প্রতি ত্রিশ হাজার থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা দাম পেয়ে চাষি ও ফড়েদের মুখে হাসি ফুটলেও কয়েকদিনের মধ্যে দাম কমে যায়। ১ আগস্ট থেকে হটাৎ করে মাখনার দাম কমতে শুরু করে। একধাক্কায় ৩৫ হাজার থেকে কমে ২০ হাজার হয়ে যায়। এরপর দাম কমতে কমতে এখন ১৫-১৬ হাজার টাকায় ঠেকেছে। মাখনা চাষিরা কেউ ব্যাঙ্ক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে মাখনা চাষ করেছে,কেউ আবার স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে মাখনা চাষ করেছে। মাখনা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল। এখন দাম কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। ন্যায্য দাম না পেলে আত্মহত্যা ছাড়া কোন উপায় নেই বলে জানান কৃষকরা। যদিও মাখনা ব্যবসায়ী ললিত আগরওয়াল বলেন, বাজারে মাখনার খয়ের দাম কমে গিয়েছে। ১ হাজার টাকা কেজি থেকে কমে ছয়শত কেজি হয়ে গিয়েছে। অপরদিকে এবার হরিশ্চন্দ্রপুরের অত্যধিক পরিমাণে মাখনা চাষ হওয়ায় মাখনার চাহিদাও কমে গিয়েছে। তাই কাচা মাখনার দাম কমে গিয়েছে। এতে অনেক চাষি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের একটি অর্থকরী ফসল হল মাখনা। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে তিন হাজার চাষি মাখনা চাষের সঙ্গে জড়িত। হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় ২ হাজার ফড়ি ইউনিট রয়েছে।
হরিশ্চন্দ্রপুরের জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা তথা ফড়ে তারিকুল ইসলাম বলেন,আমি স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে ও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে এবছর ৫০ বিঘা মাখনা চাষ করেছি। মাখনা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করার কথা আছে। মাখনা ওঠার শুরুর দিকে দাম পেলেও হঠাৎ করে দাম কমিয়ে দিয়েছেন মাখনা ব্যবসায়ীরা। এতে হাজার হাজার চাষি ও ফড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমি কিভাবে লোন পরিশোধ করব তা বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছি। কলহা গ্রামের চাষি নুর ইসলাম বলেন,আমি সুদে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ৪০ বিঘা মাখনা চাষ করেছি। প্রায় ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। এখনো মাখনা তুলতে পারিনি। মাঠে আছে। দাম কমে যাওয়ার ক্ষতির মুখে পড়লাম। কিভাবে এতটাকা পরিশোধ করব তা নিয়ে বড় ভাবনায় পড়ে গিয়েছি। ন্যায্য দাম না পেলে আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct