আপনজন ডেস্ক: প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা এখন বিজেপি শাসিত। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অত্যাচারের খবরের রেশ পড়ল ওড়িশায়। যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সে রাজ্যে ফেরি করতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছে। ওড়িশায় পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটির জেলার মুসলিম ফেরিওয়ালাকে মারধর ও নিগ্রহের দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও। (ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি আপনজন।) পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে ওড়িশার নয়া মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝির সঙ্গে কথা বলতে হয়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝিকে ফোন করে রাজ্যের শ্রমিকদের উপর হামলার ঘটনা খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাকে এই ধরনের বেশ কয়েকটা ঘটনার কথা জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বহু মানুষ ওড়িশায় কাজ করতে গিয়েছেন। বাংলাদেশি সন্দেহে স্থানীয়রা তাদের মারধর ও নির্যাতন করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওড়িশায় থাকা রাজ্যের শ্রমিকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসার কথা বলেন। সেই সঙ্গে তাদের উদ্দেশ্যে জানান, তারা যেন নিজ রাজ্যে ফিরে রাজ্য সরকারের পরিযায়ী শ্রমিকদের নানা সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, শনিবারই ওড়িশার খাদগিরি থানার ডুমুডুমা রহমদ এলাকার একটি ঘটনা প্রথম প্রকাশ্যে আসে ৷ ভিডিওতে পশ্চিমবাংলা থেকে যাওয়া মুসলিম ফেরিওয়ালাদের নিগ্রহ করতে দেখা যায়। একই রকম ঘটনা ঘটে আলুগাদি, পানপাদার কাছে এইমস, ইনফোসিটি থানার শিখর চণ্ডিতেও। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায় বীরভূমের নলহাটির বাসিন্দা এক কাপড়ের ফেরিওয়ালা সাইকেলে করে কাপড় ফেরি করছিলেন। সেসময় বেশ কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরে বাংলাদেশি তকমা দেয়। তারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অত্যাচারিতর কথা শোনায়। বলে তোমরা বাংলাদেশে অত্যাচার করছ সেই সময় ওই কাপড়ের ফেরিওয়ালা জানান, তার আধার কার্ড আছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের নলহাটির বাসিন্দা। তখন তারা তা স্বীকার করে বলে, মানছি তোমরা বাংলাদেশি নও, তোমাদের আধার কার্ড আছে। ‘মমতা বুড়ি’ তোমাদের করে দিয়েছে। যদিও নলহাটির ওই ফেরিওয়ালা জানান, প্রায় কুড়ি বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। তাদের বাপ ঠাকুরদারা সবাই পশ্চিমবাংলার। তাকে অবিলম্বে ওড়িশা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয় বলে অভিযোগ।
অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মুহাম্মদ আবুল কাশেম নামে এক প্লাস্টিক দ্রব্যের ফেরিওয়ালাকে মারধর করতে। তারা বাংলাদেশে ‘হিন্দুদের’ উপর অত্যাচার করা হচ্ছে কেন প্রশ্ন তোলে। আবুল কাশেম তার আধার কার্ড দেখিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন তারা ফেরিওয়ালা মাত্র। ভিডিওর দেখা মেলা আধারকার্ড অনুযায়ী মুহাম্মদ আবুল কাশেমের বাড়ি মালদার কালিয়াচক ১ নম্বর ব্লকের যদুপুরের কাশিমনগর গ্রামে। পিতার নাম হাবিবুদ্দিন। তারা প্রায় আটজন ফেরি করতে যান ওড়িশায়। সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে প্লাস্টিক সামগ্রী বিক্রি করে থাকেন। কাশেমের সাইকেল থামিয়ে তার আধার কার্ড দেখে তা বানিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে মমতা ব্যানার্জিকে দায়ী করেন। মমতাকে তারা ‘মমতা বুড়ি’ বলে কটাক্ষ করেন। তারপর তারা কাশেমের কাছে জানতে চায়, কত জন তারা এসেছে। উত্তর পেয়ে সাফ হুঁশিয়ারি দেয়, তাড়াতাড়ি ওড়িশা ছেড়ে চলে যাও। তারপর আধার কার্ডে থাকা ঠিকানা পড়েও তারা বাংলাদেশি কিনা জিজ্ঞেস করে। কাশেম জানিয়ে দেন তারা বাংলাদেশি নন, মালদার বাসিন্দা। তবে বাড়ি যাবেন জানতে চায় তারা। কাশেম জানান, মঙ্গলবার সরাসরি গাড়ি। কলকাতা থেকে তাদের যেতে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে মালদা যেতে।
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায় ছোট বাইকে করে কাপড় ফেরি করতে যাওয়া এক যুবককে বেশ কয়েকজন ঘিরে ধরে জিজ্ঞেসবাদ করছে। তারপর হিন্দুদের উপর বাংলাদেশে অত্যাচার করা হচ্ছে কেন প্রশ্ন তুলে তাকে চড় মারতে থাকে। তাই দেখে তার সঙ্গীরাও যুবকটির বাইকটি লাঠি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে। ওই ভিডিওর চ্যাটে উল্লেখ করা হয় ছেলেটির বাড়ি মুর্শিদাবাদে।
আরও, একটি ভিডিওতে বাইকে করে স্টিলের হাঁিড়, বাসন ফেরি করতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের এক মুসলিম ফেরিওয়ালাকে রাস্তার মাঝে ধরে হেনস্থা করা হয়। প্রথমে জিজ্ঞেস করা হয় তার বাইকের নম্বর প্লেট কোথায়। সেটি দেখানো হলে জিজ্ঞেস করে চোরাই বাইক নয় তো। সেই সঙ্গে বাইকের কাগজ দেখাতে বলা হয়। ফেরিওয়ালা উত্তর দেন, চোরাই বাইক নয়, তার নিজের। কাগজ ঘরে রাখা আছে। চাইলে এনে দেখাতে পারি। তবুও তার কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি তারা। ওড়িশা ছাড়ার কথা বলে ফেরিওয়ালাটিকে কান ধরতে বলে। ভয়ে কান ধরে তবেই নিস্তার পান ওই ফেরিওয়ালা।
অপরদিকে, ওড়িশার ভদ্রকে মুর্শিদাবাদের সুতি থেকে যাওয়া পরিযায়ী মুসিলম শ্রমিকরা আক্রান্ত হওয়ায় তারা সেখানে ঘরবন্দি। ঘরবন্দি অবস্থায় ফেসবুকে তাদেরকে উদ্ধার করে সুতির বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তারা।
তবে, ওড়িশায় ফেরি করতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিগ্রহ করা আরও কিছু ভিডিও সোশ্যাল ঘোরাফেরা করলেও তার সত্যতা যাচাই করেনি আপনজন।
ওড়িশায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ফেরিওয়ালাদের নিগ্রহের খবর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে পৌঁছে যাওয়ায় এবং তিনি ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করায় নড়ে চড়ে বসেছে ওড়িশা পুলিশ। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ভুবনেশ্বরের ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে সেখানকার নাগিরকদের সতর্ক করেছেন। তার দাবি, পুলিশ সব থানার উপর নজর রাখছে ৷ কোথাও এই ধরনের ঘটনা নজরে এলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ তিনিও জানিয়েছেন কোনওভাবে আইন হাতে তুলে নিলে, তা মেনে নেওয়া হবে না। সাধারণ মানুষকেও আইন মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct