আপনজন ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে একটি স্কুলে ইসরায়েলের বোমা হামলায় নারী, শিশুসহ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। শনিবার গাজার বেসামরিক জরুরি সংস্থা জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, গাজা সিটির ওই স্কুলে উদ্বাস্তু পরিবারগুলো সাময়িক আশ্রয় নিয়েছিল। ইরান ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তেজনার মধ্যে গাজায় সাম্প্রতিক সময়ে এটা সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, শনিবার ভোরে গাজা নগরীর দারাজ এলাকার আল-তাবিন বিদ্যালয়ে ওই হামলা হয়। ইসরায়েলের তিনটি বোমা বিদ্যালয়ে আঘাত হানে।
এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, স্কুলে হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের দাবি বেসামরিক নাগরিক, স্কুল, হাসপাতাল ও শরণার্থী শিবিরকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর অজুহাত। এসবই মিথ্যা অজুহাত। তাদের করা অপরাধকে ন্যায্যতা দেওয়ার মিথ্যা প্রচেষ্টা।
সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, বোমার আঘাতে লোকজনের শরীর টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। ছবিতে লাশগুলো কেন্দ্র করে আর্তনাদ করতে দেখা যায় স্বজনের। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি। এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, ইরান, কাতারসহ বিভিন্ন দেশ। জর্ডান বলেছে, স্কুলে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটা মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
গাজার গণমাধ্যম দফতরের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতা বলেন, হামলায় ইসরায়েলি বাহিনী ২ হাজার পাউন্ডের তিনটি বোমা ব্যবহার করেছে। বিদ্যালয়টিতে উদ্বাস্তুরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। এটি ইসরায়েলি বাহিনী জানত। এর পরও সেখানে হামলা হয়েছে। হামলার পর বিদ্যালয় ভবনে আগুন ধরে যায়। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, ওই স্কুলে হামাস সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। তবে উত্তর গাজার অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবা বিভাগের পরিচালক ফারেস আফানা বলেন, যাদের লক্ষ্যে পরিণত করা হয়েছে, তাদের সবাই বেসামরিক নাগরিক, নিরস্ত্র শিশু, বয়স্ক ও নারী-পুরুষ।
হামলার নিন্দা জানিয়েছেন অধিকৃত ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রান্সেসকা আলবেনিজ। এক বিবৃতিতে গাজায় রক্তপাত নিয়ে বিশ্বের উদাসীনতারও সমালোচনা করেন তিনি। এক্সে তিনি লেখেন, ইসরায়েল একই সময়ে ফিলিস্তিনের আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির ও ‘সেফ জোনে’ গণহত্যা চালাচ্ছে।
গাজায় অব্যাহতভাবে ইসরায়েল হামলা চালালেও সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে আর এত বড় হামলা হয়নি। ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লিজ্জারিনি ‘চোখের সামনে এ ধরনের ভয়াবহতা’র সমাপ্তি চেয়েছেন। তিনি দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতিরও দাবি জানান। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের অধ্যাপক হাসান বারারি বলেন, বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল গাজা সিটির ওই স্কুলে হামলা শান্তি প্রচেষ্টা ব্যাহত করার ইসরায়েলের চেষ্টার অংশ।
গত ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় গাজায় মৃত্যু ৩৯ হাজার ৭৯০ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ৯১ হাজার ৭০২ জন। গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ২০ লাখেও বেশি। উপত্যকার অধিকাংশ এলাকাই ধ্বংস হয়ে গেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct