মোল্লা মুয়াজ ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: বর্ধমানের জামাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করলেন । বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার স্থলাভিষিক্ত হলেন । পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস । বাংলাদেশের এক কঠিন সময়ে পলাতক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার জায়গায় বসলেন বিশ্ব বিজয়ী প্রফেসর ইউনুস । সারা পৃথিবী থেকে তিনি এত সম্মান পেয়েছেন তার জায়গায় এরকম ব্যক্তি খুব কমই আছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি সম্মান নোবেল পুরস্কার, আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ড, মার্কিন কংগ্রেশনাল অ্যাওয়ার্ড সহ ১২৪টির বেশি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সারা বিশ্বের দরিদ্র মানুষদের দিশা দেখিয়েছেন। জীবনে চলার পথে কারো কাছে মাথা নুয়ান নি । এইজন্য তিনি বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বিরাগ ভাজন হন। হাসিনা তাকে জেলে পাঠাতে কুণ্ঠিত বোধ করেননি। তিনি জেল খেটে এসে বলেছিলেন যে বিনা অপরাধে যে জেল খাটলেন সেই জন্য এটা তার লজ্জার থেকে বেশি জাতির লজ্জা । সেই প্রফেসার ডঃ মোঃ ইউনুসকে বাংলাদেশের এক উত্তাল সময়ে কঠিন পরিস্থিতিতে হাল ধরার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের ছাত্ররা তাতে তিনি সম্মতি প্রকাশ বাংলাদেশের দায়িত্ব নিলেন । প্রফেসর ডঃ মোঃ ইউনূস পৃথিবীর এমনই বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব যার সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকেন পৃথিবী বিখ্যাত ফুটবলার মেসি, রোনাল্ডো থেকে বিশ্বের উন্নত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা। তাকে ফোনে করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ,ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, জার্মানির প্রধানমন্ত্রী, ফরাসি প্রেসিডেন্ট সহ পৃথিবীর একশোর বেশি রাষ্ট্র প্রধানেরা। তার সঙ্গে পরামর্শ চান দেশের উন্নয়নের জন্য। এরকম একটি মহান ব্যক্তি বাংলাদেশের জন্মগ্রহণ করলেও তার শ্বশুরবাড়ি ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্তমান পূর্ব বর্ধমানের লস্কর দিঘী এলাকায় । কার্জন গেটের গা ঘেঁসে লস্কর দীঘি এলাকাতেই ছেলের সঙ্গে থাকতেন প্রফেসর ইউনুসের স্ত্রী ড. আফরোজি বেগমের মা তথা ইউনুসের শাশুড়ি সিতারা বেগম। ছেলে আসফাক হোসেনের সঙ্গে থাকতেন। সিতারা বেগম বর্তমানে তিনি গত হয়েছেন। নিজের দশ ছেলে মেয়ে প্রায় সবাই এখন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত।
১৯১৮ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে বর্ধমান শহরে নজর কেড়ে ছিলেন মহম্মদ হোসেন। পেশায় ছিলেন বর্ধমান আদালতের পেশকার। যথেষ্ট কষ্টের সঙ্গে নিজের দশ সন্তানকে শিক্ষিত করেছিলেন মহম্মদ হোসেন। ছেলে মেয়েদের শিক্ষা ও তাদের প্রতিষ্ঠা চোখে পড়ার মতো।প্রথম সন্তান আনিসূল হোসেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বোর্ডের প্রধান বাস্তুকার ও বোর্ড মেম্বার হয়ে ছিলেন । দ্বিতীয় সন্তান আলতাফ হোসেন নিউইয়র্কে এক বড় চাকরি করতেন । তৃতীয় সন্তান আসফাক হোসেনই রয়ে গেছেন বর্ধমানে। নিজ উদ্যোগে বর্ধমানে একটি সুপার মার্কেট চালান। চতুর্থ সন্তান ফিরোজি বেগম বাংলাদেশের একটি কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপিকা।
পঞ্চম সন্তান চিকিৎসক, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ। ষষ্ঠ আফরোজি বেগম জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিদ্যার অধ্যাপিকা ছিলেন । সপ্তম সন্তান ফিরদৌসী বেগম লন্ডনে একটি স্কুলে পড়ান। বাকিরা অকালে মারা গেছেন। ইউনূস সাহেবের স্ত্রী আফরোজি বেগম বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে স্নাতক হন। এরপর বাংলাদেশে বড় ভাইদের কাছে চলে যান। যেখান থেকে পিএইচডি করতে লড়ন।
বছর ২০ আগে দিল্লি থেকে ফেরার পথে বর্ধমানের শ্বশুরবাড়ি এসেছিলেন প্রফেসর ডঃ ইউনুস । তারপর আর আসা হয়নি তাদের।
আসফাক হোসেন জানিয়েছিলেন দুলা ভাই দিল্লির সেমিনার থেকে ফেরার পথে বর্ধমানে বাড়িতে একরাত ছিলেন। পরেরদিন অগ্নি বীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর টিকিট কাটতে চাইলে তিনি বাধা দেন। তিনি বলেন সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে সাধারণ কামরাতে যাব। সবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে চলে যাব। আসলে মাটির কাছাকাছি মানুষের মধ্যে তিনি একজন। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ডঃ মোঃ ইউনুস কে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের দরকার বাংলাদেশের কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি দেশের হাল ধরে দেশের উন্নয়ন যোগ্যে সামিল হতে পারবেন বলে সমস্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন । স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং নারী-পুরুষ সাধারণ মানুষ দাবি করছেন বেহাল বাংলাদেশের কান্ডারী হতে পারবেন ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct