জয়দেব বেরা, আপনজন: চিকিৎসকদের মনে করা হয় স্বয়ং ঈশ্বরের স্বরূপ। আর চিকিৎসা কেন্দ্র হল সেই সমস্ত ঈশ্বরের আশ্রয়স্থল তথা স্বপ্নের জায়গা, আবেগের জায়গা, ভালোবাসার স্থান, কর্তব্য ও শৃঙ্খলা পালনের স্থান। চিকিৎসা কেন্দ্র যদি একটা পুরো শরীর হয় তাহলে চিকিৎসকরা হল সেই শরীরের হৃৎপিণ্ড ও প্রাণবায়ু। তাইতো সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মীরা এখানে নিজেকে পরিবারের থেকেও খুব সুরক্ষিত মনে করেন। যার দরুন, পরিবারের সদস্যরাও নিশ্চিন্তে বাড়িতে থাকেন। এর জন্য মনে করা হয়, চিকিৎসকের সঙ্গে চিকিৎসা কেন্দ্রের এক নিবিড় প্রাথমিক বন্ধন ও সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু যে ঘটনাটি এই বিষয়টিকে মিথ্যে প্রমাণ করেছে তা হল কলকাতার আরজিকর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা।
খবর সূত্রে জানা যায়, আরজিকর হাসপাতালের একজন তরুণী চিকিৎসক কর্মরত অবস্থায় রাতে ওই হাসপাতালের চতুর্থ তলার একটি সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন। তিনি জানতেন তিনি পরিবারের থেকেও এখানে বেশি সুরক্ষিত রয়েছেন। তাই তিনি হয়তো কোনো নেতিবাচক চিন্তা কল্পনাই করতে পারেননি। কারণ সে একবুক বিশ্বাস ও ভরসা করতো এই চিকিৎসা কেন্দ্রকে। খবর সূত্রে জানা যায়, ওই দিন ভোরে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে। তবে এই মৃত্যু সাধারণ নয়, এই মৃত্যু প্রকৃতির নিয়মেও নয়, এই মৃত্যু বিধাতার নিয়মেরও বাইরে। এই মৃত্যু খুব বেদনাদায়ক, খুব মর্মান্তিক, খুব কষ্টের। খবর সূত্রে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, আরজিকর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে ধর্ষণ এবং খুন এর জন্য। রাত ৩ টে থেকে সকাল ৬ টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। তরুণী চিকিৎসকের গলার একটি হাড়ও ভেঙে গেছে। তাই প্রাথমিক অনুমান, গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই তরুণীকে। শরীরের মোট দশ জায়গায় ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। এমনকি যৌনাঙ্গেও রক্ত পাওয়া গিয়েছে বলে খবর সূত্রে জানা যায়। তারপর অর্ধনগ্ন অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল ওই তরুণীর দেহ। চার তলার ওই সেমিনার হলের কাছে কোনও নিরাপত্তারক্ষীও ছিল না বলে জানা গিয়েছে। চিকিৎসকের মৃতের পরিবারের তরফ থেকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগও তোলা হয়েছে।
যদিও ইতিমধ্যে এই বিষয়টিকে নিয়ে তদন্ত চলছে কিন্তু তবুও কিছু প্রশ্ন মনে জাগে, এ কেমন সমাজ? এ কেমন দেশ? এ কেবল বিচিত্র রাজ্য? যেখানে চিকিৎসা কেন্দ্রের মধ্যেও স্বয়ং ঈশ্বর তথা চিকিৎসক খুন হয়। যেখানে জীবন প্রদান করা হয়, সেখানেই জীবন নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সত্যি!কী মর্মান্তিক, কী দুঃখময় নরকীয় ঘটনা। প্রমাণ হয়ে গেলো ধর্ষণ কেবল রাস্তায় নয়, শিক্ষা কেন্দ্রে, পরিবারে এমনকি স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও হচ্ছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও এই পিশাচ গুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে সবার অজান্তে। একজন নিষ্পাপ, ঈশ্বর রুপি তরুণী চিকিৎসককে নরপিশাচ গুলো ধর্ষণ করে খুন করে ফেলেছে। ভাবলেই শরীরের লোম গুলো কেঁপে যাচ্ছে, বজ্রের মতো হৃদয়ও কম্পিত হয়ে যাচ্ছে। এও কি সম্ভব? যেখানে এত সুরক্ষা থাকার কথা সেইখানেই কোনো সুরক্ষা নেই, কোনো বিশ্বাস ও ভরসা নেই। নারীরা কী তাহলে ব্যক্তিপরিসরে ও গণপরিসরে সর্বদা এইভাবেই ধর্ষিত হয়ে যাবে? তাহলে কিসের সংবিধান? কিসের নারী অধিকার? কিসের এত নারী আন্দোলন? কিসের স্বাধীনতা? ভাবতেও অবাক লাগে হাসপাতালের মধ্যে কর্মরত অবস্থায় কি করে একটি তরতাজা একটা প্রাণ হারিয়ে যেতে পারে, তাও আবার ধর্ষণের কালো অভিশাপে। ছিঃ!ছিঃ! ধিক্কার জানাই এই সমাজকে, ধিক্কার জানাই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষদের, ধিক্কার জানাই দেশ তথা রাজ্যের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে, ধিক্কার জানাই ধর্ষক তথা নরপিশাচদের। এই পিশাচ গুলো কেবল যৌনতার নেশায় আসক্ত হয়ে নারীদেরকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে তাদের রক্ত ও দেহ ভোগ করে থাকে। এদের মৃত্যুদণ্ড চাই। তার পাশাপাশি চাই সঠিক বিচার ও চাই সঠিক ঘটনার তদন্ত।
তরুণী চিকিৎসক এর মৃত্যু যে শিক্ষা দিয়ে গেল তাহল -
“নরপিশাচ গুলো সাদা বেশে
ঘুরছে সবার আড়ালে;
হে নারী মনে রেখো, ধর্ষণ ও খুন হয় চিকিৎসা কেন্দ্রের চার দেওয়ালে!”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct