আপনজন ডেস্ক: ইরানের তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদল হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এর কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং হামাস। স্বাভাবিকভাবেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে হিজবুল্লাহ ও হুতি বিদ্রোহীরা। এতে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এই হত্যার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের নেতারাও। ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এই হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, তেহরানে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডে ইরানের অভ্যন্তরে ইসরায়েলের তৎপরতা চালানোর সক্ষমতা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ইসমাইল হানিয়ার নিহত হওয়ার খবর প্রচারিত হয়। এতে বলা হয়, রাজধানী তেহরানে এক হামলায় হানিয়া এবং তার একজন দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীও এক বিবৃতিতে হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে। পরে হামাসের পক্ষ থেকেও এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়।
ইসমাইল হানিয়া ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তেহরানে গিয়েছিলেন। সেখানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে মঙ্গলবার মধ্যরাতের দিকে তেহরানের যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, সেখানেই সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। ইরানি সূত্রের বরাতে প্রচারমাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রের কথা বলা হলেও হানিয়াকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা শতভাগ নিশ্চিত নয়। ইরানের বার্তা সংস্থা ফারস বলেছে, আকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ হত্যাকাণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে বলে অন্যরাও ধারণা করছে।
বিশ্লেষকরা এই হত্যাকাণ্ডকে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থার বড় ব্যর্থতা আখ্যা দিয়েছেন। বিশেষ করে ইরানের প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের নিরাপত্তা জোরদার করা সত্ত্বেও রাজধানীর বুকে এ ধরনের হামলার কারণে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। প্যারিসভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ ফর দ্য মেডিটেরানিয়ান অ্যান্ড মিডল ইস্টের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট অ্যাগনেস লেভালোইস বলেন, হানিয়ার হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে না পারা ইরানের জন্য খুবই বিব্রতকর।
ইসমাইল হানিয়াকে ইসরায়েল হত্যা করেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আর ইরানের ভূখণ্ডের গভীরে ইসরায়েলের এ রকম তৎপরতার বিষয়টি তেহরানের জন্য উদ্বেগের বিষয়। দীর্ঘদিন ধরেই ইরানে নাশকতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসার অভিযোগ রয়েছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের বিরুদ্ধে।
লেভালোইস অ্যাগনেস বলেন, ‘আমরা জানি, ইরানে প্রচুর ইসরায়েলি গোয়েন্দা রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে প্রমাণিত হয়েছে যে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা কতটা সংগঠিত। তাদের কাছে হানিয়ার অবস্থান ও চলাফেরা সংক্রান্ত সব তথ্য ছিল।’
এর কিছু আগেই লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর এক নেতাকে হত্যার দাবি করে ইসরায়েল। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে ইরান সমর্থিত দুই সশস্ত্র সংগঠনের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতার হত্যাকাণ্ডে স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন করে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সর্বাত্মক যুদ্ধের কাছাকাছি মধ্যপ্রাচ্য
ইসমাইল হানিয়া হত্যার জেরে মধ্যপ্রাচ্য ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি’ সর্বাত্মক যুদ্ধের কাছাকাছি চলে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিষয়ক অধ্যাপক নাদের হাশেমি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct