আপনজন ডেস্ক: গাজা সিটিতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নেওয়া একটি স্কুলে ইসরায়েলের বোমা হামলার নিন্দা জানিয়েছে মুসলিমবিশ্ব। আল-দারাজ এলাকায় আল-তাবাঈন স্কুলে ফজরের নামাজ পালনরত ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে এ হামলা হয়। এতে প্রায় ১০০ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ হামলার নিন্দা করেছে এবং চলমান যুদ্ধ শেষ করার জন্য তেল আবিবের বিরুদ্ধে ‘বাস্তবিক উদ্দেশ্যের অভাব’ বলে অভিযোগ করেছে। হামলাটি ‘আন্তর্জাতিক ও মানবিক আইনের নির্লজ্জ অবহেলা’ উল্লেখ করে মন্ত্রক আরো বলেছে, ‘যখনই যুদ্ধবিরতির আলোচনার প্রচেষ্টা দৃঢ় হয় তখনই ক্রমাগত বড় আকারের হামলা ও বেসামরিক হতাহতের উচ্চ সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।’ সেই সঙ্গে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানো নিশ্চিত করতে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির দিকে কাজ করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে মিসর। অন্যদিকে জর্দানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুফিয়ান কুদাহও ইসরায়েলের ক্রমাগত ‘আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নিয়ম লঙ্ঘনের’ জন্য তার দেশের নিন্দা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এসব হামলা এমন সময় আসে যখন মধ্যস্থতাকারীরা জিম্মি বিনিময় চুক্তির জন্য আলোচনা ফের শুরু করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে পরিচালিত করতে পারে।
এই প্রচেষ্টাকে বাধা দেওয়ার ও দুর্বল করার জন্য ইসরায়েলি সরকারের অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দেয় হামলাগুলো। মুখপাত্র ইসরায়েলের ‘আন্তর্জাতিক আইনের চলমান লঙ্ঘন’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘যারা নৃশংসতার জন্য দায়ী তাদের জবাবদিহি করতে হবে।’ সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আল-তাবাঈন স্কুলে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হামলার নিন্দা করেছে। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় ‘গাজা উপত্যকায় গণহত্যা বন্ধ করার জরুরি প্রয়োজনের’ ওপর জোর দিয়েছে এবং ‘ইসরায়েলকে তার অপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তার’ নিন্দা করেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ স্কুলে ইসরায়েলি বোমা হামলাকে ‘প্রকাশ্য আগ্রাসন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও আমাদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি, ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা ও ফিলিস্তিনে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসরায়েলি নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা বাহিনীকে বিচারের আওতায় আনা হোক।’
ইরাকও ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছে। ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চলমান এই হামলাগুলো আন্তর্জাতিক নীতি ও চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এগুলো গাজায় যুদ্ধবিরতি অর্জনের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার প্রতি ইসরায়েলের উপেক্ষাও প্রদর্শন করে।’ মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, বিশেষ করে মুসলিমবিশ্বের প্রতি ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করতে দৃঢ় অবস্থান নিতে’ আহ্বান জানিয়েছে।
আল-তাবাঈন স্কুলে বোমা হামলার ফলে গত সপ্তাহে গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে মোট স্কুলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয়। বৃহস্পতিবার মিসর, যুক্তরাষ্ট্র, কাতারসহ মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে শত্রুতা বন্ধে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তির আবেদন সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় তার মারাত্মক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের আন্ত সীমান্ত হামলার পর গত অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৩৯ হাজার ৮০০ মানুষ নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। রায়ে অবিলম্বে দক্ষিণের শহর রাফাতে সামরিক অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেখানে ৬ মে আক্রমণের আগে ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি যুদ্ধ থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছিল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct