বাইজিদ মণ্ডল, ডায়মন্ড হারবার, আপনজন: পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৬৪ শতাংশ মুসলমান পরিবার দারিদ্ররেখার নীচে অবস্থান করছে। তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ বাংলার ৪৭ শতাংশ মুসলমান মানুষ হয় খেতমজুর,বা দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। ভাল চাকরির অভাব, কাজের অভাব, ঠিকা শ্রমিক হয়ে দিন গুজরান করার ফলে মুসলমান সমাজে দারিদ্রের এত প্রাবল্য। এই মানুষগুলি যেখানে দিনরাত দারিদ্রের সঙ্গে লড়ছেন, তাদের কথা ভেবে পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু দের পাশে থাকতে বিশিষ্টজন সমাবেশ ও আলোচনা সভা অধ্যাপক জাহান আলি পুরকাইতের আহ্বানে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তগ্রাম দারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসায়।
উপস্থিত বিশিষ্টজনরা বলেন, স্বাধীনতার প্রায় ছিয়াত্তর বছর পেরিয়ে এসেও তাই অমুসলিমদের চোখে মুসলমানদের পরিচিতি মূলত অশিক্ষিত ও হতদরিদ্র একটি সম্প্রদায় রূপেই। সাচার কমিটির রিপোর্ট দেখলেই বোঝা যায় এই বিশেষ জনগোষ্ঠীর কী করুণ হাল। তার সঙ্গে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো রয়েছে রাজ্যে ও দেশে ধর্মীয় বিদ্বেষ। আর এই দ্বিমুখী কারণেই এদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশের ওপরে মুসলমান হলেও কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্যদের মাত্র ৬ শতাংশের মতো মুসলমান। কিন্তু বিচারাধীন বন্দিদের ২০ শতাংশের মতো মুসলমান, আর সাজাপ্রাপ্ত জেলবন্দি কয়েদিদের প্রায় ১৬ শতাংশই মুসলমান। অথচ যাদের হাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা তথা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার অধিকার, সেই পুলিশের মাত্র ৮ শতাংশের মতো মুসলমান। এই পরিসংখ্যা দেখে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে আইনসভা ও পুলিশ-প্রশাসনে জনসংখ্যার তুলনায় কম প্রতিনিধি থাকার কারণে মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব হওয়া অসম্ভব নয়। অথচ, যে-সমস্ত ব্লকে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি মুসলমান মানুষের বাস সেখানে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে মুসলমান এলাকায়। রাজ্যের মুসলমানরা পিছিয়ে রয়েছেন বিভিন্ন সূচকে। একটি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থায় পিছিয়ে-পড়া শ্রেণির মানুষের উন্নয়ন করা সরকারের দায়িত্ব। তা নিয়ে সদর্থক আলোচনা না করে যাঁরা তোষণ দেখতে পাচ্ছেন, তাঁরা তথ্যনির্ভর আলোচনা নয়, ভরসা রাখছেন। আবারও কিছু বিখ্যাত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা নগণ্য। মনে রাখতে হবে, রাজ্যের জনসংখ্যার অনুপাতে ২৭ শতাংশের বেশি মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। অথচ, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত কম। যতটুকু প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে, তা ওবিসি সংরক্ষণের আওতায় মুসলমানদের পিছিয়ে পড়া অংশকে সংরক্ষণ দেওয়ার জন্য হয়েছে বলে মনে হয়। উপরের তথ্য প্রমাণ করছে যে, শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলমান সমাজের মানুষেরা পিছিয়ে রয়েছেন। পাশাপাশি তারা এও জানান শুধু মাত্র সংখ্যালঘু মুসলিম পরিবার ভাবনা নয় আদিবাসী ও অন্যান্য নিপীড়িত মানুষের পাশে থাকার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস।
এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাস আন্দোলনের প্রাক্তন ছাত্রনেতা শফিকুর রহমান, মাওলানা মোজাফফর হোসেন, হাসিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল কাদের, মফাক্কেরুল ইসলাম, মাওলানা আবুল কালাম, , মাওলানা আহসান উল বারী, মাওলানা আব্দুর রউফ, এ কে এম গোলাম মোর্তজা, বাকিবিল্লাহ, আইনজীবী আনিসুর রহমান, নূরনবী সরদার, মাওলানা এফ এম খালিদ, নজরুল ইসলাম লস্কর, আজিজুল হক প্রমুখ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct