২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে তৃণমূল একটিও আসনে জয়লাভ করেনি। একমাত্র দক্ষিণ মালদা আসন থেকে গণি খান চৌধুরীর ভাই আবু হাশেম খান চৌধুরি জয় লাভ করেছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে। আবার ২০২৪ সালের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের আসন বৃদ্ধি হয়েছে। একমাত্র কোচবিহার আসনে তৃণমূল কংগ্রেস ও দক্ষিণ মালদা আসনে গণি খান চৌধুরীর ভাইপো ঈশা খান জয় লাভ করেছেন। ধারাবাহিক ভাবে ২০১৯ সাল থেকে বিজেপির দখলে উত্তরবঙ্গ। তারা কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকলে উত্তরবঙ্গে উন্নয়ন দূর অস্ত । লিখেছেন ড: মুহাম্মদ ইসমাইল।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে তৃণমূল একটিও আসনে জয়লাভ করেনি। একমাত্র দক্ষিণ মালদা আসন থেকে গণি খান চৌধুরীর ভাই আবু হাশেম খান চৌধুরি জয় লাভ করেছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের আসন বৃদ্ধি পেলেও উত্তরবঙ্গে তেমন ভাবে সুবিধা করতে পারেনি। একমাত্র কোচবিহার আসনে তৃণমূল কংগ্রেস ও দক্ষিণ মালদা আসনে গণি খান চৌধুরীর ভাইপো ঈশা খান জয় লাভ করেছেন। ধারাবাহিক ভাবে ২০১৯ সাল থেকে বিজেপির দখলে উত্তরবঙ্গ। শুধু সাম্প্রদায়িক তাসের উপর ভিত্তি করে বিজেপি জয়লাভ করেনি। উত্তরবঙ্গের মানুষ বঞ্চনার অবসান হবে এই আশায় লাগাতার ভোটদান করছেন বিজেপিকে। তাতেও কোনও লাভ হয়নি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বঞ্চিত উত্তরবঙ্গ।
গত এক দশক ধরে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে উত্তর বাংলার মানুষ একাধিক বিষয় ও বঞ্চনার দাবি-দাওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের উপর ভরসা রাখেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে উত্তর বাংলার মানচিত্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিদায় জানাই। সাত আসনের উত্তর বাংলা থেকে ছয়টিতে জয়লাভ করে বিজেপি। তারপর থেকে উত্তর বাংলার উন্নয়ন ও বঞ্চনার অবসান হবে বলে আশার আলো সঞ্চয় হয়। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছরে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে আলাদাভাবে তেমন কোনো কাজ করেনি নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ জুটি। তবে অনেকে উত্তরবঙ্গ বলতে প্রধানত জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার থেকে শুরু করে কালিম্পং ও কার্শিয়াংকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তাই উত্তরবঙ্গের যা কিছু আছে প্রধানত উল্লিখিত এই সমস্ত জায়গায়। তাও যা কিছু হয়েছে নানা প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। বাকি অংশ কোচবিহার, দুই দিনাজপুর ও মালদা নিয়ে কোন ভাবনা চিন্তা নেই সরকারের। তা সত্ত্বেও উত্তর বাংলার রাজনীতি প্রিয় মানুষেরা কোনো যুক্তি ও চিন্তাভাবনা না করে ভোটদান করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে। আজ উত্তরবঙ্গ পশ্চিমবাংলার কলোনিতে পরিণত হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মানে পরিযায়ী শ্রমিকের ভাণ্ডার ঘর ও দুই মুঠো খাবারের সন্ধানের জন্য দূরপাল্লা ট্রেনের সাধারণ শ্রেণির টিকিটের খরিদ্দার। একদিকে দুর্ভিক্ষ অন্যদিকে শিক্ষা এবং সংস্কৃতির আড়ালে থাকা অসচেতন লোকের আবাসস্থল। এখানে নেই বিদ্রোহী নেতা,তবে আছে শুধু দক্ষিণ বাংলার নেতা-নেত্রীদের পেয়াদা ও ভক্ত। উত্তরবঙ্গ মানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিল ও মিটিংয়ে উপস্থিত জনতা। শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজের জন্য নির্ভর করতে হয় কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহারের উপর। যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু বিহার ও আসামের উপর নির্ভরশীল। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যে, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সদর শহরগুলোর সাথে ট্রেন লাইন থাকলেও লোকাল ট্রেন নেই। অধিকাংশ সদর শহর রেলপথে সংযুক্ত বিহারের বিভিন্ন সদর শহরের সাথে। মালদা টাউন- রায়গঞ্জের সাথে লোকাল ট্রেন চলাচল না করলেও রায়গঞ্জ কাটিহার, কাটিহার-মালদা টাউন লোকাল ট্রেন চলাচল করে। আবার মালদা টাউন -বহরমপুরের মধ্যে লোকাল ট্রেন নেই অথচ সাহেবগঞ্জ- মালদা টাউন ট্রেন চলাচল করে। একইভাবে রায়গঞ্জ-বালুরঘাট মধ্যে লোকাল ট্রেন নেই। এছাড়া কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের মত জেলাগুলোর সাথে কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জেলা সদর শহরগুলোর মধ্যে। তবে আরো দুর্ভাগ্যের বিষয় যে সমস্ত লোকাল ট্রেন চলাচল করে তার ওপর ভরসা করে ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে অফিসযাত্রী কোনোভাবেই ভরসা রাখতে পারেনা সময়মতো চলাচল না করার জন্য। প্রতিদিন উত্তরবঙ্গের প্রান্তিক মানুষগুলোকে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয়। তারপরও উত্তরবঙ্গ থেকে বিজিত প্রার্থীরা উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে তেমনভাবে সোচ্চার হচ্ছেন না ও আওয়াজ তুলতে দেখা যাচ্ছে না। উত্তরবঙ্গের মানুষ নানাভাবে প্রতিবাদ শুরু করেছে তার প্রমাণ রাজ্যজুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের দাপট থাকলেও উত্তরবঙ্গের মানুষ বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের দীর্ঘ বঞ্চনার অবসানের জন্য। তারপরও উত্তরবঙ্গের উন্নয়নও বঞ্চনার প্রতিকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেনি বিজেপি। শুধু তাই নয়, উত্তরবঙ্গের থেকে কেড়ে নেওয়া এইমসের মত উন্নত স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় ও বিভিন্ন শহরগুলোর মধ্যে নতুন কিছু ট্রেনের ব্যবস্থা করে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
বিজেপি তেমন ভাবে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে ভূমিকা গ্রহণ করেনি এক দশক শাসনকাল অতিক্রম করার পরেও। উত্তরবঙ্গের একাধিক সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করলেও কোন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব দেওয়া হলো না যেটা আমরা বরাবর রাজ্য মন্ত্রিসভায় দেখতে পাই। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রিসভাতে কোন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ও পূর্ণমন্ত্রীর দপ্তর দেওয়া হয়ে থাকে হাতেগোণা। তার মানে সরকার পরিবর্তন বড় কথা নয়, যেকোনো সরকার আসুক না কেন বঞ্চনার পরিবর্তন হবে না। বিজেপি, কংগ্রেস তৃণমূল ও বামফ্রন্ট সকলের দ্বারা উত্তরবঙ্গের মানুষ শোষিত ও বঞ্চিত। বর্তমান কেন্দ্রীয় বাজেটে উত্তর বাংলার মানুষ আশায় বুক বেধেছিল তাদের বঞ্চনা নিয়ে অন্তত কিছুটা সুরাহা হতে পারে। বিশেষ করে নদী ভাঙ্গনের মত জ্বলন্ত সমস্যা যেখানে প্রতিবছর বর্ষাকালে গঙ্গা, ফুলহর, মহানন্দা, টাঙ্গণ,তিস্তা প্রভৃতি নদীর ভাঙ্গনে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন ও উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। তার পুনর্বাসন ও নদী ভাঙন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমন আশা ছিল। কিন্তু উত্তরবঙ্গের বঞ্চনা কোনোভাবে নজর কাটল না কেন্দ্র সরকারের। আবার উন্নয়নে স্থান পেল দক্ষিণবঙ্গের কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকা। উত্তরবঙ্গের মানুষ আশাহত ও কিছু নেতা-নেত্রী ও হতাশ এমন কর্মে। । তাই উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে শিক্ষিত,বেকার যুবক, সাধারণ মানুষ চিন্তা করছেন উন্নয়ন সেই পথে সম্ভবপর নয়। পশ্চিমবঙ্গের কলোনি হিসেবে থেকে না অন্য পথে। তাই নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে চর্চা শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য হিসাবে ঘোষিত করার জন্য। কেউ কেউ উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের রাজ্যের মর্যাদা দাবি করেছেন। সত্যিই তাই,উত্তর পূর্বের লাগোয়া রাজ্যগুলো থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন ও নানা সুযোগ সুবিধার নিরিখে অনেকটা পিছিয়ে। মজার বিষয় হল উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন ও বঞ্চনার কথা আসতেই একদল মানুষের বাঙালি ও বাংলা প্রেম উগরে পড়ে এবং বাংলাকে বিচ্ছিন্ন করার চক্রান্ত দেখেন। নিজেদের স্বদেশ প্রেম, জাতি প্রেম ও ভক্তি জাগিয়ে তুলে অথচ বঞ্চনা নিয়ে তাদেরকে কোনোদিন কথা বলতে শোনা যায়নি। তাদের স্বার্থে ঘা লাগে কারণ তাদের দ্বারা শাসিত কলোনির অবসান হবে। উন্নয়নের নিরিখে উত্তরবঙ্গ আলাদা রাজ্যে পরিণত হলে সমস্যা কোথায়? কেন দক্ষিণপন্থি নেতারা উন্নয়নের লিরিখে ক্যান্সার আক্রান্ত উত্তরবঙ্গকে তাদের সাথে ধরে রাখতে চাই? তার কারণ, ইংরেজদের মতো উত্তরবঙ্গ কে ব্যবহার করে আসছে দক্ষিণবঙ্গ। দুর্ভাগ্য, বিজেপির একাধিক সাংসদ উত্তরবঙ্গ থেকে নির্বাচিত হলেও তাদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিসভায় শামিল করেনি ও তাদের কোন দাবি-দাওয়া কে তোয়াক্কা না করে বাজেট পেশ করেছেন। বিজেপি সংসদদের কাছে প্রশ্ন তারা জনগণের বিপুল ভোটে জেতার পর তাদের সরকার তাদের সংসদ এলাকার উন্নয়নের জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা হোক? কেন তাঁদের দাবিদাওয়া কে গুরুত্ব দেওয়া হলো না? না তারা জনসাধারণের সমস্যা এবং উত্তরবঙ্গের বঞ্চনার কাহিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরতে পারেনি?। উত্তরবঙ্গকে কেন অবহেলা করা হয়েছে তা ভোটার হিসেবে সাধারণ মানুষ জানতে চাই সংসদদের থেকে। শুধু সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করা যায় না। মানুষের রুজি-রুটি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা থেকে শুরু করে মৌলিক চাহিদা অপরিহার্য। তাই উত্তরবঙ্গ থেকে নির্বাচিত বিধায়ক ও সংসদদের মনে রাখা উচিত উত্তরবঙ্গের বঞ্চিত মানুষেরা রাস্তায় নামলে আপনাদের মত নেতা-নেত্রীদের দরজা বন্ধ হবে চিরতরে। তাই দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতা-নেত্রীদের গোলামি বন্ধ করে নিজেদের সংসদ এলাকার নায়্য অধিকার ও পাওনা নিয়ে সংসদে ও বিধানসভায় আওয়াজ তুলুন ও প্রতিবাদ করুন দলমত নির্বিশেষে। আমরা সকলেই ভারতবাসী ও পশ্চিমবঙ্গবাসী, আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য যেমন রয়েছে তেমনিভাবে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অধিকার, উন্নয়ন ও নায্য পাওনা আছে। জনগণের বঞ্চনার আওয়াজ ও প্রতিবাদের কণ্ঠ আপনারা। তাই বিমানের উচ্চ ক্লাসে বসে দিল্লি ও কলকাতা না করে জনসাধারণের জন্য কি করছেন ও কি কি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করতে পারলেন তার হিসাব রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনাদের জীবনযাপন ও পরিবারের ভরণপোষণ বহন করছেন আমজনতা এবং আমজনতার জন্য কি করলেন তার হিসাব না রাখা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তবে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে জনতা জনার্দনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে কোনো রাজনৈতিক রং না মেখে। উন্নয়নের নিরিখে একত্রিত হয়ে লড়াই করতে হবে। আমরা আলাদা রাজ্য নয়,চাই উন্নয়ন, সমান অধিকার, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে শুরু করে নানান সুযোগ সুবিধা। উত্তরবঙ্গের একমাত্র শিল্প চা যেখানে অসংখ্য শ্রমিক কাজ করে এবং ভারত সরকারের চারটি চা বাগান রয়েছে এখানে। চা বাগানের শ্রমিকেরা নানা সমস্যা ও সংকটের শিকার। তবুও এক টাকাও বরাদ্দ করা হয়নি সমস্যার সমাধানের জন্য। এছাড়াও উত্তরবঙ্গ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলার কারণে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি লাভ করেনি। দেশের অন্য প্রান্ত থেকে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা অনেক কম আসে উত্তরবঙ্গে আধুনিক মানের ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে। পর্যটন শিল্প তেমনভাবে পরিচয় লাভ করেনি যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সরকারের অবহেলার কারণে। উত্তরবঙ্গের মানুষ আজ হতাশ। তৃণমূল,বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের দেখানো পথেই বিজেপি বঞ্চিত করছে উত্তর বাংলাকে। তবে বিজেপি সচেতন না হলেও আগামী নির্বাচনে উত্তর বাংলায় মানুষ বিজেপির বঞ্চনার উত্তর দেবে ভোটের ময়দানে। বিহার থেকে নিতিশ বাবুর সমর্থন নেওয়ার জন্য উন্নয়নে খেয়ালখুশি মত বরাদ্দ হলেও সমসংখ্যক সংসদ থাকা সত্ত্বেও কেন বঞ্চিত হবে বাংলা ও বাঙালি সাংসদেরা।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক দেওয়ান আব্দুল গণি কলেজ, দক্ষিণ দিনাজপুর
মতামত লেখকের নিজস্ব
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct