ফৈয়াজ আহমেদ, আপনজন: তেল সম্পদ প্রাচুর্যে আজকের আরবদের জীবনযাত্রার বহুবিধ পরিবর্তন সাধিত হলেও তাদের জীবনধারায় ওতপ্রোতভাবে মিশে নিত্যদিনের বাহন ‘মরুর জাহাজ’ বা উট। আরব সমাজে উটের রয়েছে অনন্য মর্যাদা, সেই সঙ্গে সৌদি আরবের সমাজ ও সংস্কৃতিতেও। হাজার হাজার বছর ধরেই এই প্রাণীকে তারা ভালোবেসে আসছে। হাজার বছর ধরে আরব উপদ্বীপে মরুর বুকে জীবন-জীবিকার মূল ভিত্তি এই প্রাণীটি। তপ্ত মরুতে নির্ভরযোগ্য বোঝা বহনকারী পশু হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে উটের। একই সঙ্গে সম্পদ, উদারতা এবং ভ্রমণের প্রতীক হিসেবে পরিচিত এই উট। এমনকি ২০২৪ সালকে উটের বছর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। খবর গালফ নিউজের। পশুপালক বা রাখালরা তাদের উটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বিশেষ শব্দ, অঙ্গভঙ্গি এবং কখনও কখনও বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণ ব্যবহার করেন। এর ফলে মরুভূমির বুকে ‘আলহেদা’ নামক একটি নান্দনিক লোকশিল্পের জন্ম হয়েছে। ঐতিহাসিক সময়কাল থেকেই উটের সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের গভীর সংযোগই এই লোকশিল্পের ‘প্রাণ’। এই শিল্পটি আরব সমাজে প্রজন্মের পর প্রজন্মে চলে আসছে।
হাজার বছর ধরে বিভিন্ন কবিতা ও ছন্দে অনুপ্রাণিত হয়ে ছন্দময় অভিব্যক্তি তৈরি করেছেন রাখালরা। এক্ষেত্রে উট বুঝতে পারে এমন একটি শব্দভাণ্ডার তৈরি করেছেন পশুপালকরা। পশুপালকরা ছন্দময়ী অভিব্যক্তি আলহেদা’আ ব্যবহার করে মরুভূমির ভেতর দিয়ে উটদের পথ দেখান, চারণভূমির সন্ধানের সময়। সেই সঙ্গে তাদের জল খাওয়ানো, দুধ দোহানো এবং তাদের পিঠে চড়ার সময় ভিন্ন ভিন্ন শব্দ উচ্চারণ করেন রাখালরা। আলহেদা’আ একক সুর মেনে চলে না। এটি পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত হয়। এসব মর্মস্পর্শী শব্দ উটকে গভীরভাবে আন্দোলিত করে। অনেকগুলো শব্দ আলহেদায় যুক্ত হয় পশুপালকদের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ থেকে।
উট সৌদি আরবসহ আরব উপদ্বীপের বিস্তীর্ণ মরুভূমির সংস্কৃতি ও ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই সঙ্গে আলহেদার গুরুত্বও অনেক। জাতিসংঘের সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘মানবতার জন্য অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ (রিপ্রেজেন্টেটিভ লিস্ট অব ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি)-নামের বিশেষ স্বীকৃত পেয়েছে এটি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct