আপনজন ডেস্ক: কেরলের বিপর্যস্ত ওয়ানাডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৮ জনে। তবে সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০১টিতে। এখনও প্রায় ৩০০ জন নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তার মধ্যে নানা মর্মান্তিক ঘটনার খবর মিলছে। গত ২৬ জুলাই, গত শুক্রবার, একজন স্কুল শিক্ষক কেরালার ওয়ানাড়ের চুরালমালা গ্রামে অবস্থিত মনোরম ভেল্লারমালা সরকারী ভোকেশনাল হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে এলোমেলোভাবে ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রেকর্ড করেন। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টিতে স্কুল সংলগ্ন ঝর্ণা দিয়ে হঠাৎ জোর করে জলের স্রোত শুরু হয়েছিল। ভিডিওতে দেখা যায়, গোলাপি ও লাল ইউনিফর্ম পরা একদল শিশুর ওপর পড়ার আগে জলের স্রোত স্কুল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আশ্রয়ের খোঁজে তারা যখন উন্মত্ত হয়ে দৌড়াচ্ছিল, তখন ভিডিওটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের মধ্যে একজন উত্তেজিতভাবে শিক্ষকের ফোনের ক্যামেরার দিকে হাত নাড়ছিল।
এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেল, ৩০শে জুলাইয়ের ভোরে যে বিধ্বংসী ভূমিধস এই গ্রামে আঘাত হানে, তা পুরো স্কুলকে গ্রাস করে নিয়েছে। মধ্যরাতের পর স্কুলটি সচল না থাকায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। প্রাঙ্গণে এখন যা অবশিষ্ট রয়েছে তা হল ভাসমান ভবনগুলির ধ্বংসাবশেষ, কয়েকশো দৈত্যাকার পাথর যা কয়েক দিন আগে পাহাড়ের নীচে গর্জে উঠেছিল এবং বেশ কয়েকটি বড় বড় গাছ উপড়ে পড়েছিল।
জিভিএইচএসএস-এর প্রধান শিক্ষক উন্নিকৃষ্ণন বলেন, নিহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জন আমাদের স্কুলেরই ছাত্র বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উন্মত্ত হয়ে দৌড়াচ্ছিল, তখন ভিডিওটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের মধ্যে একজন উত্তেজিতভাবে শিক্ষকের ফোনের ক্যামেরার দিকে হাত নাড়ছিল।
এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেল, ৩০শে জুলাইয়ের ভোরে যে বিধ্বংসী ভূমিধস এই গ্রামে আঘাত হানে, তা পুরো স্কুলকে গ্রাস করে নিয়েছে। মধ্যরাতের পর স্কুলটি সচল না থাকায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। প্রাঙ্গণে এখন যা অবশিষ্ট রয়েছে তা হল ভাসমান ভবনগুলির ধ্বংসাবশেষ, কয়েকশো দৈত্যাকার পাথর যা কয়েক দিন আগে পাহাড়ের নীচে গর্জে উঠেছিল এবং বেশ কয়েকটি বড় বড় গাছ উপড়ে পড়েছিল।
জিভিএইচএসএস-এর প্রধান শিক্ষক উন্নিকৃষ্ণন বলেন, নিহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জন আমাদের স্কুলেরই ছাত্র বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখছি। তাদের মধ্যে প্রায় ৩২ জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। যখন প্রথম বিপর্যয় ঘটে, তখন স্কুলের শিক্ষকরা নিরলসভাবে তাদের ফোনের কাজ করে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এবং তারা নিরাপদে আছেন কিনা তা নিশ্চিত হন।
স্কুলের অধিকাংশ পড়ুয়া এখন বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে রয়েছে জানিয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, আমরা তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। শিক্ষকরা তাদের পরিদর্শন করছেন। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেই আছেন।
২০০৬ সাল থেকে জিভিএইচএসএস-এ কর্মরত উন্নিকৃষ্ণন এখনও স্কুল চত্বরে যাননি এবং এর পরিণতি কী হয়েছিল তা প্রত্যক্ষ করেননি। তিনি বলেন, আমি এটা এভাবে দেখতে সহ্য করতে পারি না। আমি যেতে পারিনি।
বিদ্যালয়টি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর পরিদর্শন করা একজন শিক্ষক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ভবনটি আসলে বন্যার জলের প্রবাহে বাধা হিসাবে কাজ করে বিপর্যয়ের তীব্রতা হ্রাস করতে সহায়তা করেছিল। কম্পাউন্ডে অনেক বড় বড় গাছ রয়েছে, যা স্কুল ভবনের পাশাপাশি প্রচুর জল আটকাতে সহায়তা করেছে। তাই একই গতিতে অন্য এলাকায় জল ঢোকেনি।
ওই শিক্ষক জানান, এখন স্কুল চত্বরে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে বহু জমি পড়ে আছে। আগে আমরা স্কুল থেকে গ্রামের অনেক কিছুই দেখা যেত না। কারণ বাড়িঘর এবং অন্যান্য ভবন রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন মাঝখানের সব কিছু ভেসে গেছে।
তিনি আরও বলেন, খবরে যা বলা হচ্ছে পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেক খারাপ। হাজার হাজার বড় বড় পাথর ও বোল্ডার পানির সঙ্গে ধসে পড়েছে। এটা উদ্ধার তৎপরতা নয়, তল্লাশি অভিযান। ‘উদ্ধারের’ সময় পেরিয়ে গেছে।
উন্নিকৃষ্ণন বলেন, তিনি ভেল্লারমালাকে বন্ধুত্ব এবং উষ্ণতার ভূমি হিসাবে বর্ণনা করবেন। তিনি তার সব শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চিনতেন বলে জানান। ওরা আমাদের নিজেদের পরিবারের মতো। আমরা এক হয়ে থাকি, আমাদের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। এরা সবাই নিরীহ ও সরল মানুষ। এই জায়গাটা এমনই”।
স্কুলে মোট ৪৯৭ জন শিক্ষার্থী এবং অশিক্ষক কর্মী সহ ৩১ জন কর্মচারী ছিল। তিনি বলেন, কিছু শিক্ষার্থী স্কুল থেকে একটু দূরে থাকে। কিন্তু যেহেতু জিভিএইচএসএস ১৪ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়, তাই এই অঞ্চলের প্রায় সব শিশুই সেখানে পড়াশোনা করে।
ধ্বংসস্থূপের নীচ থেকে যখন শিশুদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, তখন উদ্ধারকর্মীরা স্কুলের শিক্ষকদের ডেকে তাদের শনাক্ত করেন। জিভিএইচএসএসের আরেক শিক্ষক আদিল বলেন, এই ছোট বাচ্চাদের দেহের পর লাশ দেখে আমরা অসহায় ও অসাড় বোধ করছি। “এরা সবাই এখানে একটি পরিবারের মতো একসঙ্গে বসবাস করত। আমাদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য ছিল না। কিন্তু এখন আমরা তাদের হারিয়েছি।
কেরালা ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড টেকনোলজি ফর এডুকেশনের সিইও কে আনভার সাদাথ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেল্লারমালা জিভিএইচএসএস-এর শিক্ষার্থীদের তৈরি ‘ভেল্লারাম কাল্লুকাল’ (নুড়ি পাথর) নামে একটি ডিজিটাল ম্যাগাজিনের স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন। যে পত্রিকায় কবিতা, প্রবন্ধ ও গল্প ছাপা হতো – যার অনেকগুলোই তাদের অদ্ভুত গ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দিত- সেখানে একটি ছোটগল্পে একটি পাখির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, বাচ্চারা, তোমাদের এখান থেকে পালানো উচিত। একটা ট্র্যাজেডি ঘটতে বাধ্য। পালাতে হলে দ্রুত দৌড়াতে হবে।