সুভাষ চন্দ্র দাশ, ক্যানিং, আপনজন: নির্মম হৃদয় বিদারক যন্ত্রণায় এক বধূর দু’নয়ন দিয়ে অবিরত ঝরে পড়ছিল অশ্রুবারি।সেই অশ্রুবারি মুছে সাফ করে দিয়ে হাসি ফোটালেন একজন সৎ নির্ভিক দক্ষ পুলিশ অফিসার।দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং,সোনারপুর,গোসাবা,কুলতলি, সুন্দরবন কোষ্টাল এবং সর্বশেষে মুর্শিদাবাদের কান্দি থানায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি মুর্শিদাবাদ জোনে সিআইডি ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত রয়েছেন। বিগত দিনে তিনি সোনারপুর,কুলতলি এবং ক্যানিং থানায় কর্মরত থাকাকালীন তাঁর একাগ্রতা,সততা এবং নির্ভিক কলমের দক্ষতার জোরে তিন তিনটি পরিবার সুবিচার পেয়ে বেঁচে থাকার রসদ পেয়েছে।পাশাপাশি তাঁর এমন কর্ম দক্ষতার জন্য দুষ্কৃতিরা দীর্ঘ মেয়াদের সাজায় জর্জরিত হয়ে জেলের ঘানি টানছে।গত প্রায় ১১ বছর আগের ঘটনা। সালটা ২০১৩, ১লা মে। ক্যানিংয়ের গ্রামে সদ্য বিবাহিতা এক বধু। বাড়ির অদূরে একটি মেলায় যাচ্ছিলেন। রাতের অন্ধকারে দুই দুষ্কৃতি তাঁর পথ আটকায়।ঝাঁপিয়ে পড়ে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চায়। বেশ কিছুক্ষণ ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়।দুই দুষ্কৃতির কাছে নিরুপায় হয়ে পড়েন অসহায় একাকী ওই বধু।রাতের অন্ধকারে জোর করে তুলে নিয়ে যায় বাবুর আলি সেখ ও সরিয়ত মন্ডল নামে দুই দুষ্কৃতি। রাতের অন্ধকারে পাশের একটি নির্জন মাঠে নিয়ে যায়।এরপর একজন পাহারাদারের কাজ করে। অপর জন অমানুষ পিশাচ সরিয়ত মন্ডল নামে ওই বধুকে পশুর মতো আক্রমণ করে শারীরিক নির্যাতন করে।এমনকি ওই বধুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। ঘটনার পর রাতের অন্ধকারে ওই বধু কোন ক্রমে পালিয়ে মেলার মাঠে পৌঁছায়। কান্নাকাটি শুরু করে। লোকজন জড়ো হয়। খবর পৌঁছায় ক্যানিং থানায়।অভিশপ্ত রাতের ঘটনার পর ২ রা মে ক্যানিং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। যার কেস নং ২২৩/২০১৩, ৩৭৬(ডি) আইপ সি। সেদিনের সেই অভিশপ্ত রাতের বিভীষিকাময় নির্মম ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দায়িত্ব বর্তায় তৎকালীন ক্যানিং থানার এসআই শুভময় দাসের উপরে। তদন্তের দায়িত্ব পেয়েই ২ রা মে দু’জন দুষ্কৃতি কে গ্রেফতার করে। দুষ্কৃতিরা জেলে থাকাকালিন তাদের বিরুদ্ধে ২৮ জুন আদালতে চার্জশিট জমা করেন।অভিযুক্তরা নানান প্রকার চেষ্টা চালায় বেকসুর খালাস হওয়ার জন্য। গত ৩১ জুলাই আলিপুরের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অঞ্জন কুমার সেনগুপ্ত ১১ বছরের বিচার প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সমাপ্তি হয় দীর্ঘ ১১ বছরের যন্ত্রণা। দোষী সরিয়ত মন্ডল কে সাত ও বাবুর আলি সেখ কে তিন বছর সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয়। পাশাপাশি অর্থ দন্ডেরও আদেশ দেন আদালতের বিচারক। ঘটনা প্রসঙ্গে সরকারী আইনজীবি ইন্দ্রাণী রায় চৌধুরী তদন্তকারী পুলিশ অফিসার শুভময় দাস কে স্যালুট জানিয়ে বলেছেন, ‘নির্যাতিতা সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবেন।’
অন্যদিকে নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের লোকজন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকে অসংখ্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে জানিয়েছে, ‘দীর্ঘ এগারো বছর অতিক্রান্ত। ভেবেছিলাম সঠিক বিচার পাবো না।একে বারেই আশা ছেড়ে দিয়ে নিরাশ হয়েছিলাম।দক্ষ পুলিশ অফিসারের একাগ্রতার জন্য আদালতের সুবিচার পেয়ে মনে হচ্ছে শুভময় দাসের মতো পুলিশ অফিসার যেন বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে জন্মায়।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct