আপনজন ডেস্ক: নোয়াহ লাইলস কি শুধুই ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন? জাপানের মিডিয়া কিন্তু তা মনে করছে না। পরশু লাইলস এই ইভেন্টে সোনা জয়ের পর দেশটির মিডিয়া তাঁকে বলছে, ‘বিশ্বের দ্রুততম অ্যানিমি ভক্ত।’ কারণ? ১০০ মিটার স্প্রিন্ট জয়ের পর জাপানের অ্যানিমি শো ‘ড্রাগন বল’ আক্রমণ এর মতো জয় উদ্যাপন করেছেন লাইলস। কিন্তু লাইলস নিজে কী ভাবছেন? ওই তো, ১০০ মিটারের জাত স্প্রিন্টাররা যেমন হন, লাইলসের ভাবনাও তেমনই। দৌড় শুরুর আগে জ্যামাইকান কিংবদন্তি উসাইন বোল্টের আত্মবিশ্বাসই অন্য রকম থাকত। যেন জেতাটা নিশ্চিতই, ট্র্যাকে নেমেছেন আনুষ্ঠানিকতা রক্ষায়। লাইলসও তেমনই। যেটা মনে আসে, সেটা বলে ফেলেন, করেনও। ১০০ মিটার দৌড়ের ট্র্যাকে নামার আগে মার্কিনদের ভরসা রাখতে বলেছিলেন তাঁর ওপর। প্রতিশ্রুতির প্রতিদান দিয়ে ‘এক্স’–এ লাইলসের পোস্ট, ‘আমেরিকা, তোমায় বলেছিলাম না সামলে নেব!’ ২৭ বছর বয়সী লাইলস এক্সে আরেকটি পোস্ট করেছেন। সেটি সম্ভবত বিশ্বের সব স্বপ্নবাজ তরুণদের জন্য, ‘আমার অ্যাজমা আছে, অ্যালার্জি আছে, ডিসলেক্সিয়া আছে, এর সঙ্গে যোগ করুন উদ্বেগ ও হতাশা। তোমার কী আছে, সেটা ঠিক করে দেয় না, তুমি কি হতে পারবে। তুমিও পারবে!’
হ্যাঁ, চেষ্টা ও নিবেদন থাকলে সাফল্য তো আসেই। তবে লাইলস যেভাবে পেরেছেন, সেটি একটু আলাদা। বিবিসি দাবি করছে, ১০০ মিটার স্প্রিন্টে এই প্রথমবারের মতো বাতাসের পক্ষে ৮ জন স্প্রিন্টার ১০ সেকেন্ডের নিচে দৌড় শেষ করেছেন, আর তাই এটি ‘সর্বকালের দ্রুততম রেস’।
রুপাজয়ী জ্যামাইকার কিশানে থম্পসনের সঙ্গে ফটো ফিনিশে ০.০০৫ সেকেন্ডের ব্যবধানে এগিয়ে সোনার মুখ দেখেছেন লাইলস (৯.৭৯ সেকেন্ড)। আর অষ্টম হওয়া ওবলিক সেভিয়ের সঙ্গে লাইলসের সময়ের ব্যবধান ০.১২ সেকেন্ড। জ্যামাইকার সেভিয়ে দৌড় শেষ করেছেন ৯.৯১ সেকেন্ডে। সর্বশেষ টোকিও অলিম্পিকে এর চেয়েও দেরিতে দৌড় শেষ করে চতুর্থ হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার আকানি সিম্বিন (৯.৯৩ সেকেন্ড)। প্যারিস অলিম্পিকের এই ইভেন্টে ‘সর্বকালের দ্রুততম’ এই দৌড় প্রতিযোগিতার সঙ্গে একটি তুলনাও খুঁজে পেয়েছে সংবাদমাধ্যম। ১৯৩২ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে রালফ মিটক্যাফেকে হারিয়ে সোনা জিতেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিডনাইট এক্সপ্রেস’খ্যাত এডি তোলান। সেই দৌড় নিয়ে এখনো আলোচনা চলে। কেউ কেউ লাইলসের এই দৌড়ের সঙ্গে মিলও খুঁজে পাচ্ছেন। ঐতিহাসিকভাবে এর যোগসূত্রও আছে। ৯২ বছর আগের সেই অলিম্পিকে তোলান এবং মিটক্যাফে দুজনেই ১০.৩০ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেছিলেন। সে সময় সেটা বিশ্ব রেকর্ড হলেও বিচারকেরা ফল বের করতে আধা ঘণ্টার বেশি সময় নিয়েছিলেন। ফল নির্ধারণ করতে তাঁরা ডেকে পাঠান গুস্তাভাস টি. কিরবিকে। অ্যাথলেটিকসে ফটো ফিনিশের আবিষ্কারক তিনি। কিরবি তাঁর প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, ‘তোলান ৫ সেন্টিমিটার ব্যবধানে জিতেছেন।’ লাইলসের এই জয় তাঁর ভক্তদের ছুঁয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাঙিয়ে দিয়েছে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস প্রধান সেবাস্তিয়ান কোয়েকেও। তাঁর মতে, ক্যারিশম্যাটিক এই আমেরিকান স্প্রিন্টার অ্যাথলেটিকসের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’। কোয়ের দাবি, ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়ের এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ২০১৭ সালে অবসর নেওয়া অলিম্পিকে ৮ বারের স্প্রিন্ট চ্যাম্পিয়ন বোল্টের শূন্যতা পূরণ করতে পারবেন, ‘সে নিজের গল্পটা এমনভাবে লিখছে, যা আমাদের উসাইন বোল্টের জমানায় ফেরত নিচ্ছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে সবাই চেনে। এমন একটা মুখ যাকে নিয়ে সবাই কথা বলছে। জানি তারা কী নিয়ে কথা বলছে। বিশ্বের খেলাধুলায় হাই প্রোফাইল নারী ও পুরুষ ক্রীড়াবিদদের কাতারে তাকে রাখছেন অনেকে।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct