আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি (তফসিলি জাতি ও উপজাতি ব্যতীত) আইনের অধীনে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা ৭৭টি সম্প্রদায়কে বাতিল ঘোষণা করা কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আর্জির শুনানিতে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নোটিশ জারি করে। মামলাটি উঠেছিল প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে যার মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্র। বেঞ্চ রাজ্যকে ৭৭টি সম্প্রদায়কে ওবিসি হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য অনুসৃত প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে একটি হলফনামা দাখিল করতে বলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। ওই হলফনামায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানাতে হবে সমীক্ষার প্রকৃতি ও ওবিসি হিসাবে মনোনীত ৭৭টি সম্প্রদায়ের তালিকায় সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের বিষয়ে অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের সাথে পরামর্শের অভাব ছিল কিনা। এর পাশাপাশি, আদালত আরও জানতে চায়, ওবিসিগুলির উপ-শ্রেণি বিন্যাসের জন্য রাজ্য কোনও পরামর্শ করেছে কিনা এবং গবেষণার প্রকৃতি স্পষ্ট করে দিয়েছে কিনা।
গুরুত্বপূর্ণ এই মামলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে মাত্র একজন আইনজীবীকে সওয়াল করতে দেখা যায়। তিনি হলেন ইন্দিরা জয়সিং। অথচ, ওবিসি বাতিলের পক্ষে মামলাকারীদের হয়ে বেশ কয়েকজন নামজাদা আইনজীবী সওয়াল করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, মুকুল রোহতগি, বংশারি স্বরাজ, পিএস পাটওয়ালিয়া প্রমুখ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই গা ছাড়া ভাব নিয়ে রাজ্যের সংখ্যালঘু মহলে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সংখ্যালঘু মহল থেকে ওঠা প্রশ্নে বলা হয়, কলকাতা হাইকোর্টে ওবিসি বাতিলের মামলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে কোনও প্রবীণ বা ভাল অাইনজীবীকে সওয়াল না করায় ওবিসি বাতিলের পক্ষে রায় দেয় আদালত। এবার সুপ্রিম কোর্টেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার হেভিওয়েট আইনজীবী দাঁড় না করিয়ে সেই পথ অনুসরণ করছে বলে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এসএসসি দুর্নীতি থেকে শুরু করে নানা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলায় কপিল সিব্বাল কিংব অভিষেক মুন সিংভির মতো জাঁদরেল আইনজীবীকে নিয়োগ করলেও ওবিসি মামলায় তা করা হচ্ছে না। এটা সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য বলে অভিযোগ তোলা হয়।
এবার সেই দাবি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কমান্ড সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখল রাজ্যের মুিসলিম বুদ্ধিজীবীদের সম্মিলিত সংগঠন ‘প্রগ্রেসিভ ইন্টেলেকচুয়ালও অফ বেঙ্গল’ বা ‘পিআইবি।’
‘প্রগ্রেসিভ ইন্টেলেকচুয়ালn অফ বেঙ্গল’-এর সভাপতি অধ্যাপক ড. মানাজাত আলি এই মর্মে মঙ্গলবার চিঠি লিখেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। চিঠিতে রাজ্য সরকারের পক্ষে ভাল আইনজীবী দাঁড় না করালে মামলায় হারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ওই সংগঠনের পক্ষে চিঠিতে তাই ‘ওবিসি সংরক্ষণ মামলায় সুপ্রিমকোর্টে ভালো উকিল নিয়োগ’ করার আবেদন জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘দীর্ঘদিন বামশাসনে করালগ্রস্ত বাংলার মুসলিম সমাজ ভারতবর্ষের অন্যতম পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে মুসলিম সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে। পশ্চাদপদ মুসলিমদের একটি অংশকে রিজার্ভেশন দেওয়ার কারণে মুসলিম সমাজে ধীরে ধীরে সরকারি চাকরি-বাকরিতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। হাইকোর্টের রায়ের পর মুসলিম সমাজ খুবই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। গত ৫ই আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে শুনানিতে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ইন্দিরা জয়সিং জি-কে নিয়োগ করা হয়েছিল। যদিও বিপক্ষে তরফ থেকে এক ঝাঁক সিনিয়র এবং সর্বোচ্চ মানের অ্যাডভোকেট নিয়োগ করা হয়। এমতাবস্থায় এই মামলায় রাজ্য সরকারের জেতার আশা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে। তার সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে প্রায় তিন কোটি জনসংখ্যার মুসলিম সমাজে। রাজ্য সরকারের কাছে আমাদের বিশেষভাবে আবেদন, আগামী হেয়ারিংয়ে অভিষেক মনু সিংভি, কপিল সিব্বাল প্রমুখের ন্যায় প্রথম সারির অ্যাডভোকেটদের সুপ্রিম কোর্টে নিযুক্ত করা হোক এবং এই মামলায় জয় পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ স্তরের চেষ্টা করা হোক। সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগ ও অ্যাডভোকেটের ব্যবস্থাপনা মুসলিম সমাজের মধ্যে ভয়ংকর অবিশ্বাস ও অনাস্থার জন্ম দিচ্ছে। এই অনাস্থার প্রতিফলন কোনওভাবে নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছে গেলে ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত মজবুত হবে। বিষয়টার গুরুত্ব অনুধাবন করে আপনার কাছে আমাদের বিশেষ অনুরোধ সর্বোচ্চ মানের একাধিক অ্যাডভোকেট নিয়োগ করে এই মামলায় জেতার জন্য সব রকমের চেষ্টা করা হোক।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct