আপনজন ডেস্ক: অনেকেই আছেন কথা বলার সময় থুতু ছিটকায়। অফিস মিটিং বা বন্ধুদের সামনে তাড়াহুড়ো করে কিছু বলতে গেলেন, এমন সময় সামনে থাকা ব্যক্তির গায়ে থুতু ছিটকে পড়ল। আপনিও অপ্রস্তুত, আর তিনি হয়তো মনে মনে বিরক্তি বোধ করছেন। অন্যরা হয়তো আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করছেন। অনেকেই এমন পরিস্থিতিতে পড়েন। এক-আধদিন এমন হতে পারে। কিন্তু যখন তখন কথা বলার সময় যদি থুতু ছিটকে বেরোয়, তাহলে সচেতন হতে হবে।
কথা বলার সময় মুখ বেঁকে যাওয়া, মুখগহ্বরে জটিল রোগ অথবা বড় কোন অসুখ থেকে উঠলে এমন হতে পারে। কিন্তু কোন অসুখ ছাড়াই যদি এমন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে রোজকার যাপনে এমন কিছু ভুল হচ্ছে, যা এই সমস্যার কারণ। আমাদের মুখগহ্বরে তিন জোড়া লালা গ্রন্থি রয়েছে— ‘প্যারোটিড’, ‘সাবম্যান্ডিবুলার’ ও ‘সাবলিঙ্গুয়াল’।
তাছাড়া আরও অজস্র ছোট ছোট লালা গ্রন্থি রয়েছে। কথা বলার সময়ে, খাবার খাওয়ার সময়ে এই লালা গ্রন্থিগুলি থেকে লালা রস নিঃসরণ হয়। লালা মুখের ভিতরকে পিচ্ছিল ও আর্দ্র রাখে, খাবার গিলতে সাহায্য করে। লালা নিঃসরণের নির্দিষ্ট হার আছে। কিন্তু যদি বেশিমাত্রায় ক্ষরণ শুরু হয়, তখনই তা ছিটকে মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
এই সমস্যা হওয়ার অনেক কারণ আছে। অনেকেই আছে কথা বলার সময় জিভ জড়িয়ে যায়। সেক্ষেত্রে লালা ক্ষরণের হার বেড়ে যায়। যারা বড় অসুখ থেকে উঠছেন অথবা পাওয়ারফুল এমন ওষুধ খাচ্ছেন যা মুখের পেশীকে দুর্বল করে দেয়, তাদের এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।
খুব বেশি চিনি জাতীয় খাবার খেলেও, লালা নিঃসরণের হার বেড়ে যায়। তাই এমন খাবার এড়িয়ে চলুন, যাতে খুব বেশি চিনি দেওয়া আছে। প্যাকেটজাত পানীয়তেও চিনির মাত্রা বেশি। তাই সেসব খাওয়াও বন্ধ করতে হবে। খুব বেশি ঝাল খেলে বা রোজ বেশি মশলা দিয়ে রান্না খাবার খেলে লালা ক্ষরণের হার বেড়ে যেতে পারে। টক জাতীয় খাবার, আচার এসব বেশি খেলেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১. কথা বলার আগে ঢোক গিলে নিন। কথা বলার সময়ে খেয়াল রাখুন, মুখে বেশি লালা জমে যাচ্ছে কি না। তাহলে থুতু গিলে কথা বলুন।
২. বেশি তাড়াহুড়ো করে কথা বলবেন না। ধীরেসুস্থে কথা বলুন। দ্রুত কথা বললে, লালা নিঃসরণের হার বেড়ে যায়। মুখের পেশিগুলিও অনিয়ন্ত্রিত থাকে। ফলে তখন থুতু ছিটকে বেরোবেই।
৩. খুব বেশি চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার, ভাজাভুজি খাবেন না।
৪. থুতু বেরোনোর সমস্যা থাকলে, বাড়িতে কাছের মানুষজনের সামনে কথা বলে অভ্যাস করুন লালা নিঃসরণ আটকাতে। দেখুন কতটা ধীরে কথা বললে এই সমস্যা হবে না। প্রয়োজনে পানি খেয়ে নিন। মুখের ভিতর লবঙ্গ রেখেও চেষ্টা করতে পারেন।
৫. যদি দেখেন, এই সমস্যা দূর হচ্ছে না, কথা বলার সময়ে মুখের পেশি কাঁপছে অথবা ঠোঁট বেঁকে যাচ্ছে, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে। অনেক সময়ে এটি পারকিনসন্স রোগেরও পূর্বলক্ষণ হতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct