সজল মজুমদার, আপনজন: ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমার “ পায়ে পড়ি বাঘ মামা, করো নাতো রাগ মামা” গানটির কথা নিশ্চয়ই এখনো সকলের মনে আছে। দেশের জাতীয় পশু বাঘ। বাঘের নাম শুনলেই আমাদের মন যেমন করে উদ্যোগে আতঙ্কিত হয়, ঠিক তেমনি বর্তমানে এই পশুটির সংখ্যাও সারা বিশ্বে বিপদাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। পৃথিবীর প্রায় ১৩ টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব বর্তমানে আছে। Global Tiger Forum এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ অবধি পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা বর্তমানে ৫৫৭৪ টির মত । পাশাপাশি আমাদের দেশে অনেক অভয়ারণ্য, বনাঞ্চল রয়েছে। তথাপি দেশের ৫৪ টি বাঘ সংরক্ষণ অঞ্চল বর্তমান। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে প্রতিবছর ২৯ শে জুলাই বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস পালন করা হয়ে থাকে, ভারতের এই জাতীয় পশুটির বর্তমান পরিস্থিতি কিরূপ!!! বাঘেরা কেমন অবস্থায় রয়েছে!!!? এইসব বিষয় নিয়েই বিশদে কথা হচ্ছিল উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট বন্যপ্রাণবিদ, বর্তমানে কালিম্পং কলেজের অধ্যাপক ড:রাজা রাউথ মহাশয়ের সাথে, তিনি বিস্তারিত জানালেন, “ ২০১৮ সালের Ministry of Forest, Environment,and Climate change এর দেওয়া টাইগার সেন্সাস তথ্য অনুযায়ী ভারতে মোট ২৯৬৭ টি বাঘ বর্তমানে রয়েছে। প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের বক্সা বাঘ প্রকল্পে এখন বাঘের সংখ্যা ঠিক কত!!এটা বলা খুবই দুষ্কর। কারণ সাম্প্রতিক অতীতে বাঘকে সেভাবে এখানে দেখা যায়নি। ২০২১-২২ সালে সম্ভবত একটি বাঘকে ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে জয়ন্তী রিভার বেডে, কোথাও কোথাও Pugmark চোখে পড়েছে। মেরে কেটে বক্সা টাইগার রিজার্ভ বর্তমানে ৫ এর বেশী বাঘ নেই বললেই চলে। ২০১৮ সালের সরকারি রিপোর্টে এখানে বাঘের সংখ্যা শূন্য ধরা হয়েছে। অন্যদিকে UNO এর অন্যতম শাখা IUCN বা International Union for the Conservation of Nature and Natural Resources প্রতিবছর যে Red data Book এবং Green Data Book প্রকাশ করে থাকে, সেখানে বাঘকে এখনো বিপন্ন বা তীব্রভাবে বিপন্ন বা Critically Endangered প্রাণী হিসাবে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ১৯৭৩ সালে ভারতে প্রথম বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প ঘোষিত হয়েছিল। তারপর থেকে ভারত সরকারের National Tiger Conservation Authority বা NTCA এর অধীনে টাইগার রিজার্ভ গুলির দেখাশোনা করা হয়ে থাকে, সাথে সাথে NTCA এর মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো জাতীয় পশু বাঘকে রক্ষা করা। বাঘ যেসব অঞ্চলে রয়েছে সেসব অঞ্চল সংলগ্ন ফরেস্ট ভিলেজ বা কোর এরিয়ার বাসিন্দাদের প্রাণ হানির হাত থেকে রক্ষার জন্য উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের জয়ন্তীতেও এটি রূপায়িত হয়েছে।” অন্যদিকে জাতীয় পশু বাঘের বর্তমান হাল হকিকত নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল ম্যানগ্রোভম্যান উমাশঙ্কর মন্ডল এর সাথে। তিনি সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। সুন্দরবনের অর্থ সামাজিক এবং পরিবেশগত পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্টই তিনি ওয়াকিবহাল। তিনি জানালেন, “ সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অবস্থা এখন যথেষ্ট ভালো। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী এখানে বর্তমানে ১০০ টির মত বাঘ রয়েছে। তবে আমার নিজের ধারণা অনুযায়ী সাম্প্রতিক সময়ে ১২০-১২৫ টির মত পূর্ণবয়স্ক বাঘ এবং বাঘের বাচ্চা রয়েছে। তথাপি কেন্দ্রীয় সরকারের NTCA সংস্থার তত্ত্বাবধানে বাঘের দেখভালের জন্য এখানে নানা প্রকল্প বিভিন্ন সময়ে রূপায়িত হচ্ছে। যা আগামীর বাঘ সংরক্ষণের জন্য যথেষ্ট ইতিবাচক পদক্ষেপ।” পাশাপাশি ‘ প্রজেক্ট টাইগার’ নামক প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতীয় বাঘেদের ‘ বাসস্থান সংরক্ষণ’ এবং ‘ চোরা শিকার’ বন্ধের জন্য নানারকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবশেষে বলা যায়, দেশের জাতীয় পশু ‘ বাঘ ‘ যেন আগামী কয়েক প্রজন্মেও স্বমহিমায় বিরাজমান থাকে, সেই নীতিতেই সরকারি এবং বেসরকারি তরফ থেকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct