আপনজন ডেস্ক: ভেনিজুয়েলার বিতর্কিত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিজয় দাবির বিরুদ্ধে কারাকাসের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের দিকে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। লাতিন আমেরিকার দেশে ভেনেজুয়েলার বিতর্কিত নির্বাচনে নিকোলাস মাদুরোর জয়ের দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দিকে যাচ্ছেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঝড় উঠেছে প্রতিবাদের। বিক্ষোভকারীদের দমাতে রাজধানী কারাকাসে প্রেসিডেন্ট ভবন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। এদিকে বিরোধী দলগুলোর দাবি, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নির্বাচনে জয় পেয়েছেন মাদুরো।
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ‘স্বৈরাচারীকে হটাও’ এবং ‘মিরাফ্লোরেসে সবাই’ এর মতো ক্যাপশনসহ ভিড়ের ছবি পোস্ট করেন। সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের তথ্যানুযায়ী, মাদুরো তার বিজয় দাবি করার পরদিনই ভেনিজুয়েলার রাজধানীতে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। বিরোধীরা মাদুরোর বিজয়কে প্রতারণাপূর্ণ বলে দাবি করেছে এবং তাদের প্রার্থী এডমুন্ডো গনজালেজ ৭৩.২% ভোটে স্পষ্টভাবে জিতেছেন বলে দাবি করছেন। নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে গনজালেজের পক্ষেই জয়প্রাপ্তি নির্দেশিত হয়েছিল। জানা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক সংখ্যক বিক্ষোভকারীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। বিক্ষুব্ধরা মাদুরোর পুনঃনির্বাচনকে প্রতারণাপূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছে। পশ্চিমা এবং লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশ এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি ভেনিজুয়েলার কর্তৃপক্ষকে পৃথক ভোটকেন্দ্র থেকে ভোটিং রেকর্ড প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছে। অনেকেই তাদের বাড়ি এবং রাস্তায় হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এক দল বৃষ্টিতে ভিজে ‘আফুয়ের’ (বিদায় হও) এবং ‘লিবেরট্যাড’ (স্বাধীনতা) স্লোগান দিয়েছে। ফুটেজে দেখা যায়, হাইওয়ে জুড়ে টায়ার জ্বলছে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায়, মোটরবাইকে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ছে। বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীকে সামরিক এবং পুলিশ জলকামানসহ প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া কিছু মাদুরো সমর্থক এবং প্রো-মাদুরো প্যারামিলিটারিদেরও জড়ো হতে দেখা গেছে। বিবিসি লা লুচা নামে একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এক বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কিছু মানুষের সাথে কথা বলে। পাওলা সারজালেজো (৪১) বলেন, ‘ভোটটি ছিল ভয়াবহ, প্রতারণা। আমরা ৭০% ভোটে জিতেছি, কিন্তু তারা আমাদের থেকে আবার নির্বাচনের ফলাফল চুরি করেছে। আমরা আমাদের যুবকদের জন্য, আমাদের দেশের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যৎ চাই। তার পিতা মিগুয়েল (৬৪) সম্মতি দিয়ে বলেন, তিনি (মাদুরো) নির্বাচন হেরে গেছেন। তার এখন সেখানে থাকার কোনো অধিকার নেই। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১১ বছর ধরে ভেনেজুয়েলার ক্ষমতায় আছেন নিকোলাস মাদুরো।
এই নির্বাচনকে মাদুরোর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ দেশটিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট ও মাদুরো সরকারের রাজনৈতিক দমনপীড়নে ক্ষুব্ধ জনগণ। এর পাশাপাশি আমেরিকান চাপ তো রয়েছেই।
তবে মাদুরো তার সমর্থকদের সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, যেভাবেই হোক নির্বাচনে জিতবেন তিনি। এতে ফলাফল কারচুপির বিষয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। দেশটিতে ভোট পর্যবেক্ষণে খুবই সীমিত সংখ্যক স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সুযোগ পেয়েছেন। জাতিসংঘের চারজন এবং একটি টেকনিক্যাল টিম পর্যবেক্ষণে ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষকদের উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের প্রধান।
নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করলেন মাদুরো, বিরোধীদের অন্য কথানিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করলেন মাদুরো, বিরোধীদের অন্য কথা
এদিকে ভোট গণনায় জালিয়াতির অভিযোগ এনে ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করার কথা জানিয়েছে মাদুরোর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এদমান্দো গঞ্জালেজ। এ ছাড়া অনেক নাগরিকের দাবি, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার সুযোগে নির্বাহী বিভাগের পাশাপাশি আইন ও বিচার বিভাগের ওপর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে মাদুরোর দল। সেই প্রভাব মাদুরো নির্বাচনেও কাজে লাগিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct