নিজস্ব প্রতিবেদক, বহরমপুর, আপনজন: দেশবিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবাংলায় বাঙালি মুসলমানদের আর্থিক দিক থেকে যে বিড়ম্বিত জীবন, তার থেকে উদ্ধারের পথ নির্দেশ করতেই প্রকাশিত হল “ইসলামি অর্থনীতি- বাঙালি মুসলমান, উন্নয়নের পথসন্ধান” নামক একটি আকর গ্রন্থ । গ্রন্থটি প্রকাশ উপলক্ষে এমন বিষয়ে চাতক ফাউন্ডেশন একটি আলোচনা চক্রেরও আয়োজন করল রবিবার মুর্শিদাবাদ জেলা সাংবাদিক সংঘে।
প্রায় আড়াই ডজন লেখক এর গবেষণাধর্মী একটি প্রবন্ধ সংকলন এদিন প্রকাশিত হয়। এই সংকলনের সম্পাদক শেখ মফেজুল । অনুষ্ঠানের সূচনা হয় আল কুরআন পাঠের মধ্য দিয়ে। পরিবেশিত হয় ইসলামি সংগীত, গজল, আধুনিক সংগীত ও কবিতা। আলোচনার সূচনাতেই বইটির প্রকাশকথা উপস্থাপন করেন অর্থনীতির অধ্যাপক তথা চাতক সদস্য ড. আব্দুল হাদী।
এরপর মূল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকার রচয়িতা খাজিম আহমেদ । তিনি বলেন, বৈশ্বিক ইসলামের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, আর্থিক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় উৎকর্ষের জন্য প্রখর প্রচেষ্টা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. তিনি নিজেও একজন তুখোড় যথার্থ ও আদর্শ ব্যবসায়ী মানসিকতারও ব্যক্তিত্ব ছিলেন। একদা “মার্কেনটাইল ইসলাম” গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল অথচ আজ এতদেশীয় তথা পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালি মুসলমানরা হতদরিদ্র ও হতমান হয়ে রয়েছে। এমন অবাঞ্ছিত আর্থিক অবস্থা থেকে উত্তরণের পথসন্ধানে তিনি বলেন, আঞ্চলিক উৎপাদনের উপাদানকে ব্যবহার করে কলকারখানা, শিল্প তৈরির মারফত, উৎপাদিত দ্রব্য ছোট ছোট মার্কেটে বিপণন করা । এবং স্থানিক মহিলা পুরুষ শ্রমিকদের কাজে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করা । যাতে কিনা পরিযায়ী শ্রমিকেরা স্থানীয় ভাবে কাজ পায়। আঞ্চলিক অর্থে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মূলধন নিয়োগকারীরা যদি আগ্রহী হয়ে ওঠেন, তাহলে “মাইক্রো-ইকোনমি” উন্নত হবে । এবং আধুনিক জীবন যাপনে স্থানীয় জীবনে মূলধন চলাচল করার মারফত সেই অঞ্চল উন্নত হয়ে উঠবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন আম, পাট ও রেশমের কথা। খাজিম আহমেদ এপ্রসঙ্গে অধ্যাপক মোঃ ইউনুস, রিয়াজ গার্মেন্টস এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মহিলা বিবি রাসেলের কথাও তুলে ধরেন।
গ্রন্থের উদ্বোধক বিশিষ্ট মাওলানা ইসহাক মাদানী বলেন, চাতক প্রকাশন-এর এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যা বাঙালি মুসলমানদের নতুন পথের অনুসন্ধান করে দেবে । তিনি ইসলামি নানা তত্ত্ব ও তথ্য তুলে ধরে শিক্ষা, নারী উন্নয়ন, প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ে জীবনযাপন নির্ভর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কথা তিনি তার নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে তুলে ধরেন এবং উপস্থাপন করেন কুরআন ও মহানবীর জীবনের নানা ঘটনার কথা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থনীতির প্রাক্তন অধ্যাপক প্রাণতোষ সেন বলেন, ইসলামি অর্থনীতির বড় গুণ হল মানবিক উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া । এছাড়াও বিশ্বের পুঁজিপতি অর্থব্যবস্থা, সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থার ভালো গুণগুলো গ্রহণ করা। বিশ্বের সুদবিহীন ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে ভারত ছাড়া বিশ্বের নানা দেশে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এই ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সমবণ্টন উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাকাত ব্যবস্থা ।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. মজিবর রহমান বলেন, চাতক পত্রিকা, ‘চাতক প্রকাশন’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপে শামিল হল । এই গ্রন্থ প্রকাশ ইসলামি চিন্তা চেতনার সাথে সাথে অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নয়নে মাইল ফলকের কাজ করবে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা আলিয়া বেগম, গণিত অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ আশিফ ইকবাল, ঝিঙেফুল পত্রিকার সম্পাদক সাহাবুল ইসলাম, সংগীতশিল্পী সুমিতা ঘোষ, কবি সুপ্রীতি বিশ্বাস, শিক্ষিকা ডেইজি বেগম, মানবাধিকার কর্মী উমা সেন রায়, রাহুল চক্রবর্তী, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হক, কবি সামজিদা খাতুন, শাহিন রাজা প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুবাবে সঞ্চালনা করেন চাতক পত্রিকার সম্পাদক শেখ মফেজুল হক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct