নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: আমাকে ফাঁসি দিয়ে দিন। আরজিকর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায় এই কথা বলেন। এদিকে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে রাতের খাবার খাওয়ার ৩ থেকে ৪ ঘন্টার মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। খুব বেশি হলে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে। সূত্র মারফত পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার দিন রাতে বারোটার সময় মৃত পড়ুয়া তরুণী চিকিৎসক রাতের খাবার খেয়েছিলেন। সেই সময় চারজন জুনিয়র ডাক্তার ছিলেন। জোমাটো থেকে খাবার অর্ডার করেছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে ভোর রাত তিনটের সময় ঘুমোতে গিয়েছিলেন ওই ছাত্রী। ঘুমানোর সময় সে লাল রঙের ব্ল্যাংকেট গায়ে দিয়েছিলেন। যা কিছু ঘটার ভোর রাত তিনটের পর ঘটেছে। কে তাকে ডেকে ঘুম থেকে ওই সেমিনার হলে নিয়ে গেল তা জানতে পাঁচটি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যে বাকি তিন থেকে চারজন ছিলেন তাদের প্রত্যেকের বক্তব্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। ভোর চারটে থেকে পরবর্তী পয়ত্রিশ মিনিটের মধ্যে সমস্ত ফুটেজ বারবার খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সিসিটিভির ভোটে যে দেখা গেছে ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায় যাবার সময় তার ব্লুটুথ হেডফোন ছিল। কিন্তু সে যখন ওই বিল্ডিং থেকে ফিরে আসছে তখন তা ছিল না। ময়নাতদন্তে রিপোর্টে আরো জানা গেছে ওই ছাত্রীর মৃত্যুর পরেও তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। এদিকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত কুমার গোয়েল শনিবার দুপুরে লাল বাজারে সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেন গ্রেপ্তার হওয়া সঞ্জয় রায় এই ঘটনায় যুক্ত রয়েছেন বলে পুলিশ মনে করছে। এটি এমন একটি ঘৃণ্য অপরাধ যাতে অপরাধীরা কঠিন শাস্তি পায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে কলকাতা পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু বলা সম্ভব নয় তবে সময় যত এভাবে আরও তথ্য সামনে আসবে বলে কলকাতার পুলিশ কমিশনার দাবি করেন। পুলিশ কমিশনার জানান, শুক্রবার আরজিকর হাসপাতাল থেকে ঘটনাটি জানানো মাত্র স্থানীয় থানা ঘটনাস্থলে যায় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলিকে অতি দ্রুত ডেকে নিয়ে এসে তদন্ত শুরু করা হয়।
শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ প্রথম আরজিকর হাসপাতালের পক্ষ থেকে কলকাতা পুলিশকে জানানো হয় চেস্ট ডিপার্টমেন্টে এক মহিলা চিকিৎসকের মৃতদেহ পড়ে আছে। শনিবার লালবাজারে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানান কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত কুমার গোয়েল তিনি বলেন, ওই ছাত্রীর ময়না তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। গোটা পোস্টমর্টেমটি ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। এরপর কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে সাতজনের একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় ।ওই কমিটিতে ডিসিডিডি (স্পেশাল) এবং টালা থানার অফিসার ইনচার্জকে রাখা হয়। এই ঘটনা তদন্তে নেমে একজনকে ওই ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে শনিবার আদালতে পেশ করা হয় । এই ঘটনায় যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেখানে হাসপাতালে ঘটনাস্থল এর কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এবং যেখানে ওই ছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল তার কাছে পাওয়া কিছু এভিডেন্সের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাউকে না জানিয়ে ওই ছাত্রীর মৃতদেহ শুক্রবার রাতে কলকাতা পুলিশ বের করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠছে। এই প্রসঙ্গে কলকাতার পুলিশ কমিশনার দাবি করেন যখন ওই ছাত্রীর মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তখন তার পরিবারের সদস্যরা সেখানে ছিলেন এবং সাংবাদিকরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ কমিশনার দাবি করেন সারারাত ধরে এই ঘটনায় তদন্ত হয়েছে এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় যখন ময়নাতদন্ত হচ্ছিল সেই সময় সাক্ষী হিসেবে ছাত্রদের সেখানে রাখা হয়েছিল। এই ঘটনায় খুন ও ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছে বলে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। গোটা ঘটনাটি এখন সবেমাত্র প্রথম পর্যায়ের তদন্তের মধ্যে রয়েছে। তাই এখনই এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়। ঘটনার পর মাত্র চব্বিশ ঘন্টা কেটেছে। এখনই সমস্ত বিষয়টি প্রকাশ্যে বলা সম্ভব নয়। এই ঘটনাটি যেহেতু একটি ভিন্ন অপরাধ তাই সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে হয় সেটা কলকাতা পুলিশ দেখবে। যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার নাম সঞ্জয় রায়। সে এই ঘটনায় অপরাধী বলে পুলিশ মনে করছে। ধৃত অপরাধী যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি পায় তা দেখবে কলকাতা পুলিশ। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে এই সঞ্জয় রায়ের মোবাইল ফোনের ব্লুটুথ এর সেরা অংশের সূত্র ধরে তাকে পুলিশ শুক্রবার রাতে প্রথমে টালা থানায় নিয়ে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ জেরা। এরপর ভোররাতে অসংলগ্ন কথাবার্তা দরুন গ্রেফতার করা হয়। একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার এর প্রসঙ্গ নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত কুমার অয়েল জানান এখনই এই ঘটনার সবকিছু প্রকাশ্যে বলা সম্ভব নয়। তদন্ত চলছে আরও বেশ কিছু তথ্য সামনে আসবে খুব শীঘ্রই। কলকাতা পুলিশ এই খুনের দ্রুত কিনারা করবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct