রাজু আনসারী, সামশেরগঞ্জ, আপনজন: গঙ্গার জলস্তর বাড়তেই ফের গঙ্গা ভাঙন শুরু মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জে। সোমবার সকাল থেকে শামসেরগঞ্জের নতুন শিবপুর ভাঙ্গা লাইন এলাকায় গঙ্গা ভাঙনের আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়। সেই আতঙ্কের মধ্যে শিশুরা যখন স্কুলে যেতে ব্যস্ত, তখন বিপদ ঘনিয়ে আসে। ভাঙন শুরুর কথা চাউর হতেই গঙ্গা তীরে ভিড় জমান গ্রামবাসীরা। চোখের সামনেই একে একে গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে যায় ভাঙনের শিকার হওয়া প্রায় ১০ টি বাড়ি। তলিয়ে যায় কৃষি জমি থেকে শুরু করে শৌচালয় এবং বাড়ির ফাঁকা অংশ। গঙ্গা ভাঙনের আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে দেখা যায় গ্রামবাসীদের। যেকোনো মুহূর্তে প্রায় আরো ৫০টি বাড়ি তলিয়ে যেতে পারেই বলে অনুমান স্থানীয় বাসিন্দাদের। শুধু তাই নয় তলিয়ে যেতে পারে নতুন শিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। এদিকে গঙ্গা ভাঙনের খবর পেয়ে ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকায় সকালেই ছুটে যান সামশেরগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য রফিকুল আলম, চাচন্ড গ্রাম পঞ্চায়েত প্রতিনিধি গোলাপ হোসেন সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। গোলাপ হোসেন সংবাদমাধ্যম কে জানান মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একশো কোটি টাকার টেন্ডার করেছিল কিন্তু ভোটের জন্য কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজটা আর হয়নি। প্রাথমিকভাবে ভাঙন কবলিত মানুষদের স্থানীয় শিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকার ব্যবস্থা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় চাচন্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে। শিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ওকিল আহমেদ বলেন যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে হয়তো কোনও দিন তাদের এই বিদ্যালয় ও ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় আছেন তারা। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যেই বিদ্যালয়ে স্থানীয় মানুষের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে তাই ছাত্র ছাত্রীরা কেউ বিদ্যালয়ে আসেনি। প্রতি বছর একই ভাবে গঙ্গার ভাঙনের কারণে কত মানুষকে ঘর ছাড়া হতে হচ্ছে এবং এই সমস্যার কোনও সঠিক সমাধানের উপায় এখনো পর্যন্ত কার্যকরী না হওয়ায় স্থানীয় মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাস বাক্যে বা সাময়িক থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নয় সামশেরগঞ্জ এর মানুষ এই ভাঙন রোধের সমস্যার পুরোপুরি সমাধান চাইছে যাতে মানুষকে আর ঘর ছাড়া না হতে হয়। এ বিষয়ে সামশেরগঞ্জের বিডিও সুজিত চন্দ্র লোধ সংবাদমাধ্যমকে জানান, যখন আমাদের কাছে এই গঙ্গা ভাঙনের খবর আসে সেই সময় থেকে একটি টিম পাঠানো হয়েছে। যাঁরা গৃহহীন তাঁদের থাকার, খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকলকে কম্বল দেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদের জেলা প্রশাসক রাজশ্রী মিত্র বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গোটা বিষয়টির উপর নজর রাখতে। প্রয়োজনে ভাঙন রোধে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হবে।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে মুর্শিদাবাদে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সামশেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙন রোধে বরাদ্দ ৫০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ১০০ কোটি করার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে, দিন কয়েক আগে মালদা দক্ষিণের সাংসদ ঈশা খান চৌধুরি ভাঙ্গনের সমস্যার কথা লোকসভায় তুলে ধরেন। তিনি লোকসভায় বলেন, প্রতি বছর এই গঙ্গার ভাঙ্গনের কারণে এক লক্ষ মানুষ ঘর ছাড়া হয় এক প্রকার সর্বহারা হয় তারা। ভাঙ্গনে বেশ কয়েকটি স্কুল, বাড়ি, মন্দির মসজিদ সবই তলিয়ে গিয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তিনি অনুরোধ করেন, রাজ্য সরকারের সাথে আলোচনা করে গঙ্গা ভাঙন রোধে অবিলম্বে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct