আপনজন ডেস্ক: কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক মহিলা জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যায় দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে রবিবার তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। যার প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালগুলিতে।
বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার, হাউস স্টাফ এবং স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থীরাও (পিজিটি) চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে তাদের নিরাপত্তার দাবি জানান।
তারা কেউই রবিবার কাজে যোগ দেননি,। এর ফলে বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ রোগীদের পরিষেবা দিতে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। শুক্রবার সকালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থী এক মহিলা চিকিৎসকের দেহ। সেদিন সন্ধ্যা থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়। শনিবার কলকাতা পুলিশের এক সিভিল ভলেন্টিয়ারকে এই অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়। প্রবল চাপের মুখে রাজ্য সরকার হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট সঞ্জয় বশিষ্ঠকে সরিয়ে দেয়। ডিন অফ স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সকে হাসপাতাল সুপারের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও মৃতের পরিবারের ক্ষতিপূরণের দাবিতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন জরুরি পরিষেবার কাজ বন্ধ করে দেয়।
আরজি কর মেডিক্যাল অ্যান্ড হাসপাতালের আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তার বলেন, আমরা চাই রাজ্য সরকার আমাদের দাবিগুলি পূরণ করুক এবং দোষীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শাস্তি দিক। যতদিন না দাবি মিটছে ততদিন পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ চলবে।
তারা বলেন, চিকিৎসা পেশাজীবীদের, বিশেষ করে যারা এখনও প্রশিক্ষণে রয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা অবশ্যই জরুরি ও তা জোরদার করতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন রবিবার জানিয়েছে, হাসপাতালের কর্মী ও স্নাতকোত্তর ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তাঁদের চার দফা দাবি পূরণ না হলে আর কাজ চালিয়ে যাবেন না রাজ্য সরকার পরিচালিত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিক্যাল পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তাররা।
প্রথম দাবি, সিসিটিভি ফুটেজ, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট-সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে প্রতিবাদী আবাসিক চিকিৎসকদের কমিটির প্রতিনিধিদের কাছে তা পেশ পাশাপাশি অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা।
দ্বিতীয় দাবিটি হল- আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ, মেডিকেল সুপার ও উপাধ্যক্ষ, হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রধান এবং হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির কর্তব্যরত পুলিশ প্রধানকে নিঃশর্ত ক্ষমা ও পদত্যাগ করতে হবে।
তৃতীয় দাবি, অবিলম্বে নির্যাতিতার পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিতে হবে।
চতুর্থ ও শেষ দাবি হল, তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে প্রতিদিন তদন্তের অগ্রগতি প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগের জরুরি বিভাগে কাজ শুরু হবে না বলে তারা জানান।
রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনও সুশীল সমাজকে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রদর্শনের আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এর আগে রবিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর তৎকালীন মেডিক্যাল সুপার-তথা ভাইস প্রিন্সিপাল সঞ্জয় বশিষ্ঠকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। রবিবার বিকেলে আরজি কর হাসপাতালে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসিপিকে দায়িত্ব থেকে সরানোর কথা জানিয়ে দেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মেনে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরিবারকে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তদন্তের বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। আমাদের লুকানোর কিছু নেই। শিক্ষার্থীদের কোনও প্রশ্ন থাকলে তা পুলিশের কাছে জানাতে পারেন।
পীযূষ গোয়েল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, যদি পরিবার চায় তাহলে নিরপেক্ষ তদন্ত করাতে তাদের কোনও সমস্যা নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct