আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি (তফসিলি জাতি ও উপজাতি ব্যতীত) আইনের অধীনে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা ৭৭টি সম্প্রদায়কে বাতিল ঘোষণা করা কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আর্জির শুনানিতে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নোটিশ জারি করেছে। ২০১০ এবং ২০১২ সালের এর পরে পশ্চিমবঙ্গে জারি করা ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করা প্রসঙ্গে এই নোটিশ েদিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মামলাটি উঠেছিল প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে যার মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্র। বেঞ্চ রাজ্যকে ৭৭টি সম্প্রদায়কে ওবিসি হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য অনুসৃত প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে একটি হলফনামা দাখিল করতে বলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। ওই হলফনামায় পম্চিমবঙ্গ দরকারকে জানাতে হবে সমীক্ষার প্রকৃতি ও ওবিসি হিসাবে মনোনীত ৭৭টি সম্প্রদায়ের তালিকায় সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের বিষয়ে অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের সাথে পরামর্শের অভাব ছিল কিনা। এর পাশাপাশি, আদালত আরও জানতে চেয়েছে যে ওবিসিগুলির উপ-শ্রেণি বিন্যাসের জন্য রাজ্য কোনও পরামর্শ করেছে কিনা এবং গবেষণার প্রকৃতি স্পষ্ট করে দিয়েছে কিনা।
শুনানির শুরুতে রাজ্যের তরফে হাজির থাকা একমাত্র আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং বলেন, রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি রাজ্য সরকারের পক্ষে সওয়াল করে বলেন, হাইকোর্ট মনে করে ওবিসি নির্ধারণের এখতিয়ার রয়েছে, রাজ্য সরকারের নয়। কমিশন ১৯৯৩ সালে গঠিত হয়, তবে কীভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায় সে সম্পর্কে ২০১২ সালে রাজ্য একটি আইন তৈরি করেছে। প্রক্রিয়াটি হল প্রথম কমিশন এগুলিকে ওবিসি হিসাবে চিহ্নিত করে, তারপরে রাজ্য সরকার তার প্রয়োগ করে। তিনি সংরক্ষণের তালিকা বাতিল করার পরিণতি সম্পর্কে যুক্তি দেন। তিনি বলেন, এর ফলে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট প্রভাবিত হয়্কা। কারণ নিট-এ ওবিসিদের জন্যও সংরক্ষণ রয়েছে। তিনি কমিশনের জন্য উচ্চ আদালত যে ভাষা ব্যবহার করেছে তাও উল্লেখ করেন। আইনজীব ইন্দিরা জয়সিং বলেন, আদেশে ব্যবহৃত ভাষা দেখুন, যেখানে বলা হয়েছে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন কমিশনের প্রধান। ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তারা মুসলমান হওয়ার কারণেই সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁর যুক্তি অব্যাহত রেখে তিনি বলেন, রিপোর্টের পরে রিপোর্ট রয়েছে যা অন্যান্য বিষয়ের সাথে বিবেচনা করা হয়েছিল। মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টে পশ্চাদপদতার কথা এসেছে। তার ভিত্তিতে জয় সিং অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ চান। এর পাল্টা সিনিয়র অ্যাডভোকেট মুকুল রোহতগি বলেন, আদালতের এই মামলা চালিয়ে যাওয়া উচিত নয় এই কারণে যে এটি একটি “জঘন্য মামলা”। তিনি আরও বলেন, কোনও সমীক্ষা করা হয়নি এবং এর সমর্থনে তিনি হাইকোর্টের রায়ের উল্লেখ করেন। আদালত বলে তালিকাটি বাতিল করার ফলে রাজ্যে কোনও ওবিসি সংরক্ষণ থাকবে না। যখন প্রধান বিচারপতি জিজ্ঞাসা করেন, আদালত কেন সংবিধান নিয়ে এই জালিয়াতি বলছে, তখন বিরোধী পক্ষের আইনজীবী পিএস পাটওয়ালিয়া বলেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে বলেছেন ৩৭টি শ্রেণিকে ওবিসি মর্যাদা দেওয়া হবে, তারপরে তাদের ওবিসি-এ এর অধীনে আনা হবে। তিনটি জাতের ক্ষেত্রে কোনও সমীক্ষা হয়নি এবং হাইকোর্ট তা বিশ্লেষণ করেছে। বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে তিনি ওই রায়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, রিপোর্টে কমিশনের সুপারিশ বিবেচনা করা হয়নি।
ওবিসি বাতিলের পক্ষের আরও এক প্রবীণ আইনজীবী বংশারি স্বরাজ বলেন, কমিশনের সাথে কোনও পরামর্শ করা হয়নি। এটি একটি খুবই জঘন্য নজির স্থাপন করেছে, যেখানে রাজ্যের তোষণের রাজনীতি অব্যাহত থাকবে।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, কমিশন ৭৭টি সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করেছে এবং তাদের মধ্যে কতজন কেন্দ্রীয় তালিকায় রয়েছে তা জানতে চান। তিনি আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংকে প্রশ্ন করেন, ওবিসি শ্রেণির পশ্চাৎপদতা দেখানোর জন্য উপযুক্ত এমন তথ্য কী আছে? তিনি বলেন, কমিশনের কাজ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওবিসি শনাক্তকরণ করা।
আদালত প্রশ্ন তোলে একদিনে ৭-৮টি সম্প্রদায়কে শনাক্ত করা হল কী করে? তার প্রত্যুত্তরে আইনজীবী জয়সিং বলেন, ছয় মাস ধরে একাধিক শুনানি হয়েছিল।যুক্তিতর্ক শোনার পর আদালত রাজ্য সরকারকে হলফফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং আগামী শুক্রবার বিষয়টি তালিকাভুক্ত করেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ মে কলকাতা হাইকোর্ট তার রায়ে স্পষ্ট করে দেয় যে যারা এই আইনের সুবিধা নিয়ে চাকরি পেয়েছেন এবং এই ধরনের সংরক্ষণের কারণে ইতিমধ্যেই চাকরিতে রয়েছেন, তারা এই নির্দেশের দ্বারা প্রভাবিত হবেন না।
হাইকোর্ট তার আদেশে পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি (তফসিলি জাতি ও উপজাতি ব্যতীত) (পরিষেবা ও পদগুলিতে শূন্যপদ সংরক্ষণ) আইন, ২০১২ এর অধীনে দেওয়া অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) হিসাবে সংরক্ষণের জন্য ৩৭টি শ্রেণি বাতিল করে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের মামলা হলে আজ সোমবার তার শুনানি হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct