আপনজন ডেস্ক: কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৩১ বছরের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন ও খুনের ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। নগর আদালতের নির্দেশে আসামিকে ১৪ দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় মেডিকেলের ছাত্ররা মিছিল করেছে, ঘটনার নিন্দা করেছে এবং সমস্ত হাসপাতালে যথাযথ সুরক্ষার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে যাতে চিকিৎসকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। এতে দিনভর রোগী সেবা ব্যাহত হয়।
প্রাথমিক ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে খুন হওয়ার আগে নির্যাতিতাকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কথায়, অভিযুক্ত বহিরাগত ছিল, যার হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল। তার কার্যকলাপ বেশ সন্দেহজনক এবং সে সরাসরি অপরাধের সাথে জড়িত বলে মনে হচ্ছে।
আক্রান্ত জুনিয়ন ডাক্তার পালমোনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার সম্ভাবনাও নাকচ করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, টালা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোর ৩টে থেকে ৬টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে।
এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, এটা অবশ্যই আত্মহত্যার ঘটনা নয়, যৌন হেনস্থার জেরেই খুন হয়েছেন ওই মহিলা। চার পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শরীরের নানাঅংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার চোখ ও মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, মুখ ও নখের ওপর আঘাতের চিহ্ন ছিল। নির্যাতিতার গোপনাঙ্গ থেকেও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
এছাড়া তার পেট, বাম পা, ঘাড়, ডান হাত, অনামিকা ও ঠোঁটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ক্যামেরায় ধারণ করা ময়নাতদন্তের সময় দুই নারী প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই নিহত জুনিয়র ডাক্তারের মা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, তার ঘাড়ের হাড়ও ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে প্রথমে শ্বাসরোধ করা হয়। পরে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আমরা ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি, যা অপরাধীদের শনাক্ত করতে আমাদের সহায়তা করবে।
এই ঘটনার তদন্তের জন্য কলকাতা পুলিশ হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের সদস্যদের নিয়ে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছে।
এর আগে সকালে সরকারি হাসপাতালের সেমিনার হলে ওই নারীর অর্ধ নগ্ন লাশ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার রাতে ডিউটিতে ছিলেন নিহত জুনিয়র ডাক্তার।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভিতরে তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, রাত ২টার দিকে জুনিয়রদের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছিলেন তিনি। এরপর তিনি সেমিনার কক্ষে যান, যেহেতু একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আলাদা অন কল রুম নেই। সকালে আমরা সেখান থেকে তার লাশ পাই। বৃহস্পতিবার রাতে তার সঙ্গে কর্তব্যরত পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্বাস্থ্য সচিব এনএস নিগম এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। চিকিৎসকের মৃত্যুর তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই মহিলার বাবা-মাকে ফোন করে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সিপিএমের ছাত্র ও যুব শাখা যথাক্রমে এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই জানিয়েছে, তারা এই হত্যার প্রতিবাদে শনি ও রবিবার পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পথ অবরোধ করবে।
এদিকে, দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পিজিটি চিকিৎসকরা জরুরি বিভাগ ছাড়া সব বিভাগের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনও তার মৃত্যুর দ্রুত তদন্তের দাবিতে মিছিল বের করে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct